বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য
আগরতলা, ২৩ এপ্রিল : উত্তর জেলার লঙ্গাই ভ্যালি উপত্যকা আজ বনজ সম্পদ লুন্ঠনের অন্যতম কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চল এখন ধীরে ধীরে রিক্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের হুঁশিয়ারি, বনদপ্তরের হুঙ্কার—সবই যেন এখন কথার কথা। বনদপ্তরের একাংশ অসাধু কর্মীর ছত্রছায়ায় অব্যাহত রয়েছে দুর্লভ ও মূল্যবান গাছ পাচার।
পানিসাগর মহকুমার লঙ্গাই নদীর পাড় ঘেঁষা এই উপত্যকায় খেদাছড়া, দামছড়া, ঘুমসারায়পাড়া এলাকায় গভীর অরণ্য থেকে নিয়মিতভাবে সেগুন ও গামাই জাতীয় মূল্যবান কাঠ কেটে পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ, এই পাচারে জড়িত একাংশ কাঠ ব্যবসায়ী ও বনদপ্তরের অসাধু কর্মীরা। সরকারি রিজার্ভ ফরেস্ট ও খাস জমিতে থাকা গাছে টেম্পারিং করে সেগুলি “ডোমেস্টিক ব্যবহারের” নামে বহির্বিতরণ করা হচ্ছে।
উপত্যকার মানুষ বলছেন, সাধারণ আদিবাসী পরিবার যদি নিজেদের ঘরের কাজের জন্য মাত্র এক-দুই ফুট কাঠ সংগ্রহ করেন, তবে তাঁদের গুনতে হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ। অথচ অন্যদিকে, লরি ভর্তি কাঠ প্রকাশ্যে পাচার হলেও বনদপ্তরের কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বরং অভিযোগ উঠছে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে পাচারকারীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করছেন দপ্তরের কিছু কর্মী।
এই অঞ্চলের জনগণ বনকর্মীদের জুলুমে অতিষ্ঠ। অভিযোগ রয়েছে, জ্বালানি কাঠ জঙ্গল থেকে তুললেও দিতে হচ্ছে টাকা। বনজ সম্পদ রক্ষার নামে নিরীহ মানুষের উপর দমন-পীড়ন আর প্রকৃত দোষীদের ছাড়, এই দুইয়ের মিশ্রণে ভেঙে পড়েছে দপ্তরের উপর আস্থা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা এতটাই যে, সঠিক তদন্ত চালানো হলে বহু বড় চক্র ফাঁস হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

