বিলোনিয়া, ১৩ এপ্রিল: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের ঘটনা নিয়ে ফের একবার তীব্র প্রশ্ন উঠছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কার্যকারিতা নিয়ে। বিলোনিয়া মহকুমার আমজাদ নগর সীমান্ত দিয়ে গতকাল সন্ধ্যা রাতে তারকাঁটা বেড়া ডিঙিয়ে একসঙ্গে ৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করে বলে জানা গেছে। বর্তমানে তারা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গোপন খবরের ভিত্তিতে বিলোনিয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আইপিএস রিষভের নেতৃত্বে এবং বিলোনিয়া থানার ওসি শিবু রঞ্জন দে এর প্রচেষ্টায় বিলোনিয়া থানার পুলিশ মনুরমুখ তবলা চৌমুহনি এলাকার নাকা চেকিং পয়েন্টে একটি সাদা ইকো মারুতি গাড়িকে থামিয়ে চেকিং শুরু করলে সাত জন বাংলাদেশী একসাথে উদ্ধার হয়। সাথে সাথে গাড়ির চালক রাজু বিশ্বাস সহ সাতজন বাংলাদেশীকে বিলোনিয়া থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। সাতজনই স্বীকার করে তাদের বাড়ি বাংলাদেশ সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তারা আমজাদ নগর তার কাটার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। ভারতের দিক থেকে একজন টাকার বিনিময় তাদেরকে এদেশে আসতে সাহায্য করে এবং গাড়িটি ভাড়া করে তাদেরকে আগরতলা পাঠিয়ে দিতে সহযোগিতা করে। তারা আরো জানায় বাংলাদেশে তারা নিরপত্তাহীনতায় রয়েছে। তাই তারা তাদের প্রাণ বাঁচাতে তারা ভারতবর্ষে আত্মগোপন করতে চাইছে কিছুদিনের জন্য। তারা সকলেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সদস্য।
এই বিষয়ে বিলোনিয়া থানার ওসি শিবু রঞ্জন দের জানান, তাদের কাছ থেকে ৭ টি এন্ড্রয়েড মোবাইল, একটি কিপ্যাড মোবাইল, ভারতীয় ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭৮০ টাকা এবং বাংলাদেশী এক লক্ষ ১,৯৩৫ টাকা উদ্ধার করা হয়।
তারা জানায়, মুসলিম হয়েও তারা বাংলাদেশে নিরাপদ নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে শান্তি নেই। চারিদিকে অশান্তি, খুন ডাকাতি, রাহাজানি, লুট্ত রাজ দিনকে দিন বেড়েই চলছে।
অন্যদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশীরা ইসলামিক জামাতি এর দল এবং সন্ত্রাসবাদীদের সাথে সরাসরি যোগাসাজোস রয়েছে। এদেশে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য তারা অবৈধভাবে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে রাজ্যে ওয়াকফ ইস্যু নিয়ে যে চরম অশান্তি ও নৈরাজ্য চলছে তাতে সহযোগিতা করার জন্য তারা এ রাজ্যে এসে পৌঁছেছে। বিভিন্ন জায়গা দিয়ে এই ধরনের অনেক ইসলামিক সংগঠনের লোকজন প্রবেশ করেছে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য।
বিলোনিয়া থানার পুলিশ এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ৭ বাংলাদেশী নাগরিক রবিন হোসেন (২৯), মোহাম্মদ রফি (২৫), আমজাদ হোসেন(২৭), শহীদুর জ্জামান(২৮), ফযজল(২৪),রেহান মোল্লা (২১),এবং গিয়াস উদ্দিন(৩৫) এর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী মামলা গ্রহণ করেছে।
অতএব, আজ ১৩/০৪/২০২৫ তারিখে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের (মোট ০৮ জন) মহামান্য সিজেএম বেলোনিয়া আদালতে পেশ করা হয়। মহামান্য সিজেএম বেলোনিয়া আদালত ১২ দিনের জেল হেফাজতের আদেশ দেন। অর্থাৎ পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে ২৪/০৪/২০২৫। সদয় অবগতির জন্য জানানো হল।
ওসি জানিয়েছেন, আজ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিলোনিয়া আদালতে পেশ করা হয়। আদালত তাদের ১২ দিনের জেল হেফাজতের আদেশ দেন।
এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শুধু আমজাদ নগর নয়, মতাই, ঋষ্যমুখ, রাজনগর, রাঙ্গামুড়া ও রাধানগর সহ একাধিক সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে লাগাতার অনুপ্রবেশ ও পাচার বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ঘটনা ঘটলেও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী কার্যত শীতঘুমে আচ্ছন্ন।
সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ও নজরদারির দাবি বহুদিনের। কিন্তু তারকাঁটা বেড়া থাকা সত্ত্বেও অনুপ্রবেশকারীরা কিভাবে এত সহজে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করছে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে গুরুতর প্রশ্ন। নিরাপত্তা নিয়ে স্থানীয়রা মনে করছেন, সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা না হলে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধ করা সম্ভব নয়।