ওয়াকফ বিল বাতিল ও দুর্নীতি সহ বেশ কিছু বিষয়ের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম এল)-এর হুঁশিয়ারি

আগরতলা, ১৩ এপ্রিল: আজ আগরতলা প্রেস ক্লাবে সিপিআই(এম এল) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক পার্থ কর্মকার সহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। মূলত রান্নার গ্যাস, পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, ওয়াকফ আইন (সংশোধনী)-২০২৫, শ্রমিকস্বার্থ, কৃষি সংকট, এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি সহ একাধিক বিষয়ে বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদক।

পার্থ কর্মকার বলেন, ওয়াকফ আইন (সংশোধনী)-২০২৫ মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। এই আইনের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা সংবিধানের ২৬, ২৯, ৩০ ও ১৪ ধারা লঙ্ঘন করে। তিনি বলেন, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার শুধু মুসলিমদের নয়, সামগ্রিকভাবে সংবিধান ও প্রজাতন্ত্রের আত্মাকেই আঘাত করেছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে তুলে ধরা হয়, রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ মানুষের জীবনে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। উজ্জ্বলা প্রকল্পে সিলিন্ডার এখন ৫৫০ টাকা এবং সাধারণ ভোক্তাদের ক্ষেত্রে ৮৫৩ টাকা। পেট্রোল ও ডিজেলের দামও প্রতি লিটারে ২ টাকা বেড়েছে। অথচ শ্রমিকদের কাজ নেই, মজুরি কম, সরকারি শূন্যপদে নিয়োগ নেই। এই পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধি জনগণের উপর অন্যায্য বোঝা চাপাচ্ছে।

বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দলের বিধায়কদের উপর অসংসদীয় মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন পার্থ কর্মকার। তিনি পরিষদীয় মন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান, অন্যথায় বরখাস্ত করার দাবি তোলেন। এছাড়া তিনি বলেন, গ্রামোন্নয়ন, পূর্ত, পুলিশ, ও জলসম্পদ দপ্তরে দুর্নীতি চরমে পৌঁছেছে। ভূমি মাফিয়ার দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।

সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রপ্তানিকৃত পণ্যের উপর ২৬% শুল্ক চাপিয়ে দেশের অর্থনীতি, ঔষধ, কৃষি ও শিল্পখাতকে বিপন্ন করেছে। অথচ মোদী সরকার এই আক্রমণের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ না করে আমেরিকার প্রতি নতিস্বীকার করেছে। রান্নার গ্যাস থেকে যুদ্ধবিমান – সবকিছু উচ্চমূল্যে আমদানি করে জনগণের কাঁধে বোঝা চাপাচ্ছে।

সিপিআই(এম এল) ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। পার্থ কর্মকার বলেন, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু সহ বহু রাজ্যে এই দিনটিকে সরকারি ছুটির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরাতেও এই দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করতে হবে বলে দাবি করা হয়।

সম্মেলনে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও জাতীয় ফেডারেশনের যৌথ মঞ্চের ডাকে ২০ মে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট সফল করতে রাজ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে সিপিআই(এম এল)। শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষার্থী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহ সব স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার ও মিছিলের আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি জাতীয় যৌথ মঞ্চের শরিক আইএনটিইউসি-কে রাজ্যে সামিল হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সিপিআই(এম এল) রাজ্য কমিটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, তারা সংবিধান, গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের অধিকারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করবে এবং ফ্যাসিবাদী, কর্পোরেটপন্থী রাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন জারি রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *