আগরতলা, ২৮ মার্চ: অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়ের পেশ করা বাজেট জনমুখী বাজেট। এই বাজেটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ বিকশিত ভারত ২০৪৭’ ভিশন প্রতিফলিত হয়েছে। মহিলা, যুব সমাজ, দিব্যাঙ্গ, জনজাতি, তপশিলী, কর্মচারী সহ সকল অংশের মানুষের কল্যাণে এই বাজেট করা হয়েছে। এই বাজেট প্রবৃদ্ধি, কল্যাণ ও আর্থিক দায়বদ্ধতাকে প্রাধান্য দিয়েছে।
শুক্রবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে ২০২৫- ২৬ অর্থ বছরে পেশ করা বাজেট নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
এদিন দীর্ঘ আলোচনায় বাজেটের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা। তিনি বলেন, আমজনতার সার্বিক কল্যাণকে ভাবনাচিন্তায় রেখে এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। এজন্য অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায় ও তাঁর গোটা টিমকে ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে অর্থনীতির ক্ষেত্রে ১১তম স্থান থেকে এখন ৫ম স্থানে পৌঁছেছে ভারত। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন গত ১লা ফেব্রুয়ারি সংসদে অভূতপূর্ব জনমুখী বাজেট পেশ করেছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে এই সভা থেকে ধন্যবাদ জানাই। এই বাজেট বিশ্বের দরবারে ভারতকে অর্থনীতি ক্ষেত্রে আরো শক্তিশালী করবে। অথচ আমাদের রাজ্যে বিরোধীরা নানা নেতিবাচক কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নের উপর ভরসা রেখে রাজ্যের মানুষ দ্বিতীয়বারের মতো বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বাজেট সম্পর্কে জানতে হবে। যেকোন বাজেট যেকোন দেশের বা রাজ্যের একটা বছরের জন্য সুনির্দিষ্ট আর্থিক পরিকল্পনা, আনুমানিক রাজস্ব আদায় ও আয় ব্যয়ের একটা সুস্পষ্ট রূপরেখা। বাজেটে নির্দেশিত হয় নাগরিকের কল্যাণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন – শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক কল্যাণে ব্যয় বরাদ্দ সমূহ। যেটা এবারের রাজ্য বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে। এবারের বাজেটে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে। এবারের বাজেটে ৬টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে – সম্পদ বণ্টন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কল্যাণ ও উন্নয়ন, আর্থিক দ্বায়বদ্ধতা, রাজস্ব পরিকল্পনা এবং স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব আদায়ের পরিমান ছিল ১,৯১৫ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে ৪,৫১৪ কোটি টাকা। এটা আমাদের আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যকে প্রমাণ করে। আমরা আমাদের রাজ্যকে ঋণের বোঝায় আবদ্ধ করতে চাই না। এই বছরে আমরা জিএসডিপির ৩ শতাংশের অনুমোদিত সীমার মধ্যে ঋণ রাখছি। ২০২৫-২৬ সালের জন্য আমরা বাজার ঋণ হিসেবে মাত্র ১২২৫ কোটি টাকার বিধান রেখেছি। রাজ্য সরকার এক্সটার্নাল এডেড প্রকল্পের আওতায় সর্বাধিক সংখ্যক প্রকল্প নেওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে আমাদের ১০টি চলমান প্রকল্প রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার জনজাতিদের উন্নয়নের জন্য খুবই আন্তরিক এবং সংবেদনশীল। জনজাতিদের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা শুধু কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবেও উন্নয়ন করে দেখাই। এজন্য সারা দেশের কাছ থেকে আমাদের সাফল্যের স্বীকৃতি আসছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই রাজ্যের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন যেমন ঘটছে তেমনি পরিকাঠামোগত উন্নয়নও জনগণের চোখে পড়ছে। শুধু বাজেটই নয়, তার বাইরেও আমাদের ডাবল ইঞ্জিন সরকার রাজ্যের সকল অংশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, মহিলাদের সুরক্ষা ও তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে এই সরকার খুবই আন্তরিক। মহিলাদের আর্থ সামাজিক উন্নতি ও সুরক্ষার প্রশ্নে রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক পদক্ষেপের ফলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিগত ১০ বছরে মহিলাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও বেশি। আমাদের লক্ষ্য সমাজের সকলস্তরের নাগরিকদের সার্বিক উন্নতি বিধান। সব- কা সাথ, সব কা বিকাশের মূল শর্তই হচ্ছে একেবারে প্রান্তিক এলাকায় বসবাসকারী সবস্তরের মানুষদের উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসা। এতদিন এ রাজ্য যা উপেক্ষিত ছিল।
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত রাজ্য বাজেটে চিফ মিনিস্টার অ্যাসিস্টেন্ট ফর ডটার/সন অফ আর্মি/সিআরপিএফ পার্সনাল নামে নতুন একটি প্রকল্প চালু করা করার প্রস্তাব রয়েছে। এই প্রকল্পে ত্রিপুরার স্থায়ী বাসিন্দা সেনাবাহিনী/সিএপিএফ (এআর, বিএসএফ, সিআইএসএফ, সিআরপিএফ, আইটিবিপি, এনএসজি, এসএসবি) কর্মীদের অবিবাহিত এবং নির্ভরশীল কন্যা/পুত্রদের (১৮ বছরের বেশি বয়সী) সামাজিক পেনশন প্রদান করা হবে। বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন ঘটানো রাজ্য সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। গত ৭ বছরে রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে, যা রাজ্যের মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতার নিরিখেই উপলব্ধি করতে পারছেন। স্বাস্থ্য দপ্তরের নানাবিধ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের মধ্যে পরিকাঠামো উন্নয়নের অধীনে অনেকগুলি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাকাবাড়ি নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। আজ ত্রিপুরার গ্রামেগঞ্জেও পাকাবাড়িতে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। শুধু বিল্ডিং নয় স্বাস্থ্য দপ্তর মানব সম্পদ বৃদ্ধির জন্যও চিকিৎসক ও প্যারামেডিকেল কর্মী নিয়োগ করে যাচ্ছে।
বাজেট বিষয়ে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বিগত বছরগুলির বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজ্যের বাজেট বরাদ্দ এই সরকারের সময়কালে প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৫,৯৫৬.৫৬ কোটি টাকা। বর্তমান ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে রাজ্যের প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে ৩২,৪২৩ কোটি টাকা হয়েছে, যা শতাংশের নিরিখে ১০৩.২১ শতাংশ। আর এই বৃদ্ধি থেকে এটাই প্রমানিত হয় বর্তমান রাজ্য সরকারের বাজেট প্রকৃত অর্থে জনকল্যাণমুখী এবং রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক সাহসী পদক্ষেপ। তাই আমি গত ২১ মার্চ বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করেছেন তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি এবং এটি সর্বসম্মতক্রমে এই সভায় গৃহীত হবে বলে দৃঢ় আশা ব্যক্ত করছি। এর পাশাপাশি বিরোধীদের আনা সকল ছাঁটাই প্রস্তাবের বিরোধীতা করছি।