(Update) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ৩২৪২৩.৪৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ, বৃদ্ধি ৪৬১৮.৭৭ কোটি টাকা, ৪২৯.৫৬ কোটি টাকা ঘাটতি

আগরতলা, ২১ মার্চ: ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ৩২৪২৩.৪৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়। বাজেটে ৪২৯.৫৬ কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হয়েছে। গত বছরের বাজেটের তুলনায় এবছর ৪৬১৮.৭৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজেট পেশ করার পর এদিন বিধানসভায় প্রেস কর্নারে সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে নতুন করের প্রস্তাব করা হয় নি। বরং, ১৯টি নতুন প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং নারী ক্ষমতায়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। সাথে তিনি যোগ করেন, রাজ্য বর্তমানে ২১৮৭৮.২৬ কোটি টাকা ঋণের বোঝা বইছে। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে বামফ্রন্ট সরকারের অন্তিম বাজেটের সময়ে রাজ্য ১২৯০৩ কোটি টাকা ঋণে জর্জরিত ছিল।

এদিন অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে রাজ্যের নিজস্ব কর ৪০১০ কোটি টাকা রাজস্ব খাতে মিলবে বলে অনুমান করা হয়েছে। তেমনি, রাজ্যের নিজস্ব কর-বহির্ভূত রাজস্ব ৫০৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এবছরের বাজেটে অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা করার জন্য মূলধন ব্যয়ের উপর আরও জোর দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, এবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে মূলধন ব্যয় ৭,৯০৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যা ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেটের তুলনায় ১৯.১৪% বেশি। তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ১৯টি নতুন প্রকল্প ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার।

এদিন তিনি দাবি করেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটে কোনো নতুন করের প্রস্তাব করা হয় নি। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটের তুলনায় এবছর ৪৬১৮.৭৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪-২৫ সালে ২৭৮০৪.৬৭ কোটি টাকা বাজেট ছিল। ২০২৪-২৫ সালের সংশোধিত বাজেটে বৃদ্ধি পেয়ে ৩০২৯৬.৫০ কোটি টাকা হয়েছিল। এবছর বাজেটে ৪২৯.৫৬ কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হয়েছে।

এদিন তিনি বলেন, বাজেটে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য ১৮৮৫.৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা ২০২৪-২৫ সালের বাজেটের তুলনায় ৯.৪৯% বেশি।বাজেটে শিক্ষন খাতের জন্য ৬১৬৬.১৯ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা যা ২০২৪-২৫ সালের বাজেটের তুলনায় ১১.৯৪% বেশি। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য ১৯৪৮.৬৯ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ সালের বাজেটের তুলনায় ১২.৮৯% বেশি।

এদিন তিনি আরও বলেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসলের প্রচারের জন্য, একটি নতুন প্রকল্প ‘মুখ্যমন্ত্রী শস্য শ্যামলা যোজনা চালু করা হয়েছে। এর জন্য ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিটি সাব-ডিভিশনে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ‘বিজ্ঞান বিষয় এবং ইংরেজি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে সদর মহকুমায় ৩ (তিন) টি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে । এর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

তাঁর কথায়, আমবাসা, কাঁকড়াবন, করবুক- এ নতুন ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করা হবে। তাছাড়া, বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির স্বার্থে আগ্রহীদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য আগরতলা,উদয়পুর এবং আমবাসায়- এ ত্রিপুরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ১.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এদিন তিনি আরও বলেন, কৈলাসহর এবং উদয়পুর- এ ২টি বহুমুখী ক্রীড়া ইন্ডোর হল নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া, গন্ডাছড়ায় এবং কাঁকড়াবনে- এ সিন্থেটিক ফুটবল টার্ফ নির্মাণ করা হবে। মেধাবী উপজাতি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উপজাতি উন্নয়ন মিশনের অধীনে সুপার-১০০ প্রোগ্রাম চালু করা হবে যাতে তারা সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যেমন নিট, ইউপিএসসি ইত্যাদিতে সাফল্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে। এর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ৩.১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

তাছাড়া, তফসিলি জাতি পরিবারের আয় বৃদ্ধির জন্য, হাঁস-মুরগি পালন প্রকল্প চালু কর হবে। তাছাড়া, মাছ, শুঁটকি এবং শাকসবজি ব্যবসায় কর্মরত তফসিলি জাতি শ্রেণীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। রাবার প্ল্যান্টেশনের সাথে জড়িত অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর ব্যক্তিদের ল্যাটেক্স সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম এবং সরঞ্জাম ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং প্রশিক্ষণের পরে প্রশিক্ষণার্থীদের সরঞ্জাম সরবরা করা হবে।

এদিন তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়ন এবং সুরক্ষার জন্য ১.২০ কোটি টাকা ব্যয় করতে চলেছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ গ্রহণের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী জন বিকাশ কার্যক্রম এর অধীনে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ব্লকগুলির আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের প্রি এবং পোস্ট মেট্রিক স্টাইপেন্ড প্রদানের জন্য ৯.৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দরিদ্র আরএম পরিবারের জীবিকা উন্নীত করার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের নতুন প্রকল্প চালু করা হবে। এর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে প্রাথমিকভাবে ১.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এদিন তিনি আরও বলেন, নতুন প্রকল্প ‘মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ যোজনার প্রবর্তন। এর আওতায়, রাজ্য সরকার অন্ত্যোদয় পরিবারের একজন কন্যা সন্তানের বিয়ের খরচ বহন করবে। রাজ্য সরকার ৫০,০০০ টাকা ব্যয় করবে। মহকুমা পর্যায়ে গণবিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। এই উদ্দেশ্যে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্যের অন্যান্য স্থান থেকে আসা মানুষ যারা বিভিন্ন কারণে আটকে পড়েন, তারা যাতে আগরতলা শহরে রাতে থাকার ব্যবস্থা পান এবং রাতে ভর্তুকিযুক্ত খাবার পান তা নিশ্চিত করার জন্য, আগরতলায় ভারত মাতা ক্যান্টিন কাম নাইট শেল্টার’ স্থাপন করা হবে। এর জন্য ২ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।

তাঁর কতায়, মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প’ নামে নতুন প্রকল্প চালু করা হচ্ছে যার আওতায় মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ৫,০০০ টাকা পেনশন দেওয়া হবে। যারা ইতিমধ্যেই প্রতিবন্ধী পেনশন হিসেবে ২০০০ টাকা পাচ্ছেন, তারা প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৩,০০০ টাকা পাবেন। এর জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র’ স্থাপন করা হচ্ছে। এই কেন্দ্রের জন্য প্রাথমিকভাবে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে।

তাছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা’ নামে নতুন প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায়, ত্রিপুরার স্থায়ী বাসিন্দা অন্ত্যোদয় পরিবারের নবজাতক কন্যা সন্তানের জন্য ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করা হবে, যা মেয়েটির ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর নগদ করতে পারবে। ২০২৫-২৬ সালের জন্য এর জন্য ১৫ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।কম্পিউটার-ভিত্তিক অনলাইন পরীক্ষার জন্য হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা গ্রাউন্ডে কম্পিউটার-ভিত্তিক পরীক্ষার কেন্দ্র’ স্থাপন, যাতে প্রার্থীদের অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য রাজ্যের বাইরে যেতে না হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *