মণিপুর : আপাত শান্ত হিংসাজর্জর কাংপোকপি জেলা, টান টান উত্তেজনা, চলছে ‘নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান’-এর বিরুদ্ধে কুকি-জো আহূত অনির্দিষ্টকালের বনধ

ইমফল, ৯ মাৰ্চ (হি.স.) : মণিপুরের কাংপোকপি জেলার পরিস্থিতি আপাত শান্ত হলেও বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। গতকাল শনিবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংগঠিত সংঘর্ষের বিরুদ্ধে আজ রবিবার কুকি-জো গোষ্ঠীগুলির ডাকা অনির্দিষ্টকালের বনধ চলছে। বনধ-এর জেরে জেলার স্বাভাবিক জীবন প্রভাবিত হয়েছে।

জেলা পুলিশের জনৈক উর্ধ্বতন আধিকারিক জানিয়েছেন, কাংপোকপি জেলার গামঘিফাই এবং জেলার অন্যান্য অংশে ইমফল-ডিমাপুর সংযোগকারী ২ নম্বর জাতীয় সড়কে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সংঘর্ষস্থল এবং স্পর্শকাতর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যান এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে টহল দিচ্ছে সেনা ও আধা সামরিক বাহিনী।

আধিকারিকটি জানান, গতকাল (শনিবার) কাংপোকপি জেলার বিভিন্ন স্থানে কুকি বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে এক বিক্ষোভকারী নিহত এবং মহিলা ও পুলিশ সহ ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, গাড়িগুলির উইন্ডশিল্ড ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে।

মণিপুর পুলিশের আধিকারিক জানিয়েছেন, কুকি বিক্ষোভকারীদের হামলায় ২৭ জন নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুঁড়ে মারছিল, রাস্তায় বিশাল বিশাল পাথর ফেলে, টায়ারে আগুন ধরিয়ে এবং গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করেছিল।

তিনি জানান, মূলত গত ১ মাৰ্চ নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী অমিত শাহের পৌরোহিত্যে মণিপুরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে ৮ মার্চ (গতকাল শনিবার) থেকে মণিপুরে নাগরিকদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্ৰহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কৰ্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰী অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পর রাজ্য জুড়ে ব্যাপক সতর্কতামূলক অভিযান চালায় সেনা ও আধাসেনার যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী।

গতকাল শেষ-বিকালে কাংপোকপি জেলার গামগিফাই এলাকায় ইমফল-কাংপোকপি-সেনাপতি রুটে চলাচলকারী মণিপুর রাজ্য পরিবহণ (এমএসটি)-এর একটি যাত্রীবাহী বাসে পাথর ছুঁড়তে থাকে এক দল দুষ্কৃতী। সে থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। আচমকা দলে দলে কুকি গোষ্ঠীর মানুষ রাজপথে নেমে আসলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান অভিযানের বিরোধিতা করে রাজপথে নেমে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লিপ্ত হয় কুকি-জো গোষ্ঠীর দল। বিক্ষোভকারী কুকিরা গুলতি দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। কেবল গুলতি বা পাথর ছোঁড়াই নয়, বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। যার পাল্টা জবাব দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। প্ৰথমে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে নিরাপত্তা বাহিনী। তাতে কোনও কাজ না হওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীকে শূন্যে গুলি ছুঁড়তে হয়েছে।

এদিকে ‘ইন্ডিজেনাস ট্ৰাইবালস ফোরাম’ (আইটিএলএফ) এবং কুকি-জো কাউন্সিল (কেজেডসি) আজ (রবিবার) থেকে আহূত অনির্দিষ্টকালের বনধ-এ স্বাভাবিক জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আইটিএলএফ-এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘ভারত সরকার কর্তৃক কুকি-জো অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে মেইতইদের অবাধ চলাচল করতে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার বিরোধিতা করে কাংপোকপিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু হয়। এতে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর সংঘাতিক বলপ্রয়োগ করেছে। তাই কুকি-জো অধ্যুষিত সব এলাকায় আহূত অনির্দিষ্টকালের বনধ ডাকা হয়েছে।’

‘কেন্দ্রীয় সরকারের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে গতকাল যারা প্রতিবাদ করতে বেরিয়েছিলেন তাদের সকলকে আমরা সম্মান করি,’ বলা হয়েছে আইটিএলএফ-এর বিবৃতিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *