আগামীদিনে রাজ্যে আরও ৮,০০০ চাকরি প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৯ মার্চ: ৩৫ বছরের দীর্ঘ অপশাসনে ত্রিপুরাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠনের পরেই রাজ্যের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। মানুষ কংগ্রেস, সিপিএমকে আর কোন অবস্থায় গ্রহণ করবে না। মানুষ আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন বলে ত্রিপুরায় আবার বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগামীদিনে আরো ৮,০০০ চাকরি প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় দফার সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে রবিবার আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে আয়োজিত ঐতিহাসিক জন সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সমাবেশে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা।

সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এই সমাবেশ থেকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে, যার মার্গদর্শনে ত্রিপুরা সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমি ধন্যবাদ জানাই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে, যিনি সময়ে সময়ে আমাদের দিক নির্দেশিকা দিয়ে থাকেন। দীর্ঘ ৩৫ বছরের কমিউনিস্ট অপশাসন থেকে ২০১৮তে প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদে আমরা ত্রিপুরাবাসী মুক্তিলাভ করি। খুন, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক হিংসা, উগ্রপন্থীদের সৃষ্টি করার কারিগর এই সিপিএমকে সাধারণ মানুষ দেখেছে। কংগ্রেসকেও মানুষ দেখেছে। কংগ্রেসও তাদের থেকে ধার নিয়ে একই ধাঁচে শাসন ব্যবস্থা চালিয়েছে। চাকরি কেলেঙ্কারি, স্বজন পোষণ, দুর্নীতি, স্কুল কলেজে গুণ্ডাগিরি, অফিস কাছাড়িতে আন্দোলনের নামে গুণ্ডাগিরি চালিয়েছে তারা। ওরা আদালত পর্যন্ত মানে না, বিচার মানে না। কিছুদিন আগে আদালতের নির্দেশে ওদের তিন নেতাকে জেলে যেতে হয়েছে। কিন্তু তারা বলছে যে তারা কোন দোষ করেনি। এরআগেও ওদের এক এমপি থানা থেকে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল। আজ তারা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু তাদের সময়ে কোথায় ছিল গণতন্ত্র? দুই সাংবাদিককে তাদের সময়ে হত্যা করা হয়েছিল। যার বিচার এখনো চলছে। আমি নিশ্চিত আগামীদিনে যারা এই খুন সংঘটিত করেছে সেই বিচার অবশ্যই হবে। সিবিআই তদন্তের কাজ করছে। আমি আশা করি খুব শীঘ্রই খুনের সঙ্গে যুক্তদের বিচার হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, তৎকালীন সময়ে খুন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ সহ কোন অপরাধের বিচার হয়নি। তাদের সময়ে ৮০’র দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল। সেসময় মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করতো না ওরা। গোয়েবলসীয় কায়দায় এখনো তারা মিথ্যার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আর ওদের পার্টি গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যা বলার একটা কারখানা। গত ৭ বছরে ত্রিপুরার বাজেট প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২৪ – ২৫ অর্থ বছরে বাজেটে ৭,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পরিকাঠামো উন্নয়নে রাখা হয়েছে। পরিকাঠামো যদি উন্নত না হয় তবে কোন অবস্থায় বাইরে থেকেও বিনিয়োগকারীরা আসবেন না। আমাদের বর্তমানে মাথাপিছু গড় আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বেড়েছে জিএসডিপি। বিরোধীদের যাবতীয় চক্রান্তকে অতিক্রম করে রাজ্যে এখন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এনসিআরবি’র রিপোর্ট অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় নিচের দিক থেকে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও গৃহমন্ত্রী বারবার বলছেন যে উত্তর পূর্বাঞ্চল যদি উন্নত না হয় তবে ভারতও উন্নত হবে না। সেই দিশায় এখন পর্যন্ত ১২টির মতো চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এখন উত্তর পূর্বাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিছুদিন আগে এনএলএফটি ও এটিটিএফ বৈরীরা চুক্তি মোতাবেক অস্ত্র সমর্পণ করেছে। তাই এখন আমরা বলতে পারি সন্ত্রাসবাদ মুক্ত ত্রিপুরা। প্রধানমন্ত্রীর হিরা মডেলের কারণে জাতীয় সড়ক, ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ের প্রভূত উন্নতি হয়েছে রাজ্যে। সবদিক দিয়ে এখন ত্রিপুরা উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে চলছে। আমাদের এখানে প্রায় ৮৩৯ কিলোমিটার জাতীয় সড়কের কাজ চলছে। মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের পরে তৃতীয় শক্তিশালী ইন্টারনেট পরিষেবা পেয়েছে ত্রিপুরা। মহিলাদের সুরক্ষা, ক্ষমতায়ন ও স্বনির্ভর করে তোলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। মহিলাদের জন্য ৩৩% সংরক্ষণ করেছে সরকার। সরকারি স্টল বণ্টনে মহিলাদের জন্য রিজার্ভেশন রাখা হয়েছে। মহিলাদের নামে জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রেও রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে। ডিগ্রি কলেজে পাঠরত ছাত্রীদের সমস্ত রকমের ফি মুকুব করা হয়েছে। মহিলাদের সম্মানের কথা ভেবে পিঙ্ক টয়লেট চালু করা হয়েছে।

সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, যুবদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরায় ২০১৮ থেকে এখন পর্যন্ত ১৬,৪৫১ জনকে সরকারি চাকরি প্রদান করা হয়েছে। ৫,৭৭১ জনকে আউটসোর্সিংয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ২,৯৩৬ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের সরকার স্বচ্ছ পদ্ধতিতে যাবতীয় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। আগামী দিনগুলিতে আরও ৮,০০০ চাকরি প্রদানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডাঃ সাহা বলেন, ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও সিপিএম, কংগ্রেস জোট বেঁধেছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা আবারও সরকার গঠন করেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিকশিত ভারতের স্বপ্নকে সফলভাবে রূপায়ণ করতে চাই।

ভারতীয় জনতা পার্টির ত্রিপুরা প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, সাংসদ সম্বিত পাত্রা, সাংসদ কৃতি দেবী দেববর্মন, ত্রিপুরা প্রদেশ প্রভারী ড. রাজদীপ রায়, সংগঠন মহামন্ত্রী রবীন্দ্র রাজু সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য, বিধায়ক, জনপ্রতিনিধি এবং দলের কার্যকর্তাগণ।

এদিন স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে আয়োজিত সুবিশাল জনসভায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডার উপস্থিতিতে রাজ্যের দ্বিতীয় বিজেপি সরকারের ২ বছরের জনকল্যাণকারী কাজের খতিয়ান সম্বলিত পুস্তিকার শুভ উন্মোচন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *