আগরতলা, ১ মার্চ: উন্নয়নই আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। আমাদের সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের জন্য কাজ করা। মানুষের জন্য সেই কাজটা নিরন্তরভাবে করে যাচ্ছে সরকার। আগামীতে এমবিবি এয়ারপোর্ট থেকে অন্যান্য দেশে আন্তর্জাতিক উড়ান চালু করার জন্য দিল্লির কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।শনিবার বিকেলে আগরতলায় সদর মহকুমা শাসক কার্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রয়োজনের স্বার্থে আমাদের বদল আনতে হয়। এজন্য গত বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৭,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোন বিল্ডিং তৈরি করার পর আয়ুষ্কাল থাকে ৫০ বছরের মতো। সেই জায়গায় এটা ৭৫ বছর হয়েছে। তাই নতুন করে তৈরির সময় এসেছে। প্রথমে বলা হয়েছে এটিকে জি +২ করা হবে। পরবর্তী সময়ে জি +৫ করা হবে। আমি বলেছি উপরে আরো বাড়ানো যায়। কারণ এখন আমাদের আইন পাশ হয়েছে। সেজন্য এই প্রস্তাবিত ভবনটিকে জি +৭ করার পরামর্শ দিই। যাতে অফিস পরিসর আরো বিস্তৃত হয় এবং কাজের সুবিধা হয়। আপাতত ১৭ কোটি টাকা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে। সময় ধার্য করা হয়েছে ২২ মাস। তবে আমি বলবো দেড় বছরের মধ্যে যাতে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়। নজরদারি ঠিকঠাক থাকলে দেড় থেকে দু বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যাবে। আমি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের এবিষয়ে নজর রাখতে বলবো।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এসডিএম অফিসের সঙ্গে একটা নস্টালজিক সম্পর্ক জড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে এখানে কাজ করা কর্মচারীদের জন্য। এরমধ্যে অনেকে আবার অবসরে চলে গিয়েছেন। ত্রিপুরা সরকার সব জায়গায় পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য অবশ্যই স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গেও কথা বলা দরকার। এক্ষেত্রে কোন জায়গায় কি কি হবে সেটা আগে থেকেই পরিকল্পনা করা দরকার। আজকাল অনেক কিছুই সুন্দর ডিজাইনে করা যায়। রাজ্য সরকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে অফিস সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে। বিভিন্ন অফিসের নতুন ভবন নির্মাণ, স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, বাজার শেড নির্মাণ সবেতেই কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ৭টি জায়গায় সিন্থেটিক ফুটবল মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। আরো কয়েকটি জায়গায় কাজ চলছে। কৃষক বন্ধু কেন্দ্র নির্মাণ, হোস্টেল নির্মাণ, স্কুলের পাকাবাড়ি নির্মাণ, হাসপাতালের বাউন্ডারি নির্মাণ ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় অত্যাধুনিক মোটরস্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ সকালে বিশালগড়ের পূর্ব লক্ষ্মীবিলে ALIMCO অক্সিলিয়ারি প্রোডাকশন ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ভূমিপুজন করা হয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃত্রিম অঙ্গ প্রস্তুতকারক সেন্টার খুলছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে প্রথম কেন্দ্র হচ্ছে এটি। উন্নয়নই আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন উন্নয়ন ছাড়া কিছু হবে না। সাধারণ মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হলেই কোন সমস্যা হবে না। ডেন্টাল কলেজের কাজও শুরু হয়ে যাচ্ছে। বিশ্রামগঞ্জে ডোনার মন্ত্রক থেকে ১৯০ কোটি টাকার অধিক বরাদ্দে মাদক মুক্তি কেন্দ্রের কাজও শুরু হচ্ছে। এজিএমসিতে ৯টি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এজন্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন। ত্রিপুরায় প্রায় ৮৩৯ কিলোমিটার জাতীয় সড়কের কাজ চলছে। এরমধ্যে অর্ধেকের অধিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরো চারটির জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি কমলপুর থেকে আমবাসা হয়ে শান্তিরবাজার যাবে। এনিয়েও আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। রাস্তা আমাদের রাস্তা দেখায়। ভবিষ্যতে আমরা কোন দিশায় যাবো সেই রাস্তা দেখায়। আর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে এখন অনেক মানুষ যারা দূরে পোস্টিং পেয়েছেন তারা সকালে গিয়ে বিকেলে চলে আসেন। আমাদের দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। রেল পরিষেবা অনেক উন্নত হয়েছে। এখন ত্রিপুরা থেকে বিভিন্ন রাজ্যে দ্রুতগামী ট্রেন পরিষেবা চালু রয়েছে। আগামীতে বন্দে ভারত ট্রেন চালু হয়ে যাবে। আমি কিছুদিন আগে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসেছি। তিনি বন্দে ভারত দেবেন। এর পাশাপাশি ইন্টার সিটিও দেবেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মার্গদর্শন দেখাচ্ছেন। আমাদের এমবিবি এয়ারপোর্ট উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম সুন্দর এয়ারপোর্ট। এর পরিকাঠামোও অনেক ভালো। এখন অনেক বিমান চলাচল করছে। আগামীদিনে আরো বাড়বে। এর পাশাপাশি আগামীতে এটি আন্তর্জাতিক মানের হবে। প্রথমে কথা ছিল বাংলাদেশের চিটাগাঙে আন্তর্জাতিক পরিষেবা চালু হবে। কিন্তু সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা হচ্ছে না। এছাড়াও অন্যান্য দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা যাতে করা যায় সেজন্য দিল্লিতে গিয়ে দাবি করে এসেছি।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এজিএমসিতে মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার ইউনিট হচ্ছে। সেজন্য ২১২ কোটি টাকার আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। অথচ বিরোধীরা নাকি উন্নয়ন দেখতে পান না। উন্নয়নের দিক থেকে আমরা অন্য কোন অংশের সাথে পিছিয়ে নেই। আমাদের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের জন্য কাজ করা। আর সেই কাজটা আমরা নিরন্তরভাবে করে যাচ্ছি। কিছুদিন আগে জিরানিয়ায় ৬টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত উচ্চতম জি + ১৪ মাল্টি স্টোরেড অফিস বিল্ডিং গুর্খাবস্তি এলাকায় করা হচ্ছে, সেটা করার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ওই এলাকার সমস্ত অফিসগুলিকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসা। এর কাজের গুণমান যাতে ভালো হয় সেটা অবশ্য নজর রাখতে হবে। কারণ এটা আমাদের সকলের সম্পত্তি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প একতা মল ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে বাধারঘাট বিধানসভা এলাকায়।
এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ড. বিশাল কুমার, অতিরিক্ত জেলাশাসক সজল বিশ্বাস ও মেঘা জৈন, সদর মহকুমা শাসক মানিক লাল দাস সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ।