আগরতলা, ৮ ফেব্রুয়ারি: রাজ্যে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষর করেছেন ৮৭ জন উদ্যোগপতি। বিভিন্ন শিল্প খাতে এই বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকা। ত্রিপুরা রাজ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিশেষভাবে আকর্ষিত করছে বিনিয়োগকারীদের।শনিবার আগরতলার একটি বেসরকারি হোটেলে আয়োজিত ‘ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা’ বিজনেস কনক্লেভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে দেশ ও বিদেশ থেকে রাজ্যে বিনিয়োগ আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এখন বলা যায় এই উদ্যোগ সফল হয়েছে। প্রায় ৮৭ জন বিনিয়োগকারী রাজ্য সরকারের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষর করেছেন। এই বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকা। মানুষ চায় যেখানেই তারা বিনিয়োগ করবেন সেখানে যাতে শান্তি সম্প্রীতি বজায় থাকে। আমরা রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলার পরিবেশ বজায় রেখেছি। আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার দিক থেকে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। তাই মানুষ এখানে আসছেন। তারা এখানে নিরাপদ অনুভব করছেন। তিনি বলেন, আমাদের অনেকগুলি ইনসেনটিভ স্কিম রয়েছে। যেমন বিদ্যুত ক্ষেত্রে সাবসিডি পাবেন তারা। ক্যাপিটেল ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রেও সাবসিডি রয়েছে। আমাদের অনেকগুলি পলিসিও রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদাই উত্তর পূর্বাঞ্চলকে অষ্ঠলক্ষ্মী বলে অভিহিত করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজ্যের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে রাবার। রাবার উৎপাদনে ত্রিপুরা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। রাজ্যে রাবার ভিত্তিক শিল্প স্থাপনে রাজ্য সরকার রাবার পার্ক তৈরী করা সহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ করছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে রাবার ভিত্তিক শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাঁশ রাজ্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। বাঁশভিত্তিক শিল্প স্থাপনেও রাজ্য সরকার বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। রাজ্যে বাঁশ চাষের উন্নয়নে ব্যাম্বু মিশনও চালু করা হয়েছে। রাজ্যের অন্যতম ফল আনারসকে ভিত্তি করে রাজ্যে ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনেও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই রাজ্য সরকার রাজ্যের ইকো-ট্যুরিজম, ধর্মীয় ট্যুরিজমকে উন্নয়ন করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের প্রসারে হোটেল স্থাপনেও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। রাজো আগর শিল্পের প্রসারে আগর পলিসি চালু করা হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে নন-ফরেস্টের ২ হাজার হেক্টর এলাকায় ৫ মিলিয়ন আগর গাছ রয়েছে। দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীরাও রাজ্যে আগর শিল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, শিল্প ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা বিজনেস কনক্লেভ রাজ্য সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত সবাইকে হার্দিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি উত্তর পূর্বকে অষ্টলক্ষী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। উত্তর পূর্বকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি চালু করেছেন তিনি। আর উত্তর পূর্ব ভারতেরই একটি রাজ্য ত্রিপুরা। যার উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ সীমান্তে রয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে পূর্বে রয়েছে আসাম ও মিজোরাম। এটা দেশের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। জনসংখ্যার দিক দিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। অভূতপূর্ব ভৌগোলিক অবস্থানের মধ্যে রয়েছে ত্রিপুরা। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা। এর জনসংখ্যা আনুমানিক ৪১.৬৫ লক্ষ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের অফুরন্ত সম্ভার রয়েছে। যেটা দিয়ে বিদ্যুত ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হচ্ছে। ত্রিপুরার অর্থনীতি মূলত কৃষি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে। রাজ্যে ‘লক্ষ্য ২০৪৭’ নামে একটি ভিশন চালু করা হয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে ত্রিপুরা একটি পারফর্মার স্টেট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এখানে মাথাপিছু আয় পৌঁছেছে ১,৭৭,৭২৩ টাকায়। যেটা ২০১২ অর্থবর্ষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ত্রিপুরায় জিএসডিপি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮.৯%। জিএসডিপি এর ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ইনডেক্সের ক্ষেত্রে ২০২৩ – ২৪ এ ত্রিপুরা পারফর্মার স্টেট থেকে ফ্রন্ট রানার স্টেট হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরাকে হীরা মডেল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর ফলে জাতীয় সড়কগুলি উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম (এমবিবি) বিমানবন্দর উত্তর পূর্বের অন্যতম সুন্দর বিমানবন্দর এবং এটি দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিসেবে পরিণত হয়েছে। আগামীতে সাব্রুমে মৈত্রী সেতু চালু হয়ে গেলে এটি দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে। ইতিমধ্যে সেখানে স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী এতে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা তিনটি আধুনিক ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) গড়ে তুলেছি। এখানে শিল্প স্থাপনের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে রাবার, বাঁশ, আগর, প্রাকৃতিক গ্যাস, কৃষি-ভিত্তিক শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পর্যটন, হস্তশিল্প ও কারু শিল্প ক্ষেত্রে প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, টিআইডিসির চেয়ারম্যান নবাদল বণিক, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, ডিজি ইন্টিলিজেন্স অনুরাগ, পিসিসিএফ আর কে শামল, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি, আসামের শিল্প দপ্তরের সচিব ইন্দিরা কলিতা সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।