আগরতলা, ৩০ জানুয়ারি : রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় আরও একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালে শীঘ্রই লিভার সহ অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হবে। চেন্নাইয়ের মোহন ফাউন্ডেশন রাজ্যের জিবিপি হাসপাতালে লিভার সহ অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার জন্য কাজ করবে। এর ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার আন্তরিক প্রচেষ্টায় রাজ্যে অঙ্গদান ও অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সফল হতে চলেছে। আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. শংকর চক্রবর্তী একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, ত্রিপুরার স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিশেষ করে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার প্রক্রিয়া আরো বেশি উন্নত করার জন্য চেন্নাই-এর মোহন ফাউন্ডেশন মাল্টি অর্গান হারভেস্টিং নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠানটি কাজ করবে। সারা দেশে এমনকি পৃথিবীর উন্নত দেশেও এই প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে কাজ করছে। গতকাল মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহার পৌরহিত্যে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট জানান, ভারতে বহুদিন আগে থেকেই অঙ্গদান ও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ চলে আসছে। আমাদের রাজ্যেও এখন পর্যন্ত সাফল্যের সাথে দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে গত ৮ জুলাই এবং দ্বিতীয়টি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে গত ১১ নভেম্বর। এই অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও অঙ্গদানের কাজকে কিভাবে আরো উন্নত করা যায় তার জন্যই মোহন ফাউন্ডন্ডেশন এর সাথে যৌথ উদ্যোগে রাজ্যে অঙ্গদান এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া হতে চলেছে। তিনি জানান, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। আমাদের রাজ্যে অনেকগুলি ট্রমা সেন্টার আছে। জিবিপি হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে ২০২৩ সালে মোট ৯৮ জন মারা গেছেন। ২০২৪ সালে মোট ১১১ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ভালো অংশের ব্রেন ডেথ হয়েছিল।
এদের অঙ্গগুলি নিয়ে অন্যকে বাঁচানো যায়, ব্রেন ডেথ এর পর মৃত ব্যক্তির অঙ্গ নিয়ে সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। তবে এক্ষেত্রে দুটি পরিবারের কাছেই উপযুক্ত সমর্থন থাকা প্রয়োজন। ডা. চক্রবর্তী আরো বলেন রক্তদানের মতোই দেহ দান ও অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ত্রিপুরা যাতে এগিয়ে যায় তার জন্য মানুষের সহযোগিতা দরকার। ব্রেন ডেথের পর মৃত ব্যক্তির হার্ট ও কিছু অঙ্গ সচল থাকে যেগুলোকে প্রতিস্থাপন করা যায়। ব্রেন ডেথ পর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে কিছু আইনি পরামর্শ ও পারিবারিক প্রেরণা একান্ত প্রয়োজন।
সাংবাদিক সম্মেলনে এইমস-এর নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রফেসর (ডা.) দীপক গুপ্তা বলেন, ব্রেন ডেথের পর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি ব্রেন ডেথ কমিটি গঠন করতে হয় এবং চারজন চিকিৎসক দ্বারা ব্রেন ডেথ এর শংসাপত্র প্রদান করতে হয়। কোন ব্যক্তির ব্রেন ডেথ এরপর হার্টবিট চলতে থাকলে, ওই ব্যক্তির হার্ট দান করা যায়। মোহন ফাউন্ডেশন-এর এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর পল্লবী কুমার বলেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও অঙ্গদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো সাথে সাথে প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে দিয়ে ফ্যামিলি মোটিভেশন করতে হবে। এই ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও যুব সম্প্রদায় এবং লায়ন্স ক্লাব, রোটারি ক্লাবকেও এই বিষয়ে সচেতনতায় মুখ্য ভূমিকা নিতে হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর (ডা.) অনুপ কুমার সাহা বলেন, অঙ্গদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আমরা যাতে খুবই দ্রুত এগিয়ে যেতে পারি তার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে ও সচেতন করতে হবে। এই ব্যাপারে তিনি মোহন ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান। তাদের সহায়তায় আমাদের রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর (ডা.) অনুপ কুমার সাহা, নয়াদিল্লিস্থিত এইমস-এর নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রফেসর (ডা.) দীপক গুপ্তা, মোহন ফাউন্ডেশন-এর এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর পল্লবী কুমার, ডেপুটি মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ও জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডা. কনক চৌধুরী, ডেপুটি মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মনিরুল ইসলাম, ডেপুটি মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. অভিজিৎ সরকার, ডেপুটি ডাইরেক্টর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গিডিয়ান মলসম, ডেপুটি মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. বিকাশ দেববর্মা সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ।