গোটা দেশে বাল্যবিবাহে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা : ধলাই জেলাশাসক

আগরতলা, ১০ জানুয়ারি : ভারতে বাল্যবিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।  ত্রিপুরা রাজ্য বাল্যবিবাহের প্রবণতায় তৃতীয়স্থানে রয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুযায়ী, ত্রিপুরায়  ৪০.১% বিয়েতে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদেরকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন ধলাই জেলার জেলা শাসক সাজু বাহিদ।

জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার শিশু নির্দিষ্ট আইন কার্যকর ও বাস্তবায়নের উপর একদিনের কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে  উপস্থিত ছিলেন ধলাই জেলার জেলাশাসক সাজু বাহিদ। বক্তব্য রাখতে গিয়ে ধলাই জেলার জেলাশাসক বলেন, ত্রিপুরায় বাল্যবিবাহের সমস্যা এখনও মারাত্মক, এবং তিনি দক্ষিণ ত্রিপুরায় তাঁর কর্মকালীন অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “গত এক বছর ধরে, আমি ধলাই জেলায় বাল্যবিবাহ মোকাবিলায় কাজ করছি। তবে, দক্ষিণ ত্রিপুরায় যা সফলভাবে করেছি, এখানে তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে আমি কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি”। 

তিনি জানান, সেখানে ২১০টি বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে সক্ষম ছিলেন তিনি। আজ অবধি প্রায় ৫৪০ বাল্যবিবাহ সেখানে বন্ধ করা হয়েছে।

এনএফএইচএস ৫.০ রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জেলাশাসক  জানান, ত্রিপুরায় ৪০.১% বাল্যবিবাহের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে, যা দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান। বিহারের ৪০.৮% এবং পশ্চিমবঙ্গের ৪১.৬%-এর পরই ত্রিপুরার স্থান। জাতীয় গড় ২৩.৩%-এর তুলনায় এটি অনেক বেশি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরার হার সবচেয়ে বেশি,  উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যে বাল্যবিবাহের হার যথাক্রমে – আসাম ৩১.৮%, মিজোরাম ৮%, মণিপুর ১৬%, নাগাল্যান্ড ৫.৬%, সিকিম ১০.৮%, এবং মেঘালয় ১৬.৯%।”

ধলাই জেলাশাসক আরো বলেন,  ত্রিপুরায় বাল্যবিবাহের সমাজিক সাধারণীকরণ উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন ‘বালিকা মঞ্চ’ সামাজিক মোবাইল গ্রুপে ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ের গর্ভবতী হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। ত্রিপুরায় ১২ এবং ১৩ বছর বয়সী মেয়েদের বিবাহ অস্বাভাবিকভাবে সাধারণ হয়ে উঠেছে। এমনকি শহরাঞ্চলেও এটি ঘটছে, দক্ষিণ ত্রিপুরাতেও এই ঘটনাগুলি লক্ষ্য করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি কার্যকরী পদক্ষেপের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।  আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে সব ধরনের সামাজিক ব্যাধির সঙ্গে মোকাবেলা করা সম্ভব বলে দাবি তাঁর।

তিনি কেরালার পরিবর্তনশীল উদাহরণ তুলে ধরেন, যেটি এক সময় গুরুতর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছিল, কিন্তু আজকে তা একটি মডেল রাজ্য হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, “স্বামী বিবেকানন্দ এক সময় কেরালাকে ‘ পাগলেরঘর’ বলেছিলেন, কিন্তু আজ তা প্রগতির প্রতীক। এটি প্রমাণ করে যে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামাজিক সংস্কার সম্ভব।”

বাল্যবিবাহ রোধে সমাজে প্রত্যেক শ্রেণীর জনগণকে এগিয়ে এসে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান করেন জেলাশাসক সাজু বাহিদ। এছাড়াও  ছাড়াও ত্রিপুরা জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. যোগেশ প্রতাপ সিং, মহিলা ও শিশু অধিকার কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক এবং কেন্দ্র পরিচালক দেবাশ্রী দেবনাথ সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।