নয়াদিল্লি/ আগরতলা, ২৯ ডিসেম্বর : কেন্দ্রীয় ভোক্তা বিষয়ক, খাদ্য ও গণবন্টন এবং নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী দুদিনের ত্রিপুরা সফরে এসে (২৮ – ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪) বিবিধ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাঁর এই সফর ফলপ্রসূ হয়েছে।
রাজ্য সফরের প্রথম দিন ২৮সে ডিসেম্বর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী ভারতীয় খাদ্য নিগমের (এফসিআই) কার্যালয় এবং রাজ্য সরকারের খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়, বিশেষত খাদ্যশস্য মজুত ও বন্টনের দিকগুলো পর্যালোচনা করেন। এদিনই তিনি রাজ্য সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ডঃ মানিক সাহার উপস্থিতিতে এক পর্যালোচনা বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন । উপস্থিত ছিলেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিভিন্ন মন্ত্রক ও দপ্তরের আধিকারিকরা। এই বৈঠকে রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির কার্যকারিতা ও রূপায়ণ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী যোশী এফসিআই, সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউসিং কর্পোরেশন (সিডব্লিউসি) এবং প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনা এবং পিএম কুসুমের মতো এম এন আর ই প্রকল্পসমূহ রূপায়ণ নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। এই বৈঠকগুলিতে রাজ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগুলির রূপায়ণ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা এবং সমাধানগুলি চিহ্নিত করার উপরও আলোচনা হয়।
এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী যোশী আগরতলায় এফসিআই-এর একটি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের এক প্রস্তাবে নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছেন। বৈঠকে আরো ঠিক হয়েছে যে, এই প্রস্তাবিত এফসিআই আঞ্চলিক কার্যালয়ের জন্য রাজ্য সরকার জমি চিহ্নিত করে দেবে করবে।
আজ ২৯ তারিখ সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী যোশী উদয়পুরের মাতাবাড়িতে মা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির দর্শন করেন এবং তারপর গোমতী জেলার মাতাবাড়ির অন্তর্গত চন্দ্রপুর কলোনী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীজির ‘মন কি বাত “অনুষ্ঠানটি শোনেন।
এদিনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ত্রিপুরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উন্নয়ন সংস্থা (টিআরইডিএ) -র উদ্যোগে ও কেন্দ্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাস্তবায়িত একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্প পরিদর্শন করতে চড়িলামের বড়কুবাড়ি গ্রাম পরিদর্শন করেন এবং এমএনআরই প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নও পর্যালোচনা করেন। এই এলাকায় এম. এন. আর. ই-র কাজকর্ম পর্যালোচনার সময় মন্ত্রী বলেন, পিএম-কুসুম প্রকল্পের (কম্পোনেন্ট বি) এর আওতায় ৫৪ একর জমিতে ২৭ টি সৌর বিদ্যুৎ পাম্প এবং এম. এন. আর. ই প্রকল্পের আওতায় এল. ই. ডি ভিত্তিক ৩৫ টি সৌর বিদ্যুৎ চালিত স্ট্রিট লাইটিং এর ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোগগুলির সফল বাস্তবায়নেরর ফলে কৃষকরা দুই ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন, এবং কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী যোশী বলেছেন যে, ভারত সরকার সম্প্রতি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে খাদ্য শস্য সংরক্ষণের জায়গা বাড়ানোর জন্য বেসরকারী উদ্যোগ গ্যারান্টি (পি. ই. জি) নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, এফসিআই দুই বছরের মধ্যে ৭০,০০০ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ক্ষমতার মজুত ভান্ডার নির্মাণ করে ত্রিপুরায় এর মজুত ক্ষমতা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছে। তিনি বলেন, আজ ভারত প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় ৮১ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জনসংখ্যার দ্বিগুণ। এই প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী রাজ্য চিহ্নিত সুবিধাভোগীদের বিনামূল্যে চাল, গম এবং মোটা শস্য সরবরাহ করা হচ্ছে। মোদী সরকার এই বিনামূল্যে রেশন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৮ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
বিগত পাঁচ বছরে ত্রিপুরা রাজ্যে ৩৬০ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের চাল ক্রয় করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৯৪ হাজার কৃষক উপকৃত হয়েছেন।
সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা, ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইসিডিএস) এবং পিএম পোষণ সহ সমস্ত সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পের আওতায় আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি১২-এর মতো প্রয়োজনীয় মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাদ্যশস্যের সার্বজনীন সরবরাহ করার সময় ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। প্রথম বছরে ত্রিপুরায় বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন পুষ্টিকর চাল সংগ্রহ/বিতরণ করা হয়েছে।
শ্রী যোশী বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে সারা দেশে ৩৬টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ (ও. এন. ও. আর. সি) কর্মসূচি রূপায়ণ করেছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় ও. এন. ও. আর. সি-র অধীনে মোট স্থানান্তরযোগ্যতা সম্পন্ন লেনদেনের পরিমাণ হল ১৮.৭৪ লক্ষ এবং ১০০ শতাংশ রেশন কার্ড আধারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এবং সমস্ত ন্যায্য মূল্যের দোকানে. পি.ও.এস মেশিন রয়েছে, এরফলে কারচুপি এড়ানো যাচ্ছে।
দেশের ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভোক্তা বিষয়ক দপ্তর ভোক্তা কমিশনকে শক্তিশালী করার প্রকল্প রূপায়ণ করছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্য সরকারগুলির প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। এই প্রকল্পে ত্রিপুরা সহায়তা দেওয়া হয়েছে ৩.৬৫ কোটি টাকা। এছাড়া মন্ত্রী বলেন, পণ্যমূল্যের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, সরকার মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিলের আওতায় পেঁয়াজের জন্য বাফার মজুত করা বজায় রেখেছে। তাছাড়া, পরিবহন খরচ কমাতে ও দক্ষতার সাথে পরিবহন করার জন্য, এই প্রথমবারের মতো নাসিক থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গুয়াহাটি সহ প্রধান গন্তব্যস্থানগুলোতে রেলপথে পেঁয়াজ পরিবহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রক রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে অধিকার সম্পর্কে ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য অনুদান প্রদান করে, যার অধীনে রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সহায়তা প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে, ২০২৩-২৪-এ ত্রিপুরাকে ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশের মোট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ২১৪ গিগাওয়াট-এ পৌঁছে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। জাতীয় সবুজ হাইড্রোজেন পরিযোজনা, পিএম-কুসুম, পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনা এবং সৌর বিদ্যুতের জন্য পিএলআই প্রকল্পের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে এগুচ্ছে। মন্ত্রী যোশী প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর যোজনা ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ত্রিপুরায় গার্হস্থ্য গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের খরচ ২০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারের জন্য প্রতি ইউনিটে ৫ টাকা। এম. এন. আর. ই-তে ভর্তুকি এবং ৭ শতাংশ হারে ছাড়যুক্ত ঋণের মাধ্যমে গ্রাহকরা অবিলম্বে অর্থ সঞ্চয় শুরু করতে পারেন। ত্রিপুরা ডিসকম-এর জন্য বিদ্যুৎ ক্রয়ের খরচ প্রতি ইউনিটে ৫ টাকা। কারণ বেশিরভাগ বিদ্যুৎ আসে গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে। সৌরশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হলে এই উচ্চমূল্যের শক্তির উপর নির্ভরতা হ্রাস পাবে এবং আর. পি. ও পূরণ করতেও সহায়তা করবে।
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে শ্রী যোশী বলেছেন যে ত্রিপুরা সরকার পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে উত্তম অগ্রগতি করে চলেছে । এরাজ্যে ২০১৮ সালের আগে সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হত মোট ২.৫ মেগাওয়াট। গত সাড়ে ছয় বছরে ত্রিপুরায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এই উৎপাদন ক্ষমতাকে ১০ গুণ বাড়িয়েছে, ফলে রাজ্যের বর্তমানে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হয়েছে ২০.৫ মেগাওয়াটেরও বেশি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী যোশী রাজ্য সরকারের সঙ্গে নিরন্তর সহযোগিতার অব্যাহত রাখার ওপর আস্থা ব্যক্ত করেন এবং বলেন, “আমাদের এই যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা ত্রিপুরার মানুষের জন্য আরও ভালো সুযোগ নিশ্চিত করব”।