আগরতলা, ২৭ ডিসেম্বর : ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য বিজেপি ও তিপরা মথা নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছে। বিজেপি হিন্দু-মুসলমান এবং তিপরা মথা জাতি -জনজাতিদের মধ্যে বিভেদ তৈরী করতে চাইছে। কারণ, তাঁরা বুঝে গেছে শুধু প্রতারণরা করে সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আজ ৮০ তম জনশিক্ষা দিবসে উপলক্ষ্যে আগরতলা টাউন হলে আয়োজিত সভায় বিজেপি ও তিপরা মথাকে একহাত নিয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। সাথে তিনি যোগ করেন, বিজেপি সরকার এখন দুর্নীতির আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। সকারী দফতরে ঘুষ ছাড়া এখন কাজ হয় না।
তাঁর অভিযোগ , কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু রাজ্যে কাজ নেই , চাকুরী নেই। বেকাররা চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছে। এদিকে, হাসপাতালে চিকিত্সক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী এবং বিদ্যালয় শিক্ষক স্বল্পতা ভুগছে। গত ৭ বছরে বিজেপি রাজ্যের উন্নয়নে কাজ করেনি কিন্তু রাজ্যে জাতি উপজাতিদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। ত্রিপুরারা শান্তি সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র চলছে। তাঁদের এই পরিকল্পনায় জয়ী হতে দেওয়া যাবে না। আরো অভিযোগ, রাজ্যের যুবক যুবতীরা চাকুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ, টাকার বিনিময়ে বিজেপি চাকুরী বিলি করছে। বহি:রাজ্যের যুবক যুবতীরা বাঁকা পথে পিআরটিসি বানিয়ে রাজ্যে চাকুরী নিচ্ছেন। আসলে বিজেপি সরকার এখন দুর্নীতির আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। এই রাজ্যে রাখার বিনিময়ে সরকারী সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।
এদিন মানিক সরকার বলেন, বিগত ৪১ বছরে ত্রিপুরাবাসী ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয় নি। বন্যার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যবাসী। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এখনো পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি। ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের উৎসবে সামিল হতে পারছেন না। কিন্তু অন্যদিকে রাজ্যের মন্ত্রীরা নিজেদের আনন্দে মেতে উঠেছেন। তাই এরকম পরিস্থিতে দাঁড়িয়ে জনগণকে একত্রে প্রতিবাদে সামিল হতে হবে।
তাঁর কথায়, তিপরা মথা বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে বৈতরণী পার করতে সাহায্য করেছিল তিপরা মথা না হলে বিজেপির হার নিশ্চিত ছিল। এখন রাজ্যে দাঙ্গা বাধানোর জন্য তাঁরা নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। বিজেপি হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ তৈরী করার কাজ করছে। এর এদিকে তিপরা মথা জাতি জানজাতিদের মধ্যে বিবাদ লাগানোর ষড়যন্ত্র করছে। কারণ, তাঁরা বুঝে গেছে শুধু প্রতারণরা করে সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়, একে অপরের বিরুদ্ধে বিবাদ তৈরী করতে হবে।
এদিন তিনি আরো বলেন, রাজ্যে দুর্নীতি চরম সীমানায় পৌঁছে গিয়েছে। এদিকে এডিসিতেও একই অবস্থা চলছে। মাসের শেষে এডিসিতে কর্মরত কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। এডিসিতে বেহাল দশাই চলছে। এদিন তিনি তিপরা মথার প্রাক্তন সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেবর্মণকে একহাত নিয়েছেন। তাঁর কটাক্ষ, জনসম্মুখে প্রদ্যোত কিশোর দেবর্মণ দাবি করেন রাজ্যের ১৫ লক্ষ জনজাতিদের সুরক্ষা জন্য একমাত্র তিনিই চিন্তাভাবনা করছেন। কিন্তু আসলে তিনি জনজাতিদের উন্নয়নে একটি কাজও করেন নি। দুইদিন পর পর নতুন নতুন স্লোগান নিয়ে হাজির হচ্ছেন। কিন্তু তিনি জানেন না জনশিক্ষা সমিতি বহু বছর থেকে জনজাতিদের শিক্ষা , বাসস্থান এবং মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছে। এদিন তিনি বলেন, জনশিক্ষা সমিতির একমাত্র লক্ষ্য ছিল জনজাতিদের অধিকার প্রদান করা। কিন্তু জনগণের সমস্যা নিরসনের জন্য জাতি জনজাতি একত্রে লড়াই করতে হবে।