BRAKING NEWS

উত্তর পূর্বাঞ্চলের সার্বিক বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর: উত্তর পূর্বাঞ্চলের সার্বিক বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এজন্য উত্তর পূর্বাঞ্চলকে অষ্টলক্ষী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। একই ধারায় ত্রিপুরায় সকল অংশের মানুষকে সুশাসন দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান রাজ্য সরকার। এজন্য আলাদা করে ত্রিপুরায় সুশাসন বিভাগ চালু করা হয়েছে। মঙ্গলবার হরিয়ানার গুরুগ্রামের এসজিটি ইউনিভার্সিটিতে কার্যকরী বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুশাসন সম্পর্কিত বিষয়ে আয়োজিত সম্মেলনে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 

সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এসজিটি ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এবার ত্রিপুরায় প্রথমবারের মতো নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিলের অধিবেশন অনু্ঠিত হয়েছে। এরপরই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি উত্তর পূর্বাঞ্চলের একজন প্রতিনিধি। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময় উত্তর পূর্বাঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সিকিম সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যকে অষ্টলক্ষী নাম দিয়েছেন তিনি। এই অঞ্চলের উন্নয়নে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন যতক্ষন পর্যন্ত অষ্টলক্ষীর উন্নয়ন হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন হবে না। এটা আমাদের জন্য খুবই বড় বিষয়। আগে প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। এরপর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অষ্টলক্ষীর উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন। তিনি আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন। এজন্য ত্রিপুরায় এখন একটি থেকে ৬টি জাতীয় সড়ক হয়েছে। এই নতুন নতুন জাতীয় সড়ক আগামীতে আমাদের পথ চলার দিশা দেখাচ্ছে। পাশাপাশি, ত্রিপুরার ইন্টারনেট এখন দেশের মধ্যে তৃতীয় শক্তিশালী ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করছে।

আর ত্রিপুরার এমবিবি এয়ারপোর্ট এখন উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম সেরা এয়ারপোর্ট হয়েছে। আগে এই এয়ারপোর্ট ছোট পরিসরে সিঙ্গারবিল এয়ারপোর্ট হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর। তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে এই এয়ারপোর্টের নামকরণ মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের নামে করা হয়েছে। এখন ত্রিপুরায় রেল পরিষেবার অসামান্য উন্নয়ন ঘটেছে। সবটাই এখন ব্রডগেজ রেল লাইন হয়েছে। দক্ষিণ জেলার প্রান্তিক শহর সাব্রুম পর্যন্ত রেল পরিষেবা চালু হয়েছে। আগামীতে বন্দে ভারত ট্রেন পরিষেবাও শুরু হয়ে যাবে। আগে ত্রিপুরা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস চালুর কথা আমরা কখনো ভাবতে পারি নি। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের গুরুত্ব ভালোভাবে অনুধাবন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ কায়েম ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ উত্তর পূর্বাঞ্চল বিকাশের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে প্রায় ১২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের কারণে। এখন শান্তির পরিবেশ কায়েম রয়েছে গোটা উত্তর পূর্বে। ত্রিপুরায় এনএলএফটি ও এটিটিএফ বৈরীরা আত্মসমর্পন করে মূলস্রোতে চলে এসেছে। এখন সন্ত্রাসবাদ মুক্ত ত্রিপুরা হয়েছে। এদিন বক্তব্যে নিজের চাকরি জীবনের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় চাকরি করতে কি কি প্রতিবন্ধকতার সামনে পড়তে হয়েছে সেটাও আলোচনা করেন। 

ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরায় বামফ্রন্টের শাসনে দীর্ঘ পুরনো ব্রু শরনার্থীদের সমস্যা সমাধান করার জন্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিন্তু ২৩ বছরের এই সমস্যা প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সাফল্য পেয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ছিল। কিন্তু সেটা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০০ কোটি টাকার অধিক হয়েছে। ব্রু শরনার্থীদের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের জন্য যা যা করার প্রয়োজন সবই করা হয়েছে। মোট ১২টি জায়গায় তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ত্রিপুরা দ্রুত বিকাশের দিশায় এগিয়ে চলছে। মৈত্রী সেতুর কাজও সম্পন্ন হয়েছে। শুধু বাংলাদেশের পরিবর্ত পরিস্থিতির কারণে সেটা চালু করা যাচ্ছে না। আগরতলা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেল ট্র্যাক নির্মাণও হয়েছে। আর এসব পরিষেবা শুরু হলে আগামীতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে হয়ে উঠবে ত্রিপুরা। উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্য সহ ত্রিপুরায় পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ত্রিপুরায় শান্তির পরিবেশ কায়েম রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার দিক থেকে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। ত্রিপুরা রাজ্যে ইতিমধ্যে ৬টি ইউনিভার্সিটি হয়েছে। একটি সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, ৩টি মেডিকেল কলেজ ও একটি ডেন্টাল কলেজ গড়ে উঠেছে। একটি নার্সিং কলেজ, ফার্মাসিস্ট কলেজ রয়েছে। আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথি কলেজ খোলার জন্যও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ত্রিপুরায় কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে হয়েছে। এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য চিন্তাভাবনা চলছে। এর পাশাপাশি চিকিৎসা পরিষেবার জন্য ৯টি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার পাশাপাশি শিক্ষা, কৃষি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্যও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা সকল অংশের মানুষকে সুশাসন দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। এজন্য আলাদা করে ত্রিপুরায় সুশাসন বিভাগ চালু করা হয়েছে। এই বিভাগের কাজ হচ্ছে রাজ্য সরকারের অন্যান্য দপ্তরের কাজ ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে কিনা সেটা নজর রাখা। 

সম্মেলনে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সৈনি, ছত্তিশগড়ের অর্থমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌধুরী, এসজিটি ইউনিভার্সিটির ম্যানেজিং ট্রাস্টি মনমোহন সিং চাওলা, এসজিটি ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. মদন মোহন চতুর্বেদি, জয়ন্ত কুলকার্নি সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *