BRAKING NEWS

‘বিদ্বেষ, বিভাজন’-এর আগুন জ্বালাচ্ছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী, ‘ভালো প্রতিবেশী’ হতে বলেছে মণিপুর

ইমফল, ৩০ নভেম্বর (হি.স.) : ‘অযৌক্তিক মন্তব্য করে বিদ্বেষ, বিভাজন’-এর আগুন জ্বালাচ্ছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা। ‘বিদ্বেষ না ছড়িয়ে’ লালদুহোমাকে ‘ভালো প্রতিবেশী’ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ‘বেটার স্ট্যাটসম্যানশিপ’ প্রদর্শন করতে বলেছে মণিপুর সরকার।

প্ৰসঙ্গত, গতকাল (২৯ নভেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে মণিপুর সরকার বলেছে, ‘মায়ানমার এবং বাংলাদেশ সংলগ্ন এলাকাগুলিকে নিয়ে একটি কুকি-চিন খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠনের বৃহত্তর অ্যাজেন্ডা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে ভারত সরকার। এই অ্যাজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করতে কয়েক দশক আগে পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী ভারত-মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিরোধিতা করে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিকে সমর্থন করে তাঁর গণতান্ত্রিক প্রমাণাদি ব্যক্ত করেছেন। তিনি কুকি-জো জনগোষ্ঠীকে পুনরায় একত্রিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। মণিপুরের সশস্ত্র দুৰ্বত্তদের দিল্লির দিকে বন্দুক তাক করার সম্ভাবনা এবং নিরস্ত্রীকরণের প্রয়োজন ও পাহাড়ি নেতাদের সাথে আন্তরিক আলোচনার বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি।’

উল্লেখ্য, জাতীয় সংবাদপত্র হিন্দুস্তান টাইমসকে হিংসাজর্জর মণিপুর সম্পর্কে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা বলেছিলেন, এন বীরেন সিং তথা তাঁর দল বিজেপি মণিপুরের জনসাধারণের নিরাপত্তা প্রদানে দায়বদ্ধ ছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর (বীরেন সিং) হাত থেকে শাসনক্ষমতা কেড়ে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জরুরি। এ ছাড়া তিনি মণিপুরে বিদ্রোহী কুকি-জো জনগোষ্ঠীর পক্ষে কিছু সওয়াল করেছিলেন।

লালদুহোমার ওই সব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মণিপুর সরকার শুক্ৰবার রাতে এই বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি (লালদুহোমা) সীমান্তে বেড়া সংস্থাপন নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, সীমান্তে বেড়া থাকা সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বন্দুক, অস্ত্রশস্ত্র ও মাদক চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘মিজোরাম সরকার অবৈধ অভিবাসন, অস্ত্র ও মাদক পাচার, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা রোধ করার উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী মায়ানমারের সাথে খোলা সীমান্ত বেড়া দিতে কেন্দ্রের প্রচেষ্টার বিরোধিতায় অটল।’

মণিপুর সরকার বলেছে, রাজ্যে চলমান সংকট মায়ানমার থেকে আগত অবৈধ অভিবাসীরা সৃষ্টি করছে। রাজ্যের অর্থনীতি খারাপ করতে অবৈধ পপি চাষ করছে তারা। তবে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিঙের ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নীতি তাদের এই পরিকল্পনায় মারাত্মক আঘাত করেছে। এটি রাজ্য সরকারের কোনও আদিবাসী-বিরোধী নীতির কারণে নয়, যেমন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা ‘ফ্যাব্রিক্যাটেড ন্যারেটিভ’ তৈরি করে প্রচার করেছেন।’

রাজ্য সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মণিপুরের একটি নথিভুক্ত ইতিহাস এবং একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে যা মিজোরামের বিপরীতে কয়েক হাজার বছর আগে চলে সমাপ্তি ঘটেছে। যার ফলে মাত্র কয়েক দশক আগে মিজোরামকে অসম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’

এতে বলা হয়েছে, ‘পার্বত্য জেলায় কুকি-অধ্যুষিত, বা যেখানে প্রচুর কুকি জনসংখ্যা রয়েছে, সেখানে গ্রামের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলি আপাতদৃষ্টিতে অনুধাবন করতে অক্ষম লালদুহোমা।’ লালদুহোমা স্মরণ করতে পারেন, মিজোরাম সরকার জমি, জীবিকা এবং সম্পদের ওপর চাপের অনুরূপ উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে মায়ানমারের নাগরিকদের পূর্ব অনুমতি ছাড়া জমি ক্রয় এবং ব্যবসা না চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল, বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

‘মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য সমর্থনে এ ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদেশি শক্তি কৰ্তৃক উত্তরপূর্ব ভারতকে বিভক্ত করার চক্রান্ত সর্বোতভাবে রুখবে মণিপুর সরকার। যদি কোনও ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থা এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে তা-হলে আইনের মাধ্যমে কঠোর হাতে মোকাবিলা করা হবে। এ ক্ষেত্ৰে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী ঘৃণা ও বিভাজনের আগুন জ্বালানোর পরিবর্তে ভালো প্রতিবেশী হয়ে আরও ভালো রাষ্ট্রনায়কত্ব প্রদর্শন করতে পারেন’, বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত মণিপুর সরকার ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ কর্মসূচির অধীনে ৬০ হাজার কোটি টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত বা ধ্বংস করেছে। রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় মণিপুরকে মাদকের ট্রানজিট বর্তমানে প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, মিজোরাম এখন ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং মাদকদ্রব্যের আন্তর্জাতিক ট্রানজিটের সুবিধাজনক রুট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

এই কাজগুলিকে ‘আদিবাসী বিরোধী’-র তকমা সেঁটে মাদক কারবার ও পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মণিপুর সরকারের আইনি ন্যায্য কাৰ্যকলাপের বিষয়ে অযৌক্তিক মন্তব্য করার পরিবর্তে মাদক ব্যবসা থেকে মিজো সমাজের ওপর ক্রমবর্ধমান হুমকির দিকে মনোনিবেশ করতে চান মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এন বীরেন সিং নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যে শান্তি ও স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধারের জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *