BRAKING NEWS

নিম্নচাপের জেরে পূর্ব বর্ধমান জেলাজুড়ে মাঠেই নুইয়ে পড়ল ধান, ক্ষতির আশঙ্কায় মাথায় হাত চাষীদের

দুর্গাপুর, ২৬ অক্টোবর (হি.স.):একেই বলে পাকা ধানে মই! নিম্নচাপের জের। বৃষ্টিতে মাঠেই নুইয়ে পড়ল ধান। আর তাতেই মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের। লোকসান পুরণ করতে বিকল্প চাষের পথ খুঁজছে শস্যগোলা পুর্ব বর্ধমানের চাষীরা। প্রসঙ্গত, ধান উৎপাদনে দেশের শীর্ষস্থানে থাকে পূর্ব বর্ধমান। দামোদর উপকুলবর্তী সেচের সুবিধা থাকায় বছরে দু-বার ধান চাষ হয়। এছাড়াও শীতকালিন  আলু, সব্জি চাষও হয়। চলতিবছর একের পর এক ঘূর্নী ঝড়ের চোখ রাঙানি থাকলেও বর্ষায় চাষে বৃষ্টি র জলের খামতি ছিল না। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব পড়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। বুধবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে হাল্কা বৃষ্টি সাথে ঝোড়ো হাওয়া। শুক্রবার সকাল হতেই বেড়েছে বৃষ্টির পরিমান সাথে দমকা হাওয়া। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বর্ধমানের মেমারী-১ নং ব্লকে ১৫৫.৪ মিলিমিটার, মেমারী-২ নং ব্লকে ৯৩.৮ মিলিমিটার, ভাতার ব্লকে ১৩০ মিলিমিটার,  গলসী-১ নং ব্লকে ১২০.৬ মিলিমিটার, কেতুগ্রাম-১ নং ১১৫, মঙ্গলকোট- ১০০ মিলিমিটার, জামালপুর-৯৭.৬ মিলিমিটার, রায়না-১ নং ৮৪ মিলিমিটার, রায়না-২ নং ব্লকে ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর তাতেই মহা বিপদের মুখে জেলার কৃষকরা। পূর্ব বর্ধমান জেলা বাংলার শস্যভাণ্ডার হিসেবেই পরিচিত। জেলার গলসী, খন্ডঘোষ, রায়না, মাধবডিহি, জামালপুর এলাকায় এই সময় আমন আর সুগন্ধি ধানে সবুজ হয়ে আছে বিস্তীর্ণ কৃষি জমি। পূর্ব বর্ধমান জেলা কৃষি দফতর সুত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মরশুমে ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। আর এই বিপুল পরিমাণ ধান চাষের ওপর কার্যত থাবা বসিয়েছে “দানা”। এ যেনো পাকা ধানে মই দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রায়না, জামালপুর, খন্ডোঘোষ, গলসী, মেমারী ব্লকের বিস্তীর্ণ ধান জমিতে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির কারণে বিঘার পর বিঘা জমির ধান গাছ নুইয়ে পড়েছে মাটিতে। তার ওপর পড়ে যাওয়া ধানজমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। গলসী-১ নং ব্লক কৃষি দফতর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মরশুমে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমি আমন ধান চাষ হয়েছে। ভাল চাষ হলেও টানা নিম্নচাপের জেরে অনেক চাষীরই মাথায় হাত পড়েছে। ব্লকের শিড়রাই, পারাজ, লোয়া-রামগোপালপুর, লোয়া কৃষ্ণরামপুর, চাকতেঁতুল, রনডিহা, নষ্করবাঁধ, কসবা মানাচর, সোদপুর মানাচর সহ বেশ কিছু এলাকায় ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একই অবস্থা বুদবুদের কুপুই নদীর তীরবর্তী পান্ডুদহ, বেলেডাঙা এলাকায়। জানা গেছে, ওইসব এলাকায় মুলত কম সময়ের উচ্চফলনশীল প্রজাতি ধান চাষ হয়েছিল। ধান কাটার পরই ওই জমিতে আলু চাষ হয়। ধান অনেক জমিতে পাকতে শুরু করেছে। গলসী-১ নং ব্লকের এফপিও র চিপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর শেখ আমির মহম্মদ বলেন, ‘ এলাকার গোবিন্দভোগ সহ দেশীয় ধান জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ওই ধান উচ্চতায় অনেকটা লম্বা হয়। এইসময় ধানের ফুল আসে। ঝড়ে মাঠেই নুইয়ে পড়েছে ধান। তারসঙ্গে যেভাবে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে জলমগ্ন চাষজমি। জমির জল শুকোতে অনেক সময় লাগে, ফলে জমা জল ফসল নষ্ট করে দেবে। গত ২৪ ঘণ্টার লাগাতার বৃষ্টি এই এলাকার ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি করে দিয়েছে। আরও যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে ধান চাষ সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে পড়বে। তাই চাষীরা খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যেই রয়েছে।’ কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলেন,” রাজ্যজুড়ে চাষীরা দূর্দশার মধ্যে পড়েছে। বিদেশে রফতানি হয় এবং লাভজনক হওয়া পূর্ব বর্ধমানে গোবিন্দভোগ চাষে চাষীদের আগ্রহ বেড়েছে। তার সঙ্গে উচ্চফলনশীল ধানও চাষ হয়। আলু চাষের জমিতে কম সময়ে ধান হওয়া উচ্চফলনশীল স্বর্ন ধানের চাষ হয়। গোবিন্দভোগ ধানের এখন ফুল আসছিল। স্বর্নধান পাকার মুখে। অনেকে কাটত। এরকমসময় নিম্নচাপে চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব্জি চাষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের দাবী, চাষীদের বাঁচাতে সরজমিন তদন্ত করে প্রকৃত চাষীদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাবস্থা করুক সরকার।” জেলা কৃষি আধিকারি নকুলচন্দ্র মাইতি জানান,” মূলত ফলন ভালো হওয়ার জন্য স্বর্ন মাশুলি, স্বর্ন লঘু ধান চাষ বেশী হয়েছে। এই ধানে ক্ষতির সম্ভাবনা কম।” পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসক আয়েষা রানী বলেন,” জেলায় ১৭ হাজার ২১৭ হেক্টর জমির ধান নুইয়ে পড়েছে। কালনা এলাকায় পেঁয়াজ চাষের জমিতে জল জমেছে।” তিনি আরও বলেন,” শস্য বিমা করানোর মেয়াদ আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চাষীরা যেন শস্য বিমা করিয়ে নেয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *