কলকাতা, ২৩ অক্টোবর (হি.স.): সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর রাতে অনশন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ‘দানা’-র আগমনী সংবাদ। বুধবার থেকে এক লহমায় যেন সংবাদমাধ্যমে আর জি কর-কাণ্ড এবং জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের গুরুত্ব ব্রাত্য হয়ে গেল।
বস্তুত ৯ আগস্টের সাতসকালে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সংবাদমাধ্যম মুখর ছিল সংশ্লিষ্ট ওই ঘটনাবলী নিয়ে। ‘থ্রেট কালচার’ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ও কলেজ কাউন্সিল ৫৩ জনকে সাসপেন্ড ও বহিষ্কার করেছে। তাতে মঙ্গলবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এটি খবর হয়েছে বুধবারের বিভিন্ন দৈনিকে। কিছু দৈনিকে প্রথম পৃষ্ঠায়। কিন্তু এ ছাড়া আর জি কর আন্দোলনের খবর সেভাবে নেই। যা গত প্রায় তিন মাসে এই প্রথম।
এত বড় আকারে, এত দিন ধরে, এত ব্যাপক ও গভীর আলোড়ন পশ্চিমবঙ্গ শেষ কবে দেখেছে? দেশের অন্য কোন প্রান্তেই বা কবে বিপুল সংখ্যক মানুষের পবিত্র ক্রোধ ও গভীর আবেগকে এ ভাবে যুক্তিনির্ভর, শান্ত ও বলিষ্ঠ প্রতিবাদের ভাষায় মূর্ত হয়ে উঠতে দেখা গেছে? নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে শাহিন বাগ আন্দোলন, বা কৃষি আইনের নামে কর্পোরেট আরাধনার বিরুদ্ধে দিল্লি সীমান্তে বৎসরব্যাপী কৃষক প্রতিরোধের কথা অবশ্যই মনে আসবে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে আর জি কর আন্দোলন যে ভাবে সমাজের বিরাট অংশের মানুষকে আলোড়িত করে সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছে, তেমন উদাহরণ সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে বলে মনে হয় না।
কিন্তু সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্ন-বৈঠকের পরে ‘আমরণ অনশন’ প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় গ্রুপ ছাড়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। যাঁরা গ্রুপ ‘লেফট’ করে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই ‘হতাশ’। এমন প্রশ্নও তোলা হচ্ছে যে, এই আন্দোলনের কি আর কোনও ভবিষ্যৎ রইল? বিভিন্ন এলাকার ‘গ্রুপ অ্যাডমিন’-রা মেনে নিচ্ছেন, ‘আমরণ অনশন’ প্রত্যাহারের পর থেকে অনেকেই তাঁদের কাছে ‘হতাশা’ ব্যক্ত করছেন। অনেকেই গ্রুপ ছেড়ে দিচ্ছেন।
আবার ভিন্ন ছবিও রয়েছে। যেমন হুগলির উত্তরপাড়ার অন্যতম বড় নাগরিক গ্রুপের অ্যাডমিন শাশ্বত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অনশন প্রত্যাহারের পরে তেমন কোনও ‘নেতিবাচক’ মনোভাব গ্রুপে দেখা যায়নি। কেউ তাঁদের গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়েও যাননি। তাহলে কি প্রাসঙ্গিকতা হারাল আর জি কর-এর আন্দোলন? অনেকে এ-ও বলছেন যে, ‘মূল দাবি’ আদায় এখনও বাকি। অর্থাৎ, নির্যাতিতার জন্য বিচার। সেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কেউ কেউ ‘সাহস’ যোগাচ্ছেন।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ দেবাশিস হালদার অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আন্দোলন থামার কোনও প্রশ্নই নেই। অনশন তোলা মানে আন্দোলন থেকে সরে আসা নয়। আগামী শনিবার সমাবেশ (গণ কনভেনশন) থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা আন্দোলনকারীরা কোনও হতাশার জায়গায় নেই। কেউই যেন হতাশ না হন।’’ যাঁর মত যা-ই হোক, আর জিকর-আন্দোলন থেকে বুধবার খবরের ভরকেন্দ্র সরে গিয়েছে দানা-তে। দিন দুই এটাই চলবে। তার পর প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনামার দখল নেবে হয়ত অনাগত কোনও ঘটনা বা বিষয়!