আগরতলা, ১৮ অক্টোবর : পুলিশ লকআপে নির্মমভাবে অত্যাচারিত বাদল ত্রিপুরার হত্যাকান্ডে পাঁচ আরক্ষা কর্মীকে সাব্রুম মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত তাঁদেরকে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, কালাডেপার বিপিনচন্দ্র পাড়ার বাসিন্দা আশাকুমার ত্রিপুরার ছেলে বাদল ত্রিপুরা (৩৮) ও চিরঞ্জিৎ ত্রিপুরাকে গত রবিবার রাবার চুরির অপবাদে পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়েছিল।পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, রাতে আটক দুইজনকে বেধড়ক মারধর করে। তাতে বাদল ত্রিপুরার আঘাত গুরুতর ছিল। সোমবার তাদেরকে জামিন নিতে থানা থেকে মনিন্দ্র ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তিকে আধার কার্ড নিয়ে থানায় আসতে ফোন করা হয়েছিল। সেই মোতাবেক মনিন্দ্র ত্রিপুরা এবং যুবরাজ ত্রিপুরা মনু বাজার থানা গিয়ে দেখতে পায় বাদল ত্রিপুরার সারা শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁর সাথে পরিবারের সদস্যরা কথা বলে জানা যায় রবিবার রাতে মনুবাজার থানার পুলিশ বেধড়ক মারধর করে তাঁকে। এতে বাদল ত্রিপুরার দুটি চোখ মারাত্মক ভাবে জখম হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাদল ত্রিপুরাকে মনুবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে শান্তিরবাজার জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনার পর এলাকাতে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।
ওইদিন রাতেই মনুবাজারে ছুটে গিয়েছিলেন দক্ষিণ জেলার পুলিশ সুপার অশোক কুমার সিনহা, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকার। তাঁরা থানার সিসি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন যে বাদল ত্রিপুরাকে মনুবাজার থানার এসআই প্রেমজিৎ রায়, তিন এসপিও কর্মী শ্যামল দাস, থৈলাসা মগ, রেঙ্গ মগ মিলে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে। তাঁদের বেধরক প্রহারে বাদল ত্রিপুরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে থানাতেই ফেলে রাখেন। জেলা পুলিশ সুপার পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে এসআই ও তিন এসপিওকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গতকাল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জি বি হাসপাতালে বাদল ত্রিপুরার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল তাঁর মৃতদেহ নিয়ে সাব্রুম মহকুমার মনু থানা ঘেরাও এবং সাব্রুম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে গ্রামবাসী বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন জেলা পুলিশ আধিকারিক অশোক কুমার সিনহা, এলাকার বিধায়ক মাইলাফ্রু মগ এবং এমডিসি দেবজিত ত্রিপুরা । তাঁরা অবরোধকারীদের সাথে কথা বলেন এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওই আশ্বাসের ভিত্তিতে গ্রামবাসীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এদিকে, ওই ঘটনায় সাব ইন্সপেক্টর প্রেমজিৎ রায়, পুলিশ কনস্টেবল রাজ কুমার ত্রিপুরা, এসপিও থৈলাচা মগ, রেঙ্গু মগ এবং শ্যামল দাস এই পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছিল মনু বাজার থানার পুলিশ। খুনের মামলা হাতে নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। আজ অভিযুক্ত পাঁচজনকে মনু বাজার থানার পুলিশ সাব্রুম মহকুমা আদালতে হাজির করেন। আদালত তাঁদেরকে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে নির্দেশ দেন।