নিজস্ব প্রতিনিধি, সোনামুড়া, ১৮ অক্টোবর: আবারও পণের জন্য বধুহত্যার অভিযোগ উঠলো। নয়নজলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১নম্বর ওয়ার্ডের দুপুরিয়াবান্দ এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। স্বামী সানাউল হকের নির্যাতনের শিকার হয়ে আয়েশা বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এই ঘটনা আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা এবং জোর বিতর্ক।
সানাউল হক পেশায় একজন মসজিদের ইমাম। তিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে বাগবের গ্রাম পঞ্চায়েতের দুধপুকুর এলাকার রশিদ মিয়ার মেয়ে আয়েশা বেগমকে সামাজিক রীতি মেনে বিবাহ করেন।বিবাহের পর থেকেই আয়েশা বেগমকে পনের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। তাদের সংসারে দুটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলতেই থাকে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়েশা বেগম তার বাপের বাড়িতে ফোন করে স্বামীর অত্যাচারের কথা জানান। এরপর বিকেলেই তার মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্থানীয়রা জানায়,আয়েশা বেগম নিজ ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে পাশের ঘরের লোকজন তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার করে, পরে পরিবারের সদস্যরা এসে একই দৃশ্য দেখতে পান।
আয়েশা বেগমের পরিবারের দাবি, এটি আত্মহত্যা নয় বরং একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাদের অভিযোগ অনুযায়ী, প্রথমে আয়েশাকে বালিশ বা কম্বল দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা হয় এবং পরে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা বলে সাজানো হয়।এদিকে,আয়েশার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বাপের বাড়ির লোকজন তড়িঘড়ি সেখানে গিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় স্বামী সানাউল হক সহ শ্বশুর-শাশুড়ি এবং পাঁচ ভাই কেউই বাড়িতে ছিলেন না, যা সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।
কলমচৌড়া থানায় খবর দেওয়া হলে প্রথমে এসআই বিশ্বজিৎ দেববর্মা প্রাথমিক তদন্ত করেন। পরে ফরেনসিক টিম,সোনামুড়া সিজিএম,মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শশীমোহন দেববর্মা এবং কলমচৌড়া থানার ওসি নাড়ু গোপাল দেব ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেন। আয়েশার মৃতদেহ উদ্ধার করে বক্সনগর সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আয়েশার পরিবারের পক্ষ থেকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। তাদের দাবি, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনেই আয়েশার মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘটনার সঠিক কারণ ময়না তদন্তের রিপোর্টের পরই প্রকাশ্যে আসবে। ঘটনার পর সানাউল হক ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক, যা সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করছে। এই ঘটনার পর এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং ন্যায়বিচারের দাবি উঠেছে।