মনির হোসেন।
ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশের পাহাড়ী জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সহিংসতায় ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত দু’জেলায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। তবে সহিংসতায় নিহতের ঘটনায় বিচারের দাবীতে ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা।
জানা গেছে, চট্রগ্রামের খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৫০ জন। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক আহসান হাবিব এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- জুনান চাকমা, ধনঞ্জয় চাকমা ও রুবেল। জুনান চাকমা ও রুবেলের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদরে এবং ধনঞ্জয় চাকমার বাড়ি দীঘিনালায়। নিহতদের মরদেহ খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে রয়েছে। বাকিদের খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
খাগড়াছড়ির সহিংসতার উত্তাপ ছড়িয়েছে পাশের জেলা রাঙ্গামাটিতেও। এতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এই সংঘাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক সাদিয়া আক্তার জানান, সংঘাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া একজন মারা গেছেন। তবে তার নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলা শহরের নারানখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাতে ১২ জনকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়। চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। তবে কাদের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি শান্ত করতে জেলাজুড়ে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার দীঘিনালায় দুইপক্ষের বিরোধের জের ধরে লারমা স্কয়ারের বাজারে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তাতে ৫০টির বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়। আহত হন পাঁচজন।
এদিকে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি করে রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা। শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে দুপুর ১২টার দিকে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন কার্যকর, পর্যটনের নামে ভূমি দখলের প্রতিবাদ জানান বিক্ষোভকারীরা। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে আরও শক্তিশালী করার দাবিও ওঠে সেখানে। দীঘিনালায় বাঙ্গালি-পাহাড়ি সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও সামরিকায়ন বন্ধের দাবি জানান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দারা।