ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রটি আমাদের জাতির উচ্চাকাঙ্ক্ষার আলোকবর্তিকা হিসাবে উঠে এসেছে, যা বিকশিত ভারতের দিকে আমরা যে পদক্ষেপ নিচ্ছি তার প্রতীক। আর এখন কেবল অর্থনীতিতে অবদানকারী হিসাবে নয়, এই ক্ষেত্রটি দ্রুত ভারতের বিকাশের কাহিনীর ভিত্তি হিসাবে রূপান্তরিত হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে নীতি, উদ্যোগ ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের এক চমৎকার মিশ্রণ ঘটিয়েছে এবং এই ক্ষেত্রকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে যা, বিশ্ব দরবারে ভারত একটি শক্তিশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ভারত বর্তমানে ৩.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি নিয়ে গর্ব করে, যার উচ্চাকাঙ্খী লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪৭ সালে দেশের স্বাধীনতার শতবর্ষের মধ্যে ৩০-৩৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পৌঁছানো।ভারতের এই রূপান্তরের মূলে রয়েছে সমৃদ্ধ কৃষি ব্যবস্থা বৈচিত্র্যময় জলবায়ু। যা আমাদের কৃষকদের অসাধারণ বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করে। ডাল, বাজরা, দুধ, গম, ধান এবং ফল ও শাকসব্জির উৎপাদনে এক বিশাল পরিসর তৈরী করেছে শুধু নয়, বিশ্বের অগ্রণী দেশ হিসাবে মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রেও ভারতের রয়েছে এক অতুলনীয় সম্পদের ভিত্তি।
আমাদের কঠোর পরিশ্রমী কৃষকদের দ্বারা নিখুঁতভাবে লালিত এই কৃষি প্রাচুর্য নয়া উদ্ভাবন ও শিল্পোদ্যোগের একটি তরঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছে, একটি সমৃদ্ধ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রের জন্ম দিয়েছে।
এই ক্ষেত্রটি ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং নতুন বাজারের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধিকে চালিত করছে। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারত হল বৃহত্তম এবং তরুন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, যা এই গতিশীল রূপান্তরকে আরও ত্বরান্বিত করে।
এই ক্ষেত্রে উন্নত প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে , ফসল কাটার পরে উৎপাদন ক্ষতি হ্রাস, মজুত করার পর দীর্ঘ দিন পন্যের গুনমান বজায় রাখা ইত্যাদি উদ্যোগের ফলে কৃষকরা যেন আরও আয় করতে পারেন সেই সহায়ক ভুমিকা নেওয়া হচ্ছে এই ক্ষেত্রে। ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের বিকাশ অব্যাহত থাকায়, এটি কেবল আন্তর্জাতিক মানের মানই পূরণ করে না, বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সর্বদা পরিবর্তিত স্বাদ এবং পছন্দগুলি পূরণ করার জন্য বৈচিত্রময় নানা অফার নিয়ে হাজির হয়।
এই ক্ষেত্রটি ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং নতুন বাজারের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে আর্থিক প্রবৃদ্ধিকে চালিত করছে। উপযুক্ত দাম গুনমান বজায়,রেখে ভারতের কৃষিজাত পণ্য যাতে বিশ্বের প্রতিটি কোণে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে আমাদের কৃষক ও কৃষি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই তুলে ধরা হয়েছে। একটি প্রাণবন্ত এবং তরুণ কর্মশক্তিকে সংহতকরণের মাধ্যমে, আমরা একটি স্থিতিস্থাপক, বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রের উত্থান দেখছি যা ভারতকে একটি সমৃদ্ধ ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারে৷ কোভিড -১৯ মহামারীর সময়ই আমরা দেখেছি খাদ্য প্রক্রিয়াকরন ক্ষেত্র কতটা প্রানবন্ত হয়ে উঠেছিল। প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিয়েছে ভারত।চিরাচরিত খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি রেডি-টু-ইট, রেডি-টু-কুক এবং ভ্যালু-অ্যাডেড পণ্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে। খাদ্য সুরক্ষা এবং পুষ্টিরদিকেও নজর রয়েছে সমান ভাবে।
ভারতে খাদ্য ও পুষ্টি সুরক্ষার চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় সুস্থ ৃজীবন যাপন , প্রত্যন্ত অঞ্চলে গুনমান সম্পন্ন খাদ্য সামগ্রীর যোগান ইত্যাদির জন্য একটি শক্তিশালী খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্র একান্ত জরুরি। এটি কৃষকদের জন্য পন্যের উন্নত মূল্য নিশ্চিত করে এবং বাজারের সুযোগগুলি বাড়ায়, জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে এবং জীবিকা নির্বাহকে সমর্থন যোগায়।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্পদা যোজনার (পিএমকেএসওয়াই) মতো ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচীগুলি রূপায়নে চ্যাম্পিয়নের মতো এগিয়ে রয়েছে। এই উদ্যোগটি কাটিং-এজ পরিকাঠামো বিকাশ এবং ফার্ম গেট থেকে খুচরা পর্যন্ত সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনাকে অনুকূলে রেখে এই খাতকে রূপান্তরিত করছে।
এই প্রচেষ্টাগুলির অঙ্গ হিসাবে, প্রধানমন্ত্রী ফর্মালাইজেশন অফ মাইক্রো ফুড প্রসেসিংএন্টারপ্রাইজেস (পিএমএফএমই) প্রকল্পের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিপণনের সহায়তার মাধ্যমে মাইক্রো খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটগুলির বিকাশকে ত্বরান্বিত করছে। প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ স্কিম (পিএলআইএস) ক্রমবর্ধমান বিক্রয়ের সাথে আবদ্ধ আর্থিক পুরষ্কার প্রদানের মাধ্যমে দেশীয় উত্পাদন এবং রফতানি বৃদ্ধিকে আরও শক্তিশালী করছে। উপরন্তু, নাবার্ডের অধীনে ২০০০ কোটি টাকার বিশেষ পরিকাঠামো তহবিল এই ক্ষেত্রের পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এই সমন্বিত পদ্ধতিটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং এই সম্পর্কিত খাতগুলিকে উন্নীত করার জন্য একটি বিস্তৃত কৌশলের প্রতি জোর দেয়, একটি শক্তিশালী, সমন্বিত এবং দূরদর্শী বৃদ্ধির পথ নিশ্চিত করে।
ভারতের দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতি এবং এর ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর জন্য একটি অনন্য এবং অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি করেছে। ব্যবসা করাকে সহজ করে তোলার উদ্দেশ্যে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ যেম কর কাঠামো পরিবর্তন ও সহজ করা, পরিকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি চিন্তাভাবনা ব্যবসা-বাণিজ্যমুখী সংস্কার বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশকে উৎসাহিত করেছে। এই সহায়ক ভূদৃশ্য কেবল বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করে না, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের জন্য ভারতকে একটি গতিশীল কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলে।
২০২৩ সালে পূর্ববর্তী সংস্করণের দুর্দান্ত সাফল্যের পরে, মন্ত্রণালয় এবছর ২০২৪ সালের ১৯ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়ার তৃতীয় সংস্করণের আয়োজন করছে। এই ইভেন্টে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত স্টেকহোল্ডাররা তাদের ধারণা বিনিময় করতে পারবেন , সুযোগগুলি অন্বেষণ করতে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন এয়ই ইভেন্টে।এটি নির্মাতা, উৎপাদক, বিনিয়োগকারী, পোলের এক ধরণের সমাবেশ হবে। ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়া ২০২৪ এমন একটি মঞ্চ হিসাবে কাজ করে যেখানে স্টেকহোল্ডাররা উদ্ভাবনগুলি অন্বেষণ করতে, অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে এবং একটি টেকসই খাদ্য ভবিষ্যতের দিকে একটি কোর্স চার্ট করতে একত্রিত হন।
আসুন আমরা আমাদের সামনে থাকা সুযোগগুলি গ্রহণ করি এবং আরও সমৃদ্ধ এবং স্থিতিস্থাপক খাদ্য ব্যবস্থার দিকে যাত্রা শুরু করি যা মূল্য শৃঙ্খল জুড়ে সমস্ত স্টেকহোল্ডাররা উপকৃত হতে পারেন। একত্রিত হওয়ার এই মুহূর্তে আমরা কেবল একটি শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি না, বরং এমন এক ভবিষ্যতের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছি যেখানে নয়া উদ্ভাবন, এবং সমৃদ্ধি আমাদের জাতির প্রতিটি কোণকে উন্নীত করবে।