আগরতলা, ৭ সেপ্টেম্বর : রাজ্য সরকারের পর্যটন উন্নয়ন তহবিলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিনটি অর্থ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার ৭০৪৪.৪১ লক্ষ টাকার মঞ্জুর করেছে। তার মধ্যে ৬২১৮.৯৯ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই পর্যটন ক্ষেত্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকার অতিরিক্ত ৫৮৬৯.৪৯ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা বিধানসভার বাদল অধিবেশন চলাকালীন ত্রিপুরার পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন।
বিধানসভায় সিপিআইএম বিধায়ক নয়ন সরকার এবং কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের তারকাচিহ্নবিহীন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী শ্রী চৌধুরী রাজ্যের পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নে চলমান প্রকল্পগুলি বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, গত তিনটি আর্থিক বছরে রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন স্হান জুড়ে ৪১টি লগ হাট নির্মাণ ও চালু করা হয়েছে। আরও ১০টি লগ হাট খুন সহসাই চালু করা হবে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো চালু করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসারে গোমতী জেলার নারিকেল কুঞ্জে হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে।
তাঁর কথায়, রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য ডম্বুর জলাশয়ে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে উৎসাহ দিতে ওয়াটার স্কুটার জেট স্কিস, ভাসমান জেটি, এবং মোটর চালিত নৌকা চালু করা হয়েছে। সাথে ওয়াটার স্কি, ইনফ্ল্যাটেবল কায়াক, ব্যানানা বোট এবং স্ট্যান্ড-আপ প্যাডেল বোর্ডের মতো কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বদেশ দর্শন ১.০ প্রকল্পের অধীনে আগরতলা, সিপাহীজলা, মেলাঘর, উদয়পুর, অমরপুর, মন্দিরঘাট, তীর্থমুখ, নারকেল কুঞ্জ, ডুম্বুর, আমবাসা, নীরমহল এবং বড়মুঠা পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির’কে একটি আধ্যাত্বিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা লক্ষ্যে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক কর্তৃক ‘প্রসাদ’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির চত্তরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তাঁর দাবি, নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কমলপুর মহকুমার অর্ন্তগত সুরমা ছড়া ওয়াটার ফলস পর্যটন কেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়াও দক্ষিন ত্রিপুরার আভাংছড়াস্থিত শহিদ ধনঞ্জয় স্মৃতি উদ্যান (জোলাইবাড়ি), চোত্তাখলাস্থিত ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান এবং বক্সনগর বৌদ্ধ স্তূপ পর্যটন কেন্দ্র উন্নয়নের কাজ চলছে এবং আগামী ২ মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী পর্যটন ।
তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের পর্যটন পরিকাঠামো বিকাশের লক্ষ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ছবিমুড়া, কৈলাসহরে সোনামুখী এলাকা, চতুদর্শ দেবতা মন্দির এবং কসবা কালী মন্দির চত্তরের পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছবিমুড়া এবং কৈলাসহরের সোনামুখী এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে উপরিউক্ত পর্যটনস্থল গুলির উন্নয়নের জন্য ১৭৯ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
তিনি প্রত্যয়ের সুরে বলেন, পর্যটনের প্রচার ও প্রসারের কাজটিও চলছে সমানতালে। কলকাতা, দিল্লী, পুণে অযোধ্যা ও আমেদাবাদে অনুষ্ঠিত পর্যটন মেলায় অংশ গ্রহন ছাড়াও রাজ্যের প্রধান প্রধান মেলা ও উৎসবগুলিতে পর্যটন সম্ভারগুলিকে মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
শ্রীচৌধুরী বলেন, রাজ্যে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পুস্পবন্ত প্রাসাদ ও দরবার হলকে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম ও কালচারাল সেন্টারে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, নর্থ ইস্ট স্পেশাল ইনফ্রাট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট স্কিম প্রকল্পে উদয়পুরের অমরসাগরের উন্নয়নের জন্য ৪০ কোটি এবং উদয়পুর ও ছবিমুড়ায় ১৫ টি মনুমেন্ট-এর উন্নতির জন্য ২৫ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব ভারত সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। খুব সহসাই অনুমোদন মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
সাথে তিনি যোগ করেন, স্পেশাল এসিস্ট্যান্ট টু স্টেটস ফর কেপিটেল ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্পে মাধ্যমে মহাদেব দীঘি ও ব্রহ্মকুন্ড পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য উদ্যাগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মহাদেব দীঘির উন্নয়নের জন্য ৬ কোটি টাকা এবং ব্রম্ভকুন্ডের উন্নয়নের জন্য ২ কোটি পাওয়া গেছে। মহাদেব দীঘির উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত এজেন্সিকে প্রথম পর্যায়ে অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
শ্রীচৌধুরী বলেন, রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলতে হোম স্টে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই নারকেলকুঞ্জের পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রায় ১১ টি ‘হোম স্টে’ এবং জম্পুই হিলে ০৪ টি ‘হোম স্টে’ চালু করার পর্যটন দপ্তর উদ্যোগ নিয়েছে।স্বদেশ দর্শন ২.০ প্রকল্পে উনকোটি এবং আগরতলা ডেস্টিনেশন গুলিকে সাজিয়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সার্ভের কাজ চলছে। ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রনালয় থেকে এই দুটি ডেস্টিনেশনের জন্য প্রায় ১৪০.০০ কোটি টাকা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
(ছ) ডোনার মন্ত্রকের অধীন প্রকল্পে নারকেলকুঞ্জের আশে-পাশে আরও ৪ টি আইল্যান্ডকে পর্যটকদের জন্য সাজিয়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আইল্যান্ড গুলি হল যথাক্রমে চিত্ত পাড়া, অমূল্যসাধন পাড়া ও টুইন আইল্যান্ড।জিরানীয়া মহকুমা এর অর্ন্তগত শচীন্দ নগর কলোনিতে চা বাগানকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরা হেরিটেজ তৈরী করার লক্ষ্যে কার্যকরী উদ্যাগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরা পর্যটন উন্নয়ন নিগম লিমিটেড ও এনএইচএলএমএল-এর মধ্যে একটি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেগুলি হল, উদয়পুর রেলস্টশন থেকে মাতাবাড়ি, মহারানি থেকে ছবিমুড়া, সুরমাছড়া এবং জম্পুই হিল।
তাঁর কথায়, গত তিনটি অর্থ বছরে রাজ্যে পর্যটন শিল্পের বিকাশে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ৬২১৮.৯৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে এবং রাজ্য সরকার থেকে ৫৮৬৯.৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। গত তিনটি অর্থ বছরে রাজ্যে পর্যটন শিল্পের বিকাশে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ৭০৪৪.৪১ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে।