আগরতলায় তথ্য ও  সম্প্রচার মন্ত্রকের উদ্যোগে কমিউনিটি রেডিও’র উপর সচেতনতামূলক কর্মশালা

আগরতলা, ২৯  আগষ্ট : সমাজে স্থানীয় কণ্ঠস্বরকে সর্বসমক্ষে তুলে ধরতে এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান করে সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিও স্টেশনের অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে। কমিউনিটি রেডিও নিয়ে আগরতলায় আয়োজিত দুদিন ব্যাপী কর্মশালার প্রথম দিনে এই বক্তব্যই তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা৷

কমনওয়েলথ এডুকেশনাল মিডিয়া সেন্টার ফর এশিয়ার (সিইএমসিএ) সহযোগিতায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক (এমআইবি) মত বিনিময় আলোচনার মাধ্যমে আগরতলায় কমিউনিটি রেডিও নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালার প্রথম দিনটি শুরু হয় আজ। কমিউনিটি রেডিও স্টেশন স্থাপনে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ ব্যাপারে সকলকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এই কর্মশালায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিসহ অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন।

সকাল ১০টায় দিনের কর্মশালার কার্যক্রম শুরু হয়। সিইএমসিএ’র পরিচালক ড. বি. শাদ্রচ-এর  স্বাগত ভাষণে কমিউনিটি রেডিওর সম্ভাবনা অন্বেষণে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ ও অঙ্গীকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভারতের কমিউনিটি রেডিও তার ২০ বছরের ঐতিহ্য বহন করছে ও দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়ন করেছে। এই মাধ্যম  সমাজের উন্নয়ন, স্থানীয় চাহিদা মোকাবেলা, পরিষেবা সরবরাহ এবং জরুরীকালীন অবস্থার সময় সহায়তা করার জন্য, সক্রিয় ব্যস্ততা এবং তথ্য প্রচারকে উৎসাহিত করার সময় বিশেষ অপরিহার্য।

মন্ত্রকের সি আর এস বিভাগের প্রকল্প অধিকর্তা অমিত দ্বিবেদী স্বাগত ভাষণে  সামাজিক উন্নয়ন ও সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিওর ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শ্রী দ্বিবেদী কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলির বিস্তৃতি ও প্রচারের জন্য, বিশেষত উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ ভারতের সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলগুলিতে মন্ত্রকের বিভিন্ন উদ্যোগের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে আগরতলার ইকফাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিপ্লব হালদার বলেন, কমিউনিটি রেডিও অনেকের কাছে একটি অপরিচিত ধারণা হিসাবে রয়ে গেছে৷ তবে এর মাধ্যমে স্থানীয় কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরতে এবং সমাজের নির্দিষ্ট সমস্যাগুলির সমাধান করে সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে। ডাঃ হালদার আগরতলায় ইকফাই ক্যাম্পাসে সিআরএস স্থাপনের বিষয়েও গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে মিঃ অমিত দ্বিবেদী কমিউনিটি রেডিওর ধারণা, নীতি নির্দেশিকা এবং কমিউনিটি রেডিও প্রজেক্ট স্কিম  এর ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন। পরে অংশগ্রহণকারীদের জন্য এমআইবি এবং সিইএমসিএ কর্তৃক নির্মিত ভারতে কমিউনিটি রেডিও আন্দোলনের উপর তথ্যচিত্রের একটি প্রদর্শনী তুলে ধরা হয়; এতে সারা দেশে সিআর এর বৃদ্ধি এবং প্রভাবের একটি বিস্তৃত প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়৷

অনুষ্ঠানে দেবঞ্জনা দেববর্মণ, মহিপাল সিং রাওয়াত, ড. নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়, পূজা ও মুরাদা, ড. সঙ্গীতা কাকোটি এবং স্বপ্নালী ভুঁইয়া সহ অনেকে বিভিন্ন কমিউনিটি রেডিও স্টেশন পরিচালনার বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেন। তাদের আলোচনায় কনটেন্ট তৈরি, কমিউনিটির সম্পৃক্ততা এবং সিআর উদ্যোগের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের ওপর আলোকপাত করা হয়।

অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ এই সেশনে আলোচনার পাশাপাশি, বাঁশের হস্তশিল্পের স্থানীয় কারিগর এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রচারকারী সংস্থা ইয়োরমুং সম্মেলন স্থলের পাশে একটি স্টল খুলেছে। এই স্টলটি ত্রিপুরার সমৃদ্ধ বাঁশের হস্তশিল্প সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে, যা কর্মশালায় স্থানীয় সাংস্কৃতিক মাত্রাকে যুক্ত করেছে৷

স্থানীয় কমিউনিটি রেডিও স্টেশন ‘ফ্রেন্ডস সিআর’ এর প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যসূচীর শেষ হয়। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা কমিউনিটি রেডিও স্টেশনের পরিচালনা এবং সমাজে এর প্রভাব সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ লাভ করেন ।  স্থানীয় সমাজের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসেবে কমিউনিটি রেডিওকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে অংশগ্রহণকারীদের আরও প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পন্ন করে তোলার জন্য আগামীকালও এই কর্মশালা চলবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *