আগরতলা, ২১ আগস্ট: ত্রিপুরায় টানা বৃষ্টিপাতে রাজ্যের একাধিক জায়গায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে ৮২টি বাড়ি সম্পূর্ণ, ৩১১টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ৬৩৩টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টানা বর্ষণের জেরে ভূমি ধ্বসে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দুইজন আহত হয়েছেন। এদিকে রাজ্যের নদীগুলোর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। প্রশাসনের তরফে ক্ষতিপূরণের সমীক্ষা করা হচ্ছে। রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের রিপোর্টে এমনটাই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের রিপোর্টে জানা গেছে, ভারী বর্ষণে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ২৬টি অস্থায়ী শিবির খোলা হয়েছে। যার মধ্যে এখনো পর্যন্ত ১৯৮৮টি পরিবারের ৭৫৪৯ জন সদস্য রয়েছেন। তাছারা, জিরানিয়া ব্লকে ১টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ৪টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তেমনি, উত্তর ত্রিপুরা জেলার অধীন ধর্মনগরে ১১০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৮টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। যার মধ্যে ৩৭৯ জন পরিবারের সদস্য রয়েছেন। তাছারা, কাঞ্চনপুরে ধ্বস পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে প্রসাশনের তরফ থেকে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে।
তাছাড়া, ঊনকোটি জেলার অধীন কৈলাসহর এবং কুমারঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৈলাসহরে ৯টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ১১টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি, ২২০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ১২টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। এদিকে, কুমারঘাটে টানা বৃষ্টিপাতে ডিএম কলোনি ও কুমারঘাট টিকে পাড়ায় ধ্বস পড়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে প্রসাশনের তরফ থেকে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি, ৪৪২৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৩৬টি ত্রাণ শিবির খুলেছে।
তেমনি, খোয়াই জেলায় তেলিয়ামুড়া মহকুমায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টানা বর্ষণের জেরে ভূমি ধ্বসে চন্দ্র কুমার দের্ববমন (৪৫) নামে একজন আহত হয়েছেন। ১৭৮০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৩৬টি ত্রাণ শিবির খুলেছে।
রিপোর্টে আরো জানা গিয়েছে, টানা চারদিনের বৃষ্টিতে ধলাই জেলার কমলপুর, আমবাসা, লংতরাই ভ্যালী এবং গন্ডাছড়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমলপুরে ০৩টি বাড়ি সম্পূর্ণ, ১৫৭টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ২৫৪টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া, কমলপুরে ১৬৬৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ১৩টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। তাছাড়া, আমবাসা ২১টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ১টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেমনি,
লংতরাই ভ্যালী ১৫১টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ৩৮টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩২৯ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ১৫টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। তেমনি, গন্ডাছড়ায় ১২টি বাড়ি সম্পূর্ণ, ২৯টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ১২৪টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গন্ডছড়ায় ৩৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৪টি ত্রাণ শিবির খুলেছে।
রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে, সিপাহীজলা জেলার বিশালগড়, জম্পুইজলা এবং সোনামুড়ার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশালগড় ৯টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ১০ বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯১ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ৩টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। তেমনি, জম্পুইজলায় ৫টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ১০ বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া, সোনামুড়া ১৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ২টি ত্রাণ শিবির খুলেছে।
রিপোর্টে আরো জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়া মহকুমা, সাব্রুম এবং শান্তিরবাজারে রাস্তায় বড় ধ্বস পরে। প্রচন্ড বৃষ্টির জেরে গাছ রাস্তায় পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ওই সব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সাথে সাথে প্রশাসনের তরফ থেকে এলাকাবাসীদের উদ্ধার করে সাব্রুমের ১৭টি ত্রান শিবিরে পৌঁছানো হয়েছে। যার মধ্যে ১৬৮টি পরিবারের মোট ৮৫৯জন সদস্য রয়েছেন। তেমনি, শান্তিরবাজারে ১২৪টি পরিবারের জন্য ৬টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। যার মধ্যে, ৬২৯ জন পরিবারের সদস্য রয়েছেন।
তেমনি, গোমতী জেলায় অধীন উদয়পুর, করবুক এবং অমরপুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করবুকে ধ্বস পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। উদয়পুরে ৩৭টি ত্রান শিবিরে খোলা হয়েছে। যার মধ্যে ৯৯৬টি পরিবারের মোট ৩৩৮৩ জন সদস্য রয়েছেন। তেমনি, অমরপুরে ২৭টি ত্রান শিবিরে খোলা হয়েছে। যার মধ্যে ৪৯৬টি পরিবারের মোট ১৯০৮ জন সদস্য রয়েছেন।