প্রকৃতির রুদ্র রূপে ত্রিপুরায় ত্রাহি রব, টানা বর্ষণের জেরে ভূমি ধ্বসে এখন পর্যন্ত শিশু সহ ৭ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ দুই, ক্ষয়ক্ষতি প্রচুর, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি প্রশাসন, দাবি রাজস্ব সচিবের

আগরতলা, ২০ আগস্ট : প্রকৃতির রুদ্র রূপে ত্রিপুরায় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। টানা বর্ষণের জেরে ভূমি ধ্বসে এখন পর্যন্ত শিশু সহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে হাওড়া, ধলাই, মুহুরী এবং খোয়াই নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ফলে, দক্ষিণ, গোমতী এবং খোয়াই জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আজ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব দফতরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে গভীর চিন্তা প্রকাশ করে বলেছেন, রাজ্য বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে, প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সমস্ত চেষ্টা চালিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক(ডা.) মানিক সাহা বর্তমানে দিল্লি থেকে রাজ্যের পরিস্থিতির খোঁজ খবর রাখছেন। দিল্লি থেকে ফিরে তিনি সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করবেন। 

এদিন ব্রিজেশ পান্ডে বলেন, গত ৪৮ ঘন্টায় অবিরাম বৃষ্টির কারণে ত্রিপুরায় নদীগুলির জলস্তর উল্লেখযোগ্যভাবে স্ফীত হয়েছে। ফলে অনেক এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় বাগাফা (৩৭৫.৮ এমএম), বিলোনিয়া (৩২৪.৪ এমএম) এবং গোমতী জেলায় অমরপুরে (৩০৭.১ এমএম) অতি ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে দক্ষিণ ত্রিপুরা ও গোমতী জেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, হাওড়া, ধলাই, মুহুরি ও খোয়াই নদী বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাথে তিনি যোগ করেন, নয়াদিল্লি থেকে নিয়মিত বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আজ সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি থেকে ফিরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করবেন।

এদিন তিনি জানান, টানা বর্ষণের জেরে জেলা প্রশাসন রাজ্যে ৫৬০৭টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট ১৮৩টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। তার মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ২৪টি ত্রাণ শিবির, গোমতি জেলায় ৬৮টি ত্রাণ শিবির, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ৩০টি ত্রাণ শিবির এবং খোয়াই জেলায় ৩৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। বাকি চার জেলায় বিশ্রাম শিবির খোলা হয়েছে।

তাঁর দাবি, জেলা ও মহকুমা প্রশাসন এই ত্রাণ শিবিরগুলিতে খাদ্য, পানীয় জল, চিকিৎসা সহ প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি জেলা স্তরে সংশ্লিষ্ট জেলা শাসক এবং রাজ্য স্তরে সচিব এবং মুখ্য সচিব দ্বারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সাথে টিনি যোগ করেন, সমস্ত বিডিও, জলসম্পদ, বিদ্যুৎ, পূর্ত দফতর, বন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীগণ এবং আধাসামরিক বাহিনী থেকে মহকুমা শাসকগণ বন্যার প্রভাব প্রশমিত করতে এবং ত্রাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবরগুলিকে উদ্ধারের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।

তিনি জানান, ভারী ও অতি ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক এলাকায় ভূমিধস হয়েছে। অনেক জায়গায় গাছ পড়ে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে উদ্ধার কার্য দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, ঘরবাড়ি ও গবাদিপশুর ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ফলে, ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন শুরু হয়েছে এবং শীঘ্রই তা সম্পন্ন হবে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত ভূমিধ্বসে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ৫ জন, খোয়াই এবং গোমতী জেলায় ১ জন করে প্রকৃতির দুর্যোগের শিকার হয়েছেন। এছাড়া, গোমতি ও খোয়াই জেলায় একজন করে নিখোঁজ রয়েছে।

তিনি বলেন, এসডিআরএফ (টিএসআর), এনডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার্স, আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবক, ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস, ফরেস্ট, টিএসইসিএল, পিডব্লিউডি (ডব্লিউআর), পিডব্লিউডি (আরএন্ডবি), কৃষি এবং অন্যান্য লাইন বিভাগের ২০০টিরও বেশি দল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয়েছে এবং স্থানীয় চাহিদা ও বন্যা পরিস্থিতি অনুযায়ী ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।

তাঁর কথায়, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বর্ষা মরসুমের প্রভাবে আগামী দুই দিন ত্রিপুরার সমস্ত জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হবে। দক্ষিণ ত্রিপুরার জন্য লাল এবং রাজ্যের বাকি জেলার জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে। তাঁর দাবি, টানা বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি কঠিন হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি জনগণকে উদ্বিগ্ন না হয়ে ধৈর্য ধরতে পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ প্রশাসন সবার সক্রিয় সহায়তায় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *