(Update)অশান্তি ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের কোন অবস্থায় রেহাই দেওয়া হবে না, গন্ডাতুইসায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা ও মহকুমার সার্বিক উন্নয়নে ২৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ৪ আগস্ট: গন্ডাতুইসায় সাম্প্রতিক অনভিপ্রেত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে রয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে যা যা সহায়তা প্রদানের সেটা নিশ্চিত করা হবে। অনভিপ্রেত ঘটনায় নিহত পরমেশ্বর রিয়াংয়ের পরিবারকে মোট ১০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করা হবে। আক্রান্ত পরিবারগুলিকে মোট ৩ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি গন্ডাতুইসা মহকুমার সার্বিক উন্নয়নে ২৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অশান্তি সৃষ্টিকারী এবং আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের কোন অবস্থায় রেহাই দেওয়া হবে না। 

রবিবার ধলাই জেলার গন্ডাতুইসা মহকুমায় উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করে এই ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এদিন গন্ডাতুইসা সফরে গিয়ে নারায়ণপুর বাজার, ৩৩ কেভি এলাকা, উদ্বাস্তু শিবির সহ একাধিক জায়গা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে মৃত পরমেশ্বর রিয়াংয়ের জগবন্ধু পাড়াস্থিত বাড়িতে গিয়ে তার বাবা, মা ও ভাই বোনদের সঙ্গে কথা বলেন। এই অনভিপ্রেত ঘটনাটি নিয়ে মৃত যুবকের পরিজনদের সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার সবসময় তাদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। 

পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা ডাকবাংলোয় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এবিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এবং গন্ডাতুইসা মহকুমার সামগ্রিক উন্নয়নে একগুচ্ছ ঘোষণা দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৭ জুলাই আনন্দ মেলাকে কেন্দ্র করে একটি অনভিপ্রেত ঘটনায় পরমেশ্বর রিয়াং নামে এক যুবক আহত হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জিবি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জুলাই তার মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময় এই ঘটনাকে ঘিরে রাতের বেলায় অনেক বাড়িঘর আক্রান্ত হয়। উদ্বাস্তু হতে হয় অনেক পরিবারকে। তাদের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়। পরমেশ্বরের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। গন্ডাতুইসার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন সার্বিক নজর রেখেছিল। এনিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার জেরে ক্ষতিগ্রস্তদের কিভাবে সহায়তা দেওয়া যায় সেনিয়ে প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে। 

সংবাদ মাধ্যমকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৩৩ কেভি ও ৩০ কার্ড এলাকায় স্থায়ী নিরাপত্তা শিবিরের বন্দোবস্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো কঠোর করা হবে। এম আর দাস পাড়া ও রামনগরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মৃত পরমেশ্বর রিয়াংয়ের পরিবারকে আগে ৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। আরো চার লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। যেসব পরিবারগুলির ঘরবাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এমন ১০১টি পরিবারকে আগে ৯৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের আরো ২ লাখ ৫ হাজার টাকা সহ সবমিলিয়ে ৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত আরো ১৩টি পরিবারকে আগে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের আরো ১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা সহ মোট দেড় লাখ টাকা প্রদান করা হবে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে এমন ৩১টি পরিবারের মধ্যে আগে ১৮টি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের আরো ২৫ হাজার টাকা সহ মোট ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া ৫টি পরিবারকে আগে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের আরো ২০ হাজার টাকা সহ মোট ৪০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এভাবে আরো ৩টি পরিবারকে আগে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন আরো ১৫ হাজার টাকা সহ মোট ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত আরো ৩টি পরিবারকে এরআগে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তাদের আরো ১০ হাজার টাকা সহ মোট ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। আরো ২টি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে পরিবার পিছু মোট ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ১৪৫টি পরিবারকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আরো ২ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে মোট ৩ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। 

তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো জানান, গন্ডাতুইসার নারায়ণপুর মার্কেটের (৩০টি মার্কেট স্টল) উন্নয়নে ১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। দশরাম চৌধুরী সুপার মার্কেটের পরিকাঠামো উন্নয়নে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গন্ডাতুইসা বাজার এলাকায় পেভার ব্লক ইন্টারনাল রোড, স্ট্রিট লাইট, পয়:প্রণালী ব্যবস্থা সহ ইত্যাদি পরিকাঠামো উন্নয়নে মোট ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। গন্ডাতুইসা – আমবাসা সড়কের উন্নয়নে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। গন্ডাতুইসা মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। হাতিমাথা – দলপতি সড়ক (৯ কিমি) উন্নয়নে বরাদ্দ করা হয়েছে ১২ কোটি টাকা। রঞ্জিতপাড়া থেকে বুধুজয় পাড়া (৫ কিমি) সড়ক উন্নয়নে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। জমাতিয়া পাড়া সড়কের (৩ কিমি) উন্নয়নে ৭.৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। গন্ডাতুইসা দ্বাদশ স্কুলে সিন্থেটিক টার্ফ গ্রাউন্ড তৈরি করতে ৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ডম্বুর জলাশয়ে মৎস্য ক্ষেত্রে বিকাশে ৫ কোটি টাকা এবং ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ড্রাগস রিহ্যাব সেন্টার গড়ে তুলতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গন্ডাতুইসায় স্কুলের পরিকাঠামো (স্মার্ট ক্লাস, ফার্নিচার ইত্যাদি) উন্নয়নে ৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। আম উৎপাদনকারীদের জন্য ১৫ মেট্রিক টন বিশিষ্ট সোলার পাওয়ার মাইক্রো কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। মাছ সংরক্ষনের জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কোল্ড স্টোরেজ ও কোল্ড চেম্বার নির্মাণ করা হবে। ইনডোর ব্যাডমিন্টন কোর্ট নির্মানে ২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ১০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উন্নয়নে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া গন্ডাতুইসা বাজার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। গন্ডাতুইসার উন্নয়নে মোট ২৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা আর্থিক বরাদ্দ করা হয়েছে। পুনর্বাসন সহায়তা হিসেবে মোট ৩ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এই দুই খাতে ব্যয় হবে মোট ২৪২ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোন রাজ্য বা দেশ শান্তি ছাড়া এগিয়ে যেতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস ও সবকা বিশ্বাসের মন্ত্র নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। কোন অবস্থায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি, অশান্তি সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের রেহাই দেওয়া হবে না। আইন আইনের পথে চলবে। সবাইকে মিলে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। 

মুখ্যমন্ত্রীর পরিদর্শন কালে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, গোয়েন্দা পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ ধ্যানকর, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, পূর্ত দপ্তরের মুখ্য বাস্তুকার রাজীব দেববর্মা, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শুভাশিস দাস, ধলাই জেলার জেলাশাসক সাজু ওয়াহিদ এ, পুলিশ সুপার অবিনাশ রাই সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *