নয়াদিল্লি, ২ আগস্ট : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি শুক্রবার ৮টি গুরুত্বপূর্ণ ‘ন্যাশনাল হাইস্পিড করিডোর প্রকল্পে’র অনুমোদন দিয়েছে| এই সড়কগুলোর মত দৈর্ঘ্য হবে ৯৩৬ কিলোমিটার এবং এর জন্য ব্যয় হবে ৫০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা| এই প্রকল্পগুলো রূপায়ণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটি ৪২ লক্ষ শ্রমদিবসের সৃষ্টি করবে| যানজট কমিয়ে আনার পাশাপাশি দেশজুড়ে সংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই প্রকল্প বিশেষভাবে সহায়তা করবে|
প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে ছয় লেনের আগ্রা-গোয়ালিয়র জাতীয় হাই-স্পিড করিডোর| যে করিডোরের ফলে আগ্রা এবং গোয়ালিয়রের মধ্যে ভ্রমণের সময় পঞ্চাশ শতাংশ হ্রাস পাবে| ট্রাফিক ক্ষমতাও অন্তত দুই গুণের বেশি বাড়বে| এই করিডোরের দৈর্ঘ্য ৮৮ কিলোমিটার|
এরপর আছে ৪ লেনের খড়গপুর-মোরগ্রাম জাতীয় উচ্চ গতির করিডোর| পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনতে এই করিডোর বিশেষ ভূমিকা নেবে| ২৩১ কিলোমিটার এই করিডোর হাইব্রিড অ্যানুইটি মোডে (এইচএএম) গড়ে তোলা হবে, যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০,২৪৭ কোটি টাকা| করিডোরটি খড়গপুর এবং মোরগ্রামের মধ্যে যান চলাচলের ক্ষমতা প্রায় ৫ গুণ বাড়াবে| তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ইত্যাদির মতো রাজ্যগুলি ট্রাফিকের সঙ্গে একটা সুদক্ষ সংযোগ তৈরি হবে|
প্রকল্পের মধ্যে আছে ছয় লেনের থারাড়-ডিসা-মেহসানা-আহমেদাবাদ জাতীয় হাই-স্পিড করিডোর| এর জন্য ব্যয় হবে ১০,৫৩৪ কোটি টাকা| ২১৪ কলোমিটার এই করিডোর অমৃতসর-জামনগর করিডর এবং দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে সংযোগ প্রদান করবে| যার ফলে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের শিল্প অঞ্চল থেকে মহারাষ্ট্রের প্রধান বন্দরগুলিতে পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রদান করবে।
এরপর আছে চার লেনের অযোধ্যা রিং রোড| ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই করিডোর তৈরীরে ব্যয় হবে ৩,৯৩৫ কোটি টাকা| এই রিং রোড লখনউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অযোধ্যা বিমানবন্দর এবং শহরের প্রধান রেল স্টেশনগুলি থেকে আগত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রদান করবে।
পঞ্চম স্থানে আছে রায়পুর-রাঁচি জাতীয় উচ্চগতির করিডোরের পাথালগাঁও ও গুমলার মধ্যে চার লেনের অংশ| এর ফলে গুমলা, লোহরদগা, রায়গড়, কোরবা এবং ধানবাদের খনি এলাকা এবং রায়পুর, দুর্গ, কোরবা, বিলাসপুর, বোকারো এবং ধানবাদের শিল্প ও উৎপাদন অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।
প্রকল্পে আছে ৬ লেনের কানপুর রিং রোড| ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোড তৈরি হলে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য লজিস্টিক দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
তাছাড়া আছে চার লেনের উত্তর গুয়াহাটি বাইপাস এবং বিদ্যমান গুয়াহাটি বাইপাসের প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প| ১২১ কিলোমিটার দীর্ঘ গুয়াহাটি রিং রোডকে বিল্ড অপারেট টোল (বিওটি) পদ্ধতিতে গড়ে তোলা হবে। গুয়াহাটি রিং রোড দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের প্রবেশদ্বার জাতীয় মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রদান করবে। রিং রোডটি গুয়াহাটির আশেপাশের প্রধান জাতীয় মহাসড়কগুলিতে যানজটকে কমিয়ে আনবে| যা এই অঞ্চলের প্রধান শহরগুলিকে যেমন, শিলিগুড়ি, শিলচর, শিলং, জোড়হাট, তেজপুর, জোগিগোফা এবং বারপেটাকে সংযুক্ত করবে|
আর আছে, পুনের কাছে ৮ লেনের এলিভেটেড নাসিক ফাটা-খেড করিডোর| যে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আশেপাশের শিল্প কেন্দ্রগুলি থেকে আসা-যাওয়ার জন্য নির্বিঘ্ন উচ্চ-গতির সংযোগ প্রদান করবে। পুনে এবং নাসিকের মধ্যে করিডোরটি পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড়ের চারপাশে গুরুতর যানজটও হ্রাস করবে।
পরিকাঠামো উন্নয়ন একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত্তি এবং তার নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার স্থানীয় যানজট নিরসনে পূর্ববর্তী প্রকল্প-ভিত্তিক উন্নয়ন পদ্ধতির তুলনায় ধারাবাহিক মান, ব্যবহারকারীর সুবিধা এবং লজিস্টিক দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য একটি করিডোর-ভিত্তিক মহাসড়ক পরিকাঠামো উন্নয়ন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।