ছত্তিশগড়ের উন্নয়নে কাজ করবেন, বলেছেন নবনিযুক্ত রাজ্যপালরায়পুর, ৩১ জুলাই (হি.স.) : ছত্তিশগড়ের রাজ্যপাল পদে শপথ নিলেন অসমের প্রাক্তন সাংসদ, বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা রমেন ডেকা। আজ বুধবার সকালে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে রায়পুরে অবস্থিত রাজভবনে ছত্তিশগড় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রমেশ সিনহা রমেন ডেকাকে পদ ও গোপনীয়তার শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন।
নতুন রাজ্যপালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্য বিশিষ্টদের সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই, বিধানসভার অধ্যক্ষ রমন সিং, রাজ্যের মন্ত্রীবর্গ, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এবং উচ্চপদস্থ আমলাবর্গ। নবনিযুক্ত রাজ্যপাল রমেন ডেকা বিশ্বভূষণ হরিচন্দনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন৷
এদিকে শপথগ্রহণের পর নতুন রাজ্যপাল রমেন ডেকা বলেছেন, ছত্তিশগড়ের রাজ্যপাল হতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত। বলেন, ছত্তিশগড় একটি উন্নয়নশীল রাজ্য হিসেবে এগিয়ে যাবে। এজন্য তিনি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই বলেছেন, ছত্তিশগড়ের নতুন রাজ্যপাল রমেন ডেকাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। অসমের সঙ্গে ছত্তিশগড়ের পুরনো সম্পর্ক। ছত্তিশগড়ের অসংখ্য মানুষ কয়েক দশক ধরে অসমের চা বাগানগুলিতে বসতি স্থাপন করেছেন। কয়েক প্রজন্ম কাটিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে অনেকে বিধায়ক এবং সাংসদও হয়েছেন। নবনিযুক্ত রাজ্যপাল ডেকার দিকনির্দেশনায় ছত্তিশগড় দ্রুত অগ্রগতি লাভ করবে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণ নেতা তথা পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ পঞ্চদশ এবং ষোড়শ লোকসভায় অসমের মঙ্গলদৈ-এর সাংসদ রমেন ডেকাকে গত শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ছত্তিশগড়ের নয়া রাজ্যপাল পদে নিয়োগ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
১৯৫৪ সালের ১ মার্চ কামরূপ জেলার অন্তর্গত শুয়ালকুচিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রমেন ডেকা। তাঁর বাবা সুরেন্দ্রনাথ ডেকা এবং চম্পাবতী ডেকা। মা ও বাবা, উভয়েই প্রয়াত। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রাগজ্যোতিষ কলেজ থেকে দর্শন ও অর্থনীতিতে স্নাতক রমেন ডেকা দীর্ঘ মেয়াদে ভারতীয় রাজনীতিতে বিচরণ করেছেন তিনি।
রমেন ডেকা অসম প্রদেশ বিজেপির সভাপতির পদও দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। প্রবীণ পোড়খাওয়া রাজনীতিক রমেন ডেকা ১৯৭৪-৭৫ সালে গৌহাটি ইউনিভার্সিটির কোর্ট মেম্বার ছিলেন। এর পর ১৯৭৭ সালে অসম প্রদেশ জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োজিত হন তিনি।
এর পর যথাক্রমে ১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ২০০৫ সালে প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্র, প্রদেশ উপ-সভাপতি, উত্তরপূর্ব সমন্বয় পরিষদ এবং জাতীয় পরিষদের সদস্য, জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি এবং মেঘালয়ের প্রভারি ছিলেন তিনি।
২০০৬ সালে দলের অসম প্রদেশ সভাপতি, ২০০৯ সালে পঞ্চদশ লোকসভার সদস্য নির্বাচিত, ২০০৯ সালের ৩১ আগস্ট থেকে ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য।
২০১০ সালের ১ মে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সদস্য, ভারত-ভুটান সংসদীয় বন্ধুত্ব গ্রুপ সদস্য, অধস্তন আইন সংক্রান্ত কমিটি, সংসদীয় সদস্যের বৈঠকে সদস্যদের অনুপস্থিতি সংক্রান্ত কমিটির সদস্য, ডোনার এবং খনি মন্ত্রালয়ের কনস্যুলেটিভ কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োজিত হয়েছিলেন ডেকা।
এছাড়া একাধারে তিনি ২০১৪ সালের ১৬-তম লোকসভায় দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় নির্বাচিত সাংসদ। ওই সালের ৯ জুন থেকে লোকসভায় চেয়ারপারসনের প্যানেল সদস্য ছিলেন।
২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট থেকে এস্টিমেট সংক্রান্ত কমিটির সদস্য, পরামর্শক কমিটির সদস্য, বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রক এবং প্রবাসী ভারতীয় বিষয়ক মন্ত্রকের সদস্য, ‘প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনা’-র অধীন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, ভারত-চিন সংসদীয় বন্ধুত্ব গ্রুপের সদস্য, চা বোর্ডের সদস্য হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন রমেন।
এছাড়া ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে জেনারেল পারপাস কমিটির সদস্য, ওই সালেরই ৩ জুলাই থেকে অতিরিক্তভাবে এস্টিমেট কমিটির সাব-কমিটি-২-এর সদস্যপদে দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার তকে পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়।
২০২১ সালের ২০ আগস্ট অসমে হিমন্তবিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন সরকার তাঁকে আসাম স্টেট ইনোভেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন আয়োগ (এসআইটিএ)-এর ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করেছিল।

