আগরতলা, ২৯ জুলাই: আবারও গরীব দুঃস্থ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নজির স্থাপন করলেন মন্ত্রী টিংকু রায়। কৈলাসহরের দেবস্থল এলাকায় অসহায় দু:স্থ ৬৫ বছরের বৃদ্ধা মা শেষবারের মতো তার মৃত ছেলের মুখ দেখেন এবং মৃতদেহকে জড়িয়ে ধরিয়ে কাঁদলেন।
ঘটনার বিবরণে জানা গিয়েছে, কৈলাসহরের দেওরাছড়া এডিসি ভিলেজের চার নং ওয়ার্ডের দেবস্থল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ৭০ বছরের বীরবল তাঁতী এবং তার স্ত্রী ৬৫৷ বছরের গীতা তাঁতী। ধর্মে বিশ্বাসী পেশাগতভাবে তাঁরা দুজনই বৈষ্ণব এবং বৈষ্ণবী। দেবস্থল এলাকায় তাদের নিজ বাড়িতে জগন্নাথ মহাপ্রভুর একটি মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরে বিগত ত্রিশ বছর ধরে তাঁরা দুজন নিয়মিত ভাবে পূজা পাঠ করে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের দান দক্ষীনায় খুব কষ্ট করে বিগত ত্রিশ বছর ধরে এই মন্দির পরিচালনা করে আসছেন গীতা তাঁতী এবং বীরবল তাঁতী।
এ বিষয়ে গীতা দেবী জানিয়েছেন, তেত্রিশ বছরের নেপাল তাঁতী নামে তার এক ছেলে ছিল। অভাবের তাড়নায় নেপাল তাঁতী বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিগত এক বছর ধরে ব্যাঙ্গালরুর এক বেসরকারি সংস্থার সিকিউরিটি গার্ডে কাজ করতেন এবং নেপাল ব্যাঙ্গালরুতে একাই থাকতো। বিগত কিছুদিন পূর্বে নেপাল ব্যাঙ্গালরুতে অসুস্থ হয়ে যায়। এবং শারিরীক অবস্থা চূড়ান্ত খারাপ হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নেপাল ব্যাঙ্গালরুর এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যায়। অসুস্থতার খবর এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির খবর নেপাল নিজেই বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালে চার দিন থাকার পর নেপালের মৃত্যু হয়। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নেপালের মৃত্যুর খবর নেপালের মা গীতা তাঁতীকে ফোন করে জানায়। কিন্তু কি আর করবে গীতা দেবী ভেবে পাচ্ছিলেন না। কারন, গীতা দেবীর পারিবারিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তারা রেলের টিকিট ক্রয় করে ব্যাঙ্গালরুতে গিয়ে ছেলের মৃতদেহ দেখার সেই সামর্থ্য নেই। মৃত ছেলের মুখটা শেষবারের মতো দেখার জন্য লাগাতার দুই দিন গীতা দেবী বাড়িতে বসে কাঁদছিলেন। কোনো উপায় না পেয়ে স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী টিংকু রায়ের কাছে গীতা দেবী নিজেই ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি মন্ত্রীর কাছে মৃতদেহটা বাড়িতে আনার অনুরোধ করেন। এরপর মন্ত্রী টিংকু রায় নিজেই ব্যাঙ্গালরুট বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করেন।
পরবর্তী সময়ে মন্ত্রী টিংকু রায়কে ব্যাঙ্গালরুর বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় যে, মৃত নেপাল তাঁতীর চিকিৎসা বাবদ এক লক্ষ সাত হাজার টাকা হাসপাতালে বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়া টাকা প্রদান না করা হলে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ হস্তান্তর করবে না। পরবর্তী সময়ে বকেয়া এক লক্ষ সাত হাজার টাকা মন্ত্রী টিংকু রায় নিজেই ব্যাঙ্গালরুতে বেসরকারি হাসপাতালে টাকা প্রদান করেন। এবং মন্ত্রী টিংকু রায় নিজের আরও টাকা খরচ করে মৃতদেহ ব্যাংগালোর থেকে বিমানে করে আগরতলায় আনেন। এবং আগরতলা বিমানবন্দর থেকে গাড়ি দিয়ে কৈলাসহরের দেবস্থল এলাকায় গীতা দেবীর নিজ বাড়িতে মৃতদেহ পৌঁছে দেন। একথা মন্ত্রী টিংকু রায় নিজেই গীতা দেবীর বাড়িতে বসে মৃতদেহ আনার পর জানান। পাশাপাশি মন্ত্রী টিংকু রায় একথাও জানান যে, এই কাজ করে কতটুকু ভালো করেছেন তা উনি জানেন না। কারণ, গীতা দেবীর জীবন্ত ছেলেকে ব্যাংগালোর থেকে এনে দিতে পারেন নি। তবে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন নেপালের মৃতদেহ যে করেই হোক গ্রামে পৌঁছে দেওয়া। তবে, রাজ্যের যুবক যুবতীদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, বহিঃরাজ্যে কাজে যেতে হলে যে সংস্থার অধীনে কাজে যাবেন সেই সংস্থা সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে যাবার জন্য। কারন, নেপাল তাঁতী যদি ভালো সংস্থার অধীনে কাজ করতো তাহলে চিকিৎসার জন্য নেপালের মৃত্যু হত না এবং মৃত্যু হলেও মৃত্যুর পর মৃতদেহ সংস্থার পক্ষ থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিত
নেপালের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছা মাত্রই বাড়িতে ভিড় জমে যায় এবং গোটা গ্রামে কান্না শুরু হয়ে যায়। নেপাল দেবস্থল গ্রামের সবার কাছে খুবই প্রিয় ছিলো। নেপালের মৃত্যু হয়েছে সেটা কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি এবং ব্যাংগালোরে নেপাল তাঁতীর মৃত্যুর পর নেপালের মৃতদেহ গ্রামবাসীরা দেখতে পারবে সেটা দেবস্থল গ্রামের মানুষের কাছে অলৌকিক স্বপ্নের মতো ছিলো। অন্যদিকে, অসহায় নিরীহ দুঃস্থ গরীব ৬৫বছরের গীতা তাঁতী নিজেই জানান যে, উনি ভেবেছিলেন নিজের ছেলের মৃতদেহটা এবং ছেলের মুখটা শেষবারের মতো আর কোনো দিন দেখতে পারবেন না। এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী টিংকু রায়ের কল্যানে। এই কাজের জন্য গীতা দেবী মন্ত্রী টিংকু রায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং মন্ত্রীকে ভগবান বলেও সম্বোধন করেন গীতা তাঁতী
তারপর নেপালের মৃতদেহ বাড়িতে এনে দেওয়ার পর মন্ত্রী টিংকু রায় মৃত নেপালের স্ত্রীর হাতে নগদ টাকা তোলে দেন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সহ সামাজিক কাজকর্ম করার জন্য। এছাড়াও গরীব দুঃস্থ অসহায় গীতা দেবীর পরিবারের পাশে দাঁড়ান মন্ত্রী টিংকু রায়। মৃত নেপাল তাঁতীর একমাত্র সাত বছরের মেয়ের বিনামূল্যে থাকা খাওয়া এবং পড়াশোনার জন্য হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন এবং আগামী এক মাসের মধ্যে নেপালের স্ত্রীর বিধবা ভাতা ও মৃত নেপাল তাঁতীর মা ৬৫ব ছরের গীতা তাঁতীর বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেন মন্ত্রী টিংকু রায়। এভাবে অচেনা অসহায় নিরীহ দুঃস্থ গরীব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযোগিতা করার খবর ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে চাউর হতেই গোটা দেবস্থল গ্রাম সহ কৈলাসহরের মানুষ সাধুবাদ জানাচ্ছেন মন্ত্রী টিংকু রায়কে।