শিলিগুড়ি, ১৬ জুলাই (হি.স.) : জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা জেলায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় শহীদ হয়েছেন বাংলার সেনা আধিকারিক ব্রিজেশ থাপা। ব্রিজেশের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আরও এক বীর সেনানিকে হারালো বঙ্গভূমি। ব্রিজেশ দার্জিলিং-এর বাসিন্দা। দার্জিলিংয়ের লেবংয়ের বড়াগিঙ্গের বাসিন্দা ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা। মাত্র ২৭ বছর বয়সে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে শহীদ হলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া গোটা শৈলশহরে, বাকরুদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশ। ব্রিজেশের বলিদান ব্যথিত তাঁর গোটা পরিবার। ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপার বাবা, মা ও কাকা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ব্রিজেশের বাবা যিনি নিজেও সেনার উচ্চপদস্থ পদে কর্মরত ছিলেন, তিনি বলেছেন, “ছেলে দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়েছে, এ জন্য গর্ব হচ্ছে।” ব্রিজেশের মা নীলিমা থাপা এবং তাঁর কাকা যোগেশও বাকরুদ্ধ। ব্রিজেশের বাবা কর্নেল ভুবনেশ থাপা (অবসরপ্রাপ্ত) বলেছেন, “আমার ছেলে সবসময় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে থাকতে চেয়েছিল…প্রথম প্রয়াসেই সে সেনাবাহিনীর সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। আমি গর্বিত, সে দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। আমরা সারাজীবন তাঁকে মিস করব।”ব্রিজেশের মা নীলিমা থাপা বলেছেন, “সে খুব নম্র ও ভদ্র ছিল। সে সর্বদা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিল। আমি খুবই গর্বিত বোধ করছি, সে দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।” অশ্রুসিক্ত চোখে কাকা যোগেশ থাপা বলেছেন, “সোমবার রাতে ডোডায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আমরা তাঁর দেহ আসার জন্য অপেক্ষা করছি, তারপরে আমরা দার্জিলিং-এ যাব। তাঁর বাবা-মা দার্জিলিংয়ে থাকেন, সে ৫ বছর আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। সে আর্মি এলাকায় জন্মেছে এবং বড় হয়েছে। তাঁর বাবা সেনাবাহিনীতে একজন কর্নেল, আমরা আশা করছি আগামীকালের মধ্যে দেহ হস্তান্তর করা হবে। এটা বলা সহজ যে তিনি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, কিন্তু পরিবার হিসেবে আমরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি তা কখনই পূরণ করা যাবে না। আমরা জানি না কবে সরকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, আমাদের সৈন্যরা প্রতিদিন নিহত হচ্ছে।”পরিবার সূত্রে খবর, ১৭ জুলাই অর্থাৎ বুধবার ব্রিজেশের দেহ বিশেষ বিমানে শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হবে। এরপর তাঁকে বাগডোগরা সেনা ছাউনিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা জানানো হবে। সেখান থেকে তাঁর দেহ সড়কপথে লেবংয়ে তাঁর জন্মভূমিতে নিয়ে যাওয়া হবে। ব্রিজেশের বাবা কর্নেল ভুবনেশ থাপা বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ব্রিজেশের সেনার প্রতি খুব টান ছিল। নিজেকে সেইভাবেই তৈরি করেছিল। কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আক্ষেপ নেই। আমার সন্তান দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছে।’’জানা গিয়েছে, কর্নেল ভুবনেশ থাপা ২০১৪ সালে সেনা থেকে অবসর নেন। বর্তমানে তিনি দার্জিলিংয়ের লেবংয়েই এক্স সার্ভিসম্যান হেলথ সার্ভিস স্কিমে কর্মরত রয়েছেন। ব্রিজেশের বাড়িতে সদস্য বলতে বাবা ছাড়াও রয়েছেন মা নিলীমা থাপা ও দিদি নিকিতা থাপা। নিকিতা থাপা বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় সঙ্গীত নিয়ে পড়াশুনো করছেন। ভাইয়ের শহিদ হওয়ার খবর পেতেই তিনিও বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ব্রিজেশ থাপার জন্ম লেবংয়ে ৷ তিনি প্রাথমিক পড়াশুনো করেন দার্জিলিংয়ে ৷ তবে বাবার সেনায় অন্যত্র পোস্টিংয়ের কারণে ব্রিজেশ বাকি পড়াশুনো রাজ্যের বাইরে থেকেই সারেন। শেষে মুম্বই থেকে নিজের উচ্চশিক্ষা শেষ করেন তিনি। সেখানকার কলেজ থেকে বিটেক শেষ করে কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। ২০১৮ সালে তিনি ওই ডিফেন্স সার্ভিসের শর্ট সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় পাশ করেন ও ২০১৯ সালে সেনাতে যোগ দেন। ব্রিজেশ দু’বছর ১০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের মোতায়েন ছিলেন। এরপর তাঁকে এক্সট্রা রেজিমেন্টাল ডিউটির জন্য ভারতীয় সেনার বিশেষ বিভাগ ১৪৫ আর্মি এয়ার ডিফেন্সের অধীন জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা সেনা ছাউনিতে বদলি করা হয়। সেখানে ব্রিজেশ থাপা ‘এ’ কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন।
2024-07-16