আগরতলা, ১৩ জুলাই: এক জনজাতি যুবকের মৃত্যুগে গতকাল রাতে গন্ডাছড়া মহকুমা জুড়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। অউপজাতি অধ্যুষিত গ্রামবাসীদের বাড়িঘরে হামলা, মারধর, ভাঙচুর, লুটপাট এবং আগুন লাগিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতিরা। রাতেই আতঙ্কগ্রস্থ গ্রামবাসীরা জীবন বাঁচাতে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। আজ সকালে গ্রামবাসীরা সুরক্ষা ও সন্তানদের নিরাপত্তার দাবিতে গন্ডাছড়া থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে গোটা গন্ডাছড়া মহকুমাতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, গন্ডাছড়ার এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বলেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা এবিষয়ে সজাগ দৃষ্টি নিয়ে কাজ করছেন। রাতেই স্হানীয় কর্মীদের সাথে কথাবার্তা বলেন তিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন তিনি আরও বলেন, বিজেপি সরকারের একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই টিম গন্ডাছড়ায় যাবেন। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের পাশে থাকবে রাজ্য সরকার বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত কিছুদিন আগে গন্ডাছড়া মহকুমার লক্ষ্মীপুর এ.ডি.সি ভিলেজের ত্রিশ কার্ড এলাকার অন্তর্গত ডিগ্রী কলেজ লাগোয়া ত্রিপুরা ক্রিকেট এসোসিয়েশনের গন্ডাছড়া ক্রিকেট মাঠে আনন্দ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই মেলায় পরমেশ্বর রিয়াং আক্রান্ত হয়েছিলেন। মেলা প্রাঙ্গণে থাকা বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সংস্পর্শে এসে গুরুতর আহত হয়েছিল। পরবর্তীতে অগ্নি দমকলকর্মীরা গন্ডাছড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। কিন্তু গতকাল দুপুরে বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসা পরমেশ্বর রিয়াং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু মুখে পতিত হয়, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই গন্ডাছড়ার জনজাতি অংশের মানুষজনদের মধ্যে তোষের আগুন জ্বলতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যেই শান্ত গন্ডাছড়া অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির রূপ নেয়। গন্ডাছড়া মহকুমা সদর বাজার, নারায়ণপুর চৌমুহনি বাজার এবং গ্রামীন হার্ট হিসেবে পরিচিত মনোরঞ্জন দাসপাড়া বাজারটি’ও বন্ধ রাখা হয়। শুধু তাই নয়, মহকুমা ডিগ্রী কলেজ; গন্ডাছড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়; কবিগুরু স্মৃতি বিদ্যালয় সহ দুইটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের নাম ডেকেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে, দুপুর নাগাদ মহকুমা শাসকের পক্ষ থেকে বিএনএসএস ১৬৩ ধারা (অধুনা ১৪৪) জারি করা হয়েছিল। রাতে পরমেশ্বর রিয়াং-এর মৃতদেহ গন্ডাছড়াতে পৌঁছাতেই রণক্ষেত্রের রূপ নেয় গোটা মহকুমা। ধারাবাহিকভাবে অপজাতি অধ্যুষিত বাড়িঘর সহ দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। নির্বিচারে ভাঙচুর ও লুটপাটের রাজ শুরু হয়। আতঙ্কগ্রস্ত গ্রামবাসীরা আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে।
আজ সকালে বাঙালীরা পরিবারের সুরক্ষা ও সন্তানদের নিরাপত্তার দাবিতে গন্ডাছড়া থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে গোটা গন্ডাছড়া (গন্ডা তুইসা) মহকুমাতে।

