দুর্গাপুর, ২৯ জুন (হি. স.):ভোট মিটতেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে উঠল। কারখানায় রাশ কার দখলে থাকবে, তাই নিয়ে পানাগড় শিল্প তালুকের সার কারখানায় শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে। স্থানীয়দের কাজের দাবিকে সামনে রেখে পানাগড় ম্যাট্রিক্স সার কারখানায় গেট আটকে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন। শনিবার ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়াল ম্যাট্রিক্স গেট এলাকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামল বিশাল পুলিশ বাহিনী।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তৎকালীন রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম প্রস্তাবিত পানাগড় শিল্প তালুকের জমি অধিগ্রহন শুরু করে। চাকরি ও এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের আশায় সেচ্ছায় জমি দেয় আউশ গ্রাম-২ নং ব্লকের কোটা চন্ডীপুর, পোন্ডালি, সোঁয়াই ও কাঁকসা মৌজার চাষীরা। যদিও এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু বর্গাদার ও ক্ষেতমজুর ক্ষতিপুরন পায়নি বলে অভিযোগ। যার মধ্যে শিল্প তালুকে ম্যাট্রিক সংস্থা প্রায় ৬০০ একর জমি নিয়ে সার কারখানা নির্মান করে। গত ২০১৭ সালে সফল ভাবে ইউরিয়া উৎপাদন হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত সিবিএমের অভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকে ওইসময়। পরবর্তীকালে ২০২১ সালে পানাগড়ে ম্যাট্রিক্সের সার কারখানায় গেইলের পাইপ লাইন সংযোগে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়। কারখানাটিতে ৩ মিলি কিউসেক গ্যাস প্রয়োজন। লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে দৈনিক ৩৮৫০ টন উৎপাদন।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১১০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন হচ্ছে। দুদিন আগে বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি (ইন্ডাস্ট্রী ও কমার্স) –র প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে গেছেন। এছাড়াও, কারখানার দ্বীতিয় ইউনিট প্রতিস্থাপনের জন্য লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন মন্ত্রকের কাছে ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ওই ছাড়পত্র পাওয়া গেলে দ্বীতিয় ইউনিটের কাজ শুরু হবে। এবং তখন উৎপাদন দ্বীগুন করা সম্ভব হবে। যা পশ্চিমবঙ্গের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ন। কারন এরাজ্যে বছরে ১.৫ মেট্রিক টন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। দ্বীতিয় ইউনিট তৈরী হলে তার অনেকটাই ঘাটতি মিটবে। এদিকে তারমধ্যেই শনিবার কারখানার গেট আটকে বিক্ষোভ শুরু করে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। সংগঠনের আউশ গ্রাম ২ নং ব্লক সভাপতি ইন্দ্রজিত কোনার বলেন,” শ্রমিকদের দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৃদ্ধি হয় না। তার ওপর স্থানীয়রা কাজ পায় না। টাকার বিনিময়ে বহিরাগতদের কাজে ঢোকানো হচ্ছে। গতকাল কারখানায় এসেছিলাম, তখন শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বে থাকা স্বত্তেও দলের ব্লক সভাপতির দুই অনুগামী আমাকে হেনস্থা করে। কারখানায় ঢুকতে বাধা দেয়। অথচ স্থানীয়দের প্রতিদিন জবাবদিহি আমাকে করতে হয়। তাই স্থানীয়দের কাজের দাবি জানাতে এসেছিলাম।”
এদিন সকালে প্রায় শ’তিনেক তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের কর্মী সমর্থক কারখানার গেটের সামনে বিক্ষোভে বসে পড়ে। কারখানার শ্রমিকদের ঢুকতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। আর তাতেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ও ব্লক সভাপতির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। দুদিন আগেই কারখানায় চাঁদা তোলার ওপর কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও বছরখানেক ধরে আউশ গ্রাম -২ নং ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। কখনও সোশ্যাল সাইটে, কখনও দলের কর্মী বৈঠকে দুই গোষ্ঠীর কোন্দলে চরম বেকাদায় পড়েছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। এদিকে ঘটনাকে ঘিরে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বুদবুদ থানার পুলিশ। স্থানীয় বিজেপি নেতা রমন শর্মা বলেন,” আজকে যেসব তৃণমূল নেতারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, জমি অধিগ্রহনের সময় এরাই বিরোধিতা করেছিল। অর্থাৎ তৃণমূল এরাজ্যে সিন্ডিকেট কাটমানি, তোলাবাজি ছাড়া কিছুই চায়নি। আজও তাদের কাটমানি নিয়ে কাজে ঢোকানোর বাসনাটা সামনে চলে এসেছে।” যদিও তৃণমূলের আউশ গ্রাম -২ নং ব্লক সভাপতি সেখ আব্দুল লালন বলেন,” কারখানায় আমার কোন ভুমিকা নেই। নিজেকে দলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি দাবি করলেও নির্বাচনে সংগঠনের কাজে তাদের টিকি পাওয়া যায় না। দলের জন্য কোন ভুমিকা তাদের ছিল না। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই এলাকায় সিপিএমের ভোট বৃদ্ধি কিভাবে হয়েছে, সেটাও তাদের ভুমিকায় রহস্য আছে। আজকে যখন কারখানায় গেটে দাবি করেছেন, তখন রহস্যটা জানতে হবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও গোটা বিষয়টি জানানো হবে।” অন্যদিকে ম্যাট্রিক্স সার কারখানার আধিকারিক শুভালোক সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,” স্থায়ী ও ঠিকাভিত্তিক স্থানীয় ও বাংলার বিভিন্ন জেলার প্রশিক্ষন প্রাপ্ত শ্রমিক রয়েছে। ৮০ শতাংশের ওপর স্থানীয়রা কাজ করে। স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। দ্বীতিয় ইউনিট চালু হলে আরও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি আর্থাসামাজিক পরিবেশ সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদী। পাশাপাশি রাজ্যে ইউিরিয়া সারের সঙ্কট মিটবে।”