(রাউন্ড আপ): পঞ্জাবের হোশিয়ারপুর থেকে ইন্ডি জোটকে নিশানা প্রধানমন্ত্রীর

হোশিয়ারপুর, ৩০ মে (হি. স.): মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার পঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে আয়োজিত বিশাল ফতেহ সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময়, বিজেপি সরকারের উদ্যোগে গুরু রবিদাস জির সম্মানে সমগ্র দেশে করা উন্নয়নমূলক কাজের কথা উল্লেখ করেন এবং কংগ্রেসের অপশাসনের সমালোচনা করেন। এই অনুষ্ঠান চলাকালীন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পাঞ্জাব বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুনীল জাখর, হোশিয়ারপুরের প্রার্থী অনিতা সোমপ্রকাশ এবং আনন্দপুর সাহেবের প্রার্থী সুভাষ শর্মা এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের শেষ জনসভায় নিজের বক্তৃতা শুরু করে, মোদী বলেছেন, হোশিয়ারপুরের এই পবিত্র ভূমিতে নির্বাচনী প্রচার শেষ করা একটি সৌভাগ্যের চেয়ে কম নয়। গুরু রবিদাস জী বলতেন “মন চাঙ্গা তো কঠৌতি মে গঙ্গা” আর এই নীতি অনুসরণ করে আমিও পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে দেশের সেবায় নিয়োজিত আছি এবং সেজন্য আমার সাথে জনসাধারণের আশীর্বাদও রয়েছে। সারা দেশের মানুষ তৃতীয়বারের মতো মোদী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে এখন আকাঙ্খা, প্রত্যাশা ও আস্থা নতুন। কয়েক দশক পর পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে হ্যাটট্রিক করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল একটি বিকশিত ভারতের সংকল্প, তাই প্রত্যেক দেশবাসী বিজেপিকে আশীর্বাদ করছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি লালকেল্লা থেকে আহ্বান করেছিলাম “এটাই সময়, এটাই সঠিক সময়” এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে একবিংশ শতাব্দী হবে ভারতের শতাব্দী। গত ১০ বছরে ভারতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে এবং এখন প্রত্যেক ভারতীয় এমনকি বিদেশেও ভারত এবং ভারতীয়দের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি অনুভব করছে। দেশে যখন শক্তিশালী সরকার থাকে, তখন বিদেশি সরকারও আমাদের শক্তি দেখে। এই বীরের ভূমি পাঞ্জাবের চেয়ে শক্তিশালী হওয়ার অর্থ কেউ জানে না। একটি শক্তিশালী সরকার শত্রুকে ছক্কা মেরে, ঘরে ঢুকে শত্রুকে মেরে ভারতকে আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধশালী করে, সেই কারণেই আবারও মোদী সরকারের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা পাঞ্জাব।

মোদী বলেছেন, বিজেপি সরকার গুরু রবিদাস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে দরিদ্র কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। গুরু রবিদাস জি বলতেন, “আমি এমন নিয়ম চাই, যেখানে সবাই অন্ন পায়।” গত দশ বছরে, বিজেপি সরকার দরিদ্রতম দরিদ্রদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করেছে। গুরু রবিদাস জি এমন একটি সমাজ চেয়েছিলেন যেখানে জাতপাতের ভিত্তিতে সমাজে কোনও বৈষম্য থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রবিদাস জিও বলেছেন যে, “আমি এই পৃথিবীতে একশ বছর বেঁচে থাকব, আমি আমার কাজ করব। অর্থাৎ আমরা যদি ১০০ বছর বেঁচে থাকি তবুও আমাদের সারাজীবন কাজ করা উচিত এবং কর্মই ধর্ম। গুরু রবিদাস জির এই অনুভূতি বিজেপি সরকারের কর্মসংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হয়। তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের সাথে সাথেই আগামী ১২৫ দিনের মধ্যে কাজ করার রোডম্যাপ তৈরি করেছে বিজেপি। এতে ২৫ দিন বিশেষভাবে তরুণদের জন্য মনোনিবেশ করা হয়েছে। বিজেপি সরকারও আগামী ২৫ বছরের ভিশন নিয়ে দ্রুত এগোচ্ছে। গুরু রবিদাসের সঙ্গে যুক্ত উত্তরাধিকার দেওয়ার বিশেষ সুযোগ বিজেপি সরকারের রয়েছে। কাশীতে গুরু রবিদাসের জন্মস্থান গড়ে তোলা হচ্ছে এবং একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হয়েছে। বিজেপি সরকারের চেষ্টা হল পাঞ্জাবের মানুষ যাতে কাশীতে কোনও সমস্যায় না পড়ে।

মোদী বলেছেন, বিজেপি সরকার কাশীতে অনেক কিছু করছে, এর পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশে গুরু রবিদাস জির একটি বিশাল স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে হাজার হাজার গ্রামের মাটি এবং অনেক নদীর জল সংগ্রহ করে গুরু রবিদাসের একটি বিশাল মন্দির তৈরি করা হচ্ছে। ভোপালের গ্লোবাল স্কিল পার্কের নামও রাখা হয়েছে গুরু রবিদাস জির নামে। দিল্লির তুঘলকাবাদে গুরু রবিদাস জির পবিত্র স্থানকে ঐশ্বরিক করা মোদী সরকারের অগ্রাধিকার, এ জন্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে জমির অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে। মাননীয় শ্রী মোদীজি বলেছেন, ৫০০ বছরের অপেক্ষার পরে অযোধ্যায় ভগবান রামের একটি বিশাল মন্দির প্রস্তুত এবং এই সংগ্রামটিও প্রথম শিখ ভাই ও বোনেরা লড়াই করেছিলেন। রাম মন্দির নির্মাণের পাশাপাশি বিজেপি সরকার অযোধ্যায় একটি বিমানবন্দর নির্মাণ করে এবং বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয় মহর্ষি বাল্মীকির নামে। আদমপুর বিমানবন্দরও গুরু রবিদাস জির নামে নামকরণ করা হবে এবং সরকার গঠনের সাথে সাথে এই লক্ষ্যে দ্রুত কাজ করা হবে। “ঐতিহ্যের পাশাপাশি উন্নয়ন” মন্ত্রে এগিয়ে চলেছে বিজেপি সরকার। আফগানিস্তানে যখন সঙ্কট দেখা দেয়, শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ এবং গুরুদ্বারের জন্য হুমকি ছিল, তখন ভারত সরকার গুরু গ্রন্থ সাহেবের পবিত্র স্বরূপগুলিকে পূর্ণ সম্মানের সাথে মাথায় রেখে ভারতে নিয়ে আসে। বিজেপি সরকার সাহেবজাদাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২৬ ডিসেম্বরকে বীর বাল দিবস হিসাবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ভারতের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে বীর বাল দিবসের পরম্পরা শুরু করেছে। বিজেপি সরকার হরমিন্দর সাহেবের লঙ্গরকে করমুক্ত করেছে এবং নিয়মগুলি শিথিল করেছে যাতে বিদেশী ভক্তরাও সেবায় দান করতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকশিত ভারতের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কংগ্রেস ও ইন্ডি জোটের নিজেদের স্বার্থ ও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। ভোটব্যাঙ্কের প্রতি কংগ্রেসের তোষণের কারণে দেশভাগের সময় কর্তারপুর সাহিবে ভারত নিজেদের অধিকার কায়েম করতে পারেনি। নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক এবং তোষণের রাজনীতির কারণে কংগ্রেস রাম মন্দিরের বিরোধিতা করেছে এবং এখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনেরও বিরোধিতা করছে। আজকাল ইন্ডি জোটের লোকেরা সংবিধানের কথা বলছে, কিন্তু তারাই একসময় জরুরি অবস্থার জারি করে দেশের গণতন্ত্রকে গলা টিপে মেরেছিল। ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার সময় যখন শিখদের গলায় টায়ার বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, তখন কংগ্রেস সংবিধানের কথা ভাবেনি। কাউকে দলিত, অনগ্রসর শ্রেণী এবং জনজাতিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিতে দেবেন না মোদী। সংরক্ষণ নিয়ে বিরোধীদের নীতি খুবই বিপজ্জনক, তাদের ইতিহাসও দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণী বিরোধী। ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করার ষড়যন্ত্র করছে কংগ্রেস। ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় মোদী বিরোধীদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছেন, তাই তারা ক্রমাগত মোদীকে কটাক্ষ করছে।

মাননীয় মোদী বলেন যে কংগ্রেস দুর্নীতির স্রষ্টা, কংগ্রেস ৬০ বছর ধরে যেসব কাজ করেছে তা দেখলে মনে হয় কংগ্রেস দুর্নীতিতে ডবল পিএইচডি করেছে। এখন আরও একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এই দলটি পাঞ্জাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ভান করছে, আবার একসঙ্গে দিল্লিতে নির্বাচনে লড়ছে। কংগ্রেসের সমর্থনে দিল্লিতে দুর্নীতিগ্রস্ত দলের (আম আদমি পার্টি) প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল, তাই তারা কংগ্রেসের কাছ থেকে দুর্নীতির পাঠ শিখেছে। এই কট্টর দুর্নীতিবাজদের কংগ্রেসের থেকেই জন্ম, তাই এই লোকেরা জন্মগতভাবেই কট্টর দুর্নীতিবাজ। মাননীয় মোদীজি বলেন যে, আম আদমি পার্টি বলেছিল যে তারা পাঞ্জাবকে মাদকমুক্ত করবে কিন্তু ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে তারা মাদককে উপার্জনের মাধ্যম বানিয়েছে। দিল্লির মদ কেলেঙ্কারির কথা সারা বিশ্ব জানে। পাঞ্জাবের শিল্প ও কৃষি দুটোকেই এরা ধ্বংস করেছে। কট্টর দুর্নীতিগ্রস্ত এই লোকেরা নারীদের নিপীড়নেও এক নম্বরে। আজ দিল্লি থেকে পাঞ্জাব সবাই তাদের শোষণ দেখছে। কট্টর দুর্নীতিবাজ দলের নেতার হদিশ নেই, নীতিও ভুয়ো, উদ্দেশ্যও ত্রুটিপূর্ণ। পাঞ্জাব বীরত্ব, সাহসের ভূমি। কিন্তু ইন্ডি জোটের নেতারা প্রতি পদে বীরদের অপমান করে। কংগ্রেসের লোকেরা আমাদের দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে রাস্তার গুন্ডা বলেছিল, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে বাহিনীর কাছে প্রমাণ চেয়েছিল এবং ১৯৬২ সালে নেহরুর আমলে হওয়া যুদ্ধে চীনকে ক্লিনচিট দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অপমান করেছিল। ইন্ডি জোট আমাদের সীমানা অঞ্চলগুলিকে দুর্বল করার সবরকম চেষ্টা করেছে। স্বাধীনতার পর তারা বোফর্স কেলেঙ্কারি, ট্রাক কেলেঙ্কারি ও অন্যান্য কেলেঙ্কারি করেছে, তারা দেশের সেনাবাহিনীর কথা না ভেবেই দেশকে লুটপাট ও দুর্নীতি করার পরিকল্পনা করেছিল। কংগ্রেস বছরের পর বছর ধরে তেজস প্রকল্প আটকে রেখেছিল, সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের অনুমতি দেয়নি এবং ৪০ বছর ধরে ওয়ান র্যািঙ্ক, ওয়ান পেনশন আটকে রেখেছিল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার পর আমি প্রাক্তন সেনাদের সমাবেশে ওয়ান র্যা ঙ্ক, ওয়ান পেনশন বাস্তবায়নের কথা বলেছিলাম, যার কারণে কংগ্রেস ভয় পেয়ে গিয়েছিল এবং তাড়াহুড়ো করে ওয়ান র্যা ঙ্কের জন্য মাত্র ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে ওয়ান র্যাপঙ্ক, ওয়ান পেনশন বাস্তবায়নের নাটক করেছিল। কিন্তু মোদী ওয়ান র্যাাঙ্ক, ওয়ান পেনশনের মাধ্যমে প্রাক্তন সেনাদের অ্যাকাউন্টে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা জমা দিয়ে ওয়ান র্যাদঙ্ক, ওয়ান পেনশন বাস্তবায়ন করেছেন। মোদীর লক্ষ্য ভারতের বাহিনীকে সবচেয়ে আধুনিক, সক্ষম এবং স্বনির্ভর করা। কিন্তু মোদীর এই কাজ ইন্ডি জোটের উপার্জনের পথ বন্ধ করে দেয়, তাই এই লোকেরা মোদীর উপর তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে। সেনাবাহিনী শুধুমাত্র ২৬ জানুয়ারির কুচকাওয়াজ নয়, যুদ্ধের জন্য, শত্রুকে পরাজিত করার জন্য এবং ভারত মাতাকে রক্ষা করার জন্য সদা প্রস্তুত। কিন্তু কংগ্রেস সেনাবাহিনীকে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র বানিয়েছে এবং এর চেয়ে বড় পাপ আর কেউ করতে পারে না। ইন্ডি জোটের লোকেরা মোদীকে নীরব ভেবে ভুল করবেন না। মোদী যে কোনো দিন মুখ খুলবেন, তিনি ইন্ডি জোটের নেতাদের সাত জন্মের পাপ জনগণের সামনে তুলে ধরবেন। আপনি মোদীকে যত খুশি কটাক্ষ করতে পারেন, কিন্তু মোদী দেশের সেনাবাহিনীর অপমান সহ্য করবেন না।

মোদী বলেন যে, গরিবের এই ছেলে প্রতিটি দরিদ্র, দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষের উন্নয়ন করতে চায়। আগামী পাঁচ বছর কৃষকদের কল্যাণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, তরুণদের উন্নয়ন এবং নারী শক্তির সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য একটি উপযুক্ত সময় হতে চলেছে, তাই বিজেপিকে ৪০০ আসন দেওয়ার কাজ এখন ভোটের অন্তিম পর্যায়ের ভোটারদের হাতে। মাননীয় শ্রী মোদীজি উপস্থিত জনতার কাছে স্থানীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে, জনগণের কাছে বিজেপির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং দেশে আবার মোদী সরকার গঠনের জন্য আবেদন করেন।