কলকাতা, ১৫ মে, (হি স): বিশ্বের প্রথম ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের একটিও প্রতিষ্ঠান নেই। অভিবাসন নিয়ে কৃতীরা উন্নত দেশে চলে যাচ্ছেন। কেন এই হাল? মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতায় এক আলোচনার পর প্রশ্নোত্তরপর্বে পূর্ণ সভাকক্ষে এই সব নির্দিষ্ট প্রশ্নের মুখে পড়তে হল ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডঃ সুব্রাহ্মণ্যম জয়শঙ্করকে।
প্রশ্নকর্তা বা কর্ত্রীদের কেউ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, কেউ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ডিন, কেউ গবেষক। বিদেশমন্ত্রী উত্তরও দিলেন প্রশ্নগুলোর। তিনি স্বীকার করেন, উন্নত কিছু দেশ পড়াশোনায় নানা কারণে অনেকটাই এগিয়ে। ভারতে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য তাই বিশ্বমানের কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য শর্তসাপেক্ষে দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে ভারতের বাজারকে ওই সব প্রতিষ্ঠান যেন মুনাফা অর্জনের কেন্দ্র না করে।
বিদেশমন্ত্রী বলেন, ভারতের নয়া শিক্ষানীতির রূপায়ণ হয়েছে। এতে সুফল মিলবে। ডিগ্রির থেকেও বেশি প্রয়োজন কাজের সুযোগ এবং দক্ষতার উৎকর্ষতা। স্বরোজগারও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে নির্দিষ্ট কিছু ঋণের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। যেমন মুদ্রা ঋণ। গত ১০ বছরে এ রকম প্রায় ৫ কোটি আবেদন এসেছে। তবে দেশে উৎপাদনকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো আবশ্যিক। অন্যথায় নতুন করে কাজ দেওয়া যাবেনা।
অভিবাসনের ব্যাপারে জয়শঙ্করের বক্তব্য, “এটা অনেকটা মানুষের প্রকৃতি। তাঁরা ঘর থেকে বার হতে চান। যে কারণে বিদেশের পাশাপাশি স্বদেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছেন তাঁরা। মনে করছেন, নিজের শহরে আটকে থাকলে নানা সুযোগ হারাবেন।”
এর আগে তাঁর ভাষণে সব বিষয়ে পশ্চিমী দেশ এবং আমেরিকার নাক গলানোকে কড়া ভাষায় নিন্দা করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর কথায়, যেসব দেশ ভোটের ফলাফল নির্ণয় হয় আদালতে, তাঁরা আবার আমাদের ‘জ্ঞান’ দেয়। ভারতের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমী দেশগুলির সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন ডঃ জয়শঙ্কর। সবাই নেতিবাচক দৃষ্টিতে ভারতের রাজনীতিকে উপস্থাপিত করছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে চাবাহার বন্দরচুক্তি নিয়ে বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্য এই চুক্তি গোটা অঞ্চলের উপকারে লাগবে। এই চুক্তি নিয়ে মার্কিন অবরোধের প্রচ্ছন্ন হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্প গোটা এলাকায় সুফল দেবে। যারা এটা মেনে নিতে পারছে না, তারা সংকীর্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।
ডঃ জয়শঙ্কর বলেন, “পশ্চিমী দেশগুলি ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ওদের ছাড়া সকলের উপর খবরদারি চালাচ্ছে। আর তাই ভারতের স্পর্ধা দেখে ওরা এখন আঁতকে উঠছে।”
পশ্চিমী দেশগুলির মিডিয়াকে আক্রমণ করে ডঃ জয়শঙ্করের অভিযোগ, “খবরদারি করাটা ওদের অভ্যাসের পরিণত হয়ে গিয়েছে। ফলে আপনারা কী করে আশা করেন যে, ওরা এত সহজে পুরনো অভ্যাস ঝেড়ে ফেলবে! ওরা এত একচোখো কেন? ভারত সম্পর্কে কেন ভালো কিছু ভাবতে পারে না!”
কানাডা ও আমেরিকার নাক গলানোর স্বভাবের প্রত্যক্ষ উল্লেখ না করেই ডঃ জয়শঙ্কর বলেন, “এটা ওদের পুরনো অভ্যাস। ওদের লক্ষ্যে বিশ্বের দরবারে ভারতকে হেয় করা। ওরা যে একসময় দাদাগিরি চালাত তা ছাড়তে পারছে না। এইসব দেশই ভোটের ফলের জন্য আদালতে যায়। আর তারাই ভারতের গণতন্ত্র তুলে জ্ঞান দিতে চায়। আমরা কীভাবে নির্বাচন করব, তাও ওরাই ঠিক করে দেবে, প্রশ্ন বিদেশমন্ত্রীর।”
ডঃ জয়শঙ্কর বলেন, ওদের কল্পনায় ভারত কীরকম হবে, তা নিয়েই চিন্তাভাবনা ওদের। এদেশের মানুষ কী চায়, তাদের সংস্কৃতি এসব নিয়ে ওদের মাথাব্যথা নেই।
বিদেশমন্ত্রী ছাড়াও এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছিলেন অন্যতম সহ-উদ্যোক্তা ‘ক্যালকাটা সিটিজেন্স ইনিশিয়েটিভ’-এর সভাপতি নারায়ণ জৈন, ‘রাজস্থান বেঙ্গল মৈত্রী পরিষদ-এর সভাপতি শিশির বাজোরিয়া, ‘কনসার্ন ফর ক্যালকাটা’-র সভাপতি অশোক পুরোহিত, আয়োজক ও সংযোজিকা রেখা শর্মা প্রমুখ।