পূর্ব ত্রিপুরা আসনে কি হবে নির্বাচনী সমীকরণ, সাধারন মানুষ কোন জোটে রাখবে ভরসা, রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে

নিজস্ব প্রতিনিধি, ধর্মনগর, ৯ এপ্রিল:
ধর্মনগর বিধানসভা কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান কি হবে তা নিয়ে নিশ্চিত নয় কেউই। ধর্মনগর অর্থাৎ ৫৬ বিধানসভা কেন্দ্রটি সর্বদা বাম বিরোধী করে পরিচিত হলেও শাসক দলীয় কতিপয় নেতার কারণে বাম বিরোধী ভোট যতটুকু বাড়ার কথা ততটুকু বাস্তব ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই বাম বিরোধীদের মুক্তাঞ্চল বলে ধর্মনগর বিধানসভা কেন্দ্রটি পরিচিত থাকলেও ভোট বাক্সে তার প্রভাব ততটুকু পরিলক্ষিত হয় না।

ফলস্বরূপ দেখা গেছে গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের বর্তমান অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন ন্যূনতম মাত্র হাজার খানের ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। এই কেন্দ্র থেকে তিনি মোট চার বার নির্বাচিত হয়েছেন দুইবার জাতীয় কংগ্রেস দলের টিকিটের এবং দুইবার ভারতে জনতা পার্টি টিকিটে। তারমধ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোটের তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী এবং সিপিআইএম প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ১২ হাজারের উপরে ছিল। তাই প্রত্যেকে আশা করেছিলেন একটা রেকর্ড ভোটে বর্তমান বিধায়ক নির্বাচিত হবেন কিন্তু গণনার ক্ষেত্রে উল্টা চিত্র ফুটে ওঠে।

ন্যূনতম ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে স্থানীয় বিধায়ক নির্বাচিত হবেন বলে প্রত্যেকের অর্থাৎ বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এই ব্যবধান এক হাজারের নিচে নেমে গেছে। তাহলে এই কেন্দ্রে লোক দেখে ভোটের সে বিকাশ করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না। গত বিধানসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল দলে দলে ধর্মনগরের সাধারণ মানুষ একটা দলকে বেছে নিয়েছিল তাহলে ভোট বাক্সে ব্যবধান এত ন্যূনতম হলো কি করে তা নিয়ে বিশাল প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এবার ও বিজেপি তিপরা মথা আইএনপিটি প্রার্থী মহারানী কীর্তি সিং দেববর্মা রোড শোতে যেভাবে জনস্রোত উপচে পড়েছিল তা প্রকৃতপক্ষে ভোট বাক্সে কতটুকু উপচে পড়বে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার সমর্থনে এই উপচে পড়া মানুষের সমাগম পরিলক্ষিত হয়েছিল বলে অনেকের ধারণা। তার ওপর ধর্মনগরের একটা বিশাল অংশের মানুষ এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না তারা কি ভোটদানে অংশগ্রহণ করবেন নাকি ভোট দান থেকে বিরত থাকবেন তা নিয়ে।

কারণ দলীয় প্রার্থী মহারানী কীর্তি সিং দেববর্মার পরিচয় প্রদ্যুৎ দেব বর্মনের বোন তা বাঙ্গালীদের কাছে এখন একটি বড় ইস্যু। কারণ প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন যেভাবে বাঙালিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মন্তব্য করে বাঙ্গালীদের সেন্টিমেন্টে কড়াঘাত করেছে তা থেকে এখনো একটা বিশাল অংশের বাঙালিরা তাকে ক্ষমা করতে পারছে না। বিজেপি দল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য একটা আঞ্চলিকতার সাথে আপোষ করলেও সাধারণ বাঙালিরা তাদের আবেগ থেকে এখনো আঞ্চলিক দলের সুপ্রিমোর পূর্বের কথাবার্তা  মনের দিক থেকে মেনে নিতে পারছে না।

তাই একটা বিশাল অংশের বাঙালি ভোটাররা অপেক্ষায় রয়েছে শেষ সময় তারা কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে। কংগ্রেস বামফ্রন্ট জোটকে অনেক বাঙালি পছন্দ করেন না কারণ কংগ্রেস করার কারণে বামফ্রন্টের দীর্ঘ ২৫ বছরে তারা অনেক কিছু হারিয়েছে রক্ত ঝরিয়েছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে নিঃস্ব হয়েছে। তাই তারা বিকল্প দল হিসেবে বিজেপিকে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর কাঞ্চনপুরে বাঙালিরা যেভাবে জনজাতিদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে প্রদ্যুৎ কিশোরের উস্কানিতে তাই যারা বিজেপিকে মন থেকে গ্রহণ করেছিল এই জোটের ফলে তাদের মনেও একটা বিশাল সংশয় দেখা দিয়েছে। এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক সচেতন মহল।

তবে লোকসভা নির্বাচন হওয়ায় এবং বিরোধী কংগ্রেস বামফ্রন্ট জোটের তৎপরতা কম থাকায় এ আসনটি নিশ্চিত বিজেপির দখলে যাবে তবে ব্যবধানটা কি হবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। গনদেবতারাই শেষ কথা বলবেন তাই সবকিছুর জন্যই অপেক্ষা করে থাকতে হবে চার জুন পর্যন্ত।