দেশ-বিদেশের নাগরিকদের কাজিরঙা জাতীয় উদ্যান ও অসমের চা বাগানের পরিবেশ উপভোগ করার আহ্বান
যোরহাট (অসম), ৯ মাৰ্চ (হি.স.) : সমগ্ৰ উত্তরপূৰ্ব আমার পরিবার, তাই অষ্টলক্ষ্মী-স্বরূপা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে যারপরনাই গুরুত্ব দিয়েছি, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ শনিবার অসমের যোরহাটে ১৭,৬০৬ কোটি টাকার বেশি মূল্যের একাধিক প্রকল্প রাষ্ট্রের নামে উৎসর্গ ও শিলান্যাস করে আয়োজিত প্রকাশ্য জনসমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন প্ৰধানমন্ত্ৰী।
এদিন যোরহাটের মেলেং মেটেলি ময়দানে আয়োজিত লক্ষাধিক জনতার সমাবেশ-মঞ্চ থেকে পাটবস্ত্রে তৈরি অসমিয়া পোশাক পরে প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে উদ্বোধন করেছেন ৫,৫৫,৫৫৫টি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-র অধীনে নির্মিত ঘর, পিএম-ডিভাইন প্রকল্পের অধীনে তিনসুকিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, গুয়াহাটির বি বরুয়া ক্যানসার ইনস্টিটিউটে চাইল্ড কেয়ার ইউনিট উদ্বোধনের পাশাপাশি শিবসাগর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বারাউনি থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত বিস্তৃত ৩,৯৯২ কোটি টাকার পাইপলাইন প্রকল্পের সূচনা করেছেন। এছাড়া ধূপধরা থেকে ছয়গাঁও এবং নিউ বঙাইগাঁও থেকে সরভোগ পর্যন্ত ডাবল রেললাইনের জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে যোরহাটে কিংবদন্তি আহোম বীর সেনাপতি লাচিত বড়ফুকনের ১২৫ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
জনসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদী বলেv, ঐতিহ্য ও উন্নয়ন আমার ডাবল ইঞ্জিন সরকারের মূল মন্ত্ৰ। তাই বিকশিত ভারত নির্মাণ করতে উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের উন্নয়ন অতি প্ৰয়োজনীয়। প্ৰধানমন্ত্ৰী বলেন, ‘পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্ৰে অভূতপূৰ্ব অগ্ৰগতি প্রদর্শন করছে অসম। বিগতদিনের কংগ্ৰেস সরকারকে ঠুকতে ছাড়েননি তিনি। বলেন, কংগ্রেসের আমলে সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে প্রচণ্ড অবহেলা করেছে। তবে মোদী সমগ্ৰ উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলকে নিজের পরিবার বলে গণ্য করে। তাই বছরের পর বছর অপূরণীয় প্ৰকল্পগুলির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কংগ্ৰেস এবং তাদের বন্ধুবর্গ মোদীকে নানাভাবে গালি-গালাজ করতেন, আজকাল তাঁদের নতুন সংযোজন, বলা শুরু করেছেন মোদীর পরিবার নেই। তাঁদের গালি-গালাজকে সাদরে গ্রহণ করে সমগ্ৰ দেশ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, সমগ্ৰ দেশ বলছে, আমি মোদীর পরিবার।’ তিনি বলেন, ‘মোদীর প্রতি দেশের এই মমতা এজন্যই যে, মোদী ১৪০ কোটি দেশবাসীকে কেবল নিজের পরিবার বলে গণ্য করাই নয়, বরং দিবারাত্রি তাঁদের সেবাও করছেন।’
আজকের কাজিরঙা জাতীয় উদ্যান সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে প্ৰধানমন্ত্ৰী বলেন, কাজিরঙা হচ্ছে নিজস্ব এক অনন্য জাতীয় উদ্যান এবং ব্যাঘ্র সংরক্ষিত বনাঞ্চল। একশৃঙ্গের গণ্ডারের ৭০ শতাংশ ইউনেসকো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্ৰ অসমের কাজিরঙা জাতীয় উদ্যানে রয়েছে। পাশাপাশি সম্বর হরিণ, বাঘ, হাতি, বুনো মোষ সহ অন্য বহু বন্যপ্ৰাণীর প্রসঙ্গও তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন তিনি। মোদী বলেন, কংগ্ৰেসের সংবেদনশূন্য ও অপরিকল্পিত পরিকল্পনায় কাজিরঙা জাতীয় উদ্যানে চোরাশিকারির সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৩ সালে এক বছরে ২৭টি গণ্ডার চোরাশিকারিরা বধ করেছিল। ফলে এই উদ্যানে গণ্ডার বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এখন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে নতুন রূপ পেয়েছে কাজিরঙা। তাই দেশ-বিদেশের নাগরিকদের কাজিরঙা জাতীয় উদ্যানে এসে তার নৈসর্গিক পরিবেশ উপভোগ করার আহ্বান জানান প্ৰধানমন্ত্ৰী।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মোদী অসমের মনোরম চা বাগানগুলি পরিদর্শন করতে পর্যটকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বীর লাচিত বড়ফুকনের ভব্য মূৰ্তি উন্মোচন প্রসঙ্গে প্ৰধানমন্ত্ৰী বলেন, বীর লাচিত বড়ফুকন অসমের বীরত্ব এবং দৃঢ়তার প্ৰতীক।
প্ৰধানমন্ত্ৰী আজ স্থায়ী পাকা ঘরপ্রাপ্ত অসমের সকল পরিবারকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন। তিনি বলেন, এই ঘরগুলি কেবল ঘরে সীমাবদ্ধ নয়, এতে রয়েছে শৌচাগার, রান্নার গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের পাইপ সংযোগ ইত্যাদির সুবিধায় সজ্জিত। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১৮ লক্ষ পরিবারকে এ ধরনের গৃহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সব গৃহ অধিকাংশই মহিলা তথা গৃহিণীর নামে হওয়ায় তিনি সুখি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অসমের প্রত্যেক মহিলার সুষ্ঠু জীবনযাপন এবং তাঁদের সঞ্চয় বাড়াতে সরকারের দায়বদ্ধতাকে আবারও স্মরণ করিয়ে প্ৰধানমন্ত্ৰী গতকাল নারী দিবসের দিন গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য ১০০ টাকা হ্ৰাস করার সিদ্ধান্তের কথা শুনিয়েছেন। এছাড়া আয়ুষ্মান কাৰ্ডের মতো প্রকল্পেও মহিলারা সুবিধা পাচ্ছেন, জল জীবন অভিযানের অধীনে অসমের ৫০ লক্ষে বেশি পরিবার পাইপ লাইনে পানীয় জলের সংযোগ লাভ করেছেন, পাশাপাশি গোট দেশে ৩ কোটি ‘লাখপতি বাইদেউ’ (দিদি) সৃষ্টির প্ৰতিশ্ৰুতি পূরণের কথাও প্রদত্ত ভাষণে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৪ সালের পর অসমে যে ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে তার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ২.৫০ লক্ষের বেশি ভূমিহীন স্থানীয় নাগরিকদের ভূমির অধিকার প্রদান করা ছাড়াও প্রায় ৮ লক্ষ চা বাগানের শ্রমিককে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে সংযোগ সরাসরি সরকারি সুবিধাগুলি তাঁদের অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ প্ৰধানমন্ত্ৰী বলেন, এই ব্যবস্থা প্রচলনের ফলে মধ্যস্বত্বভোগীর সব দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।
যোরহাটে আজকের উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে অন্য বহুজনের সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল ও রামেশ্বর তেলি, রাজ্যের সব মন্ত্রী-বিধায়ক এবং বিজেপির নেতৃবর্গ।