সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী উচ্চতর শিক্ষা অভিযান গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ: মুখ্যমন্ত্রী
দেশব্যাপী ১২টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভার্চুয়ালী উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
আগরতলা, ২০ ফেব্রুয়ারি : দেশের কৃষক, গরীব, নারীশক্তি এবং যুবশক্তিকে সার্বিক উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর প্রাধান্য দিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করছে। পাশাপাশি দেশের সমস্ত অংশের মানুষের মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পৌছানোও সরকারের মূল লক্ষ্য। আজ জম্মু থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ত্রিপুরার কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরী ব্লক, ছাত্র ও ছাত্রীদের হোস্টেল সহ একলব্য পরিসরের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ জম্মু থেকে দেশব্যাপী ২৫টি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, ১৯টি জওহর নবোদয় বিদ্যালয়, ১২টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ১০টি আই আই টি, ৩টি আই আই এম, ৪টি এন আই টি, ২টি দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এগুলোর মধ্যে রাজ্যের কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় ও মহারাজা বীর বিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, সিপাহীজলা জেলায় জওহর নবোদয় বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পও রয়েছে। লেম্বুছড়াস্থিত কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ভার্চুয়ালি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা:) মানিক সাহা এবং কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ণ প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকও অংশ গ্রহণ করেন।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেই আজ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নানা প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ছাত্রছাত্রীরা যাতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আই আই টি, ত্রিপল আই টি, মেডিক্যাল কলেজ সহ নানা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। এরফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি রাজ্যই একসাথে উন্নয়নের পথে এগুচ্ছে। সংস্কৃত হল আমাদের দেশের প্রাচীন ভাষা, যা আমাদের ঐতিহ্য ও জাতির উন্নতির ভিত্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা:) মানিক সাহা বলেন, সংস্কৃত ভাষা কবিতা, যুক্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ, দর্শন এবং বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন শাখায় মানুষের বুদ্ধির উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত ১৩টি ক্যাম্পাসের মধ্যে রাজ্যের একলব্য ক্যাম্পাসটি ১১তম ক্যাম্পাস যা গত এক দশক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দশকব্যাপী এই ক্যাম্পাসটি আধুনিক বিষয় ও ভাষার পাশাপাশি ব্যাকরণ সাহিত্য, জ্যোতিষ, ধর্মশাস্ত্র এবং শিক্ষাশাস্ত্রের মতো নানা শাস্ত্রীয় বিভাগে বিভিন্ন কোর্স অফার করেছে। সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০.৮৩ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিক বিষয়গুলির সংমিশ্রণ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষারক্ষেত্র ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রটিকে আরও উন্নতির লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী আজ দেশব্যাপী ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে ৩৭টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪৪টি স্কুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ২টি দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। ত্রিপুরায় কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, মহারাজা বীর বিক্রম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিপাহীজলা জেলার নবোদয় বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রকল্পগুলিও এরমধ্যে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সিপাহীজলা জেলার টাকারজলায় জওহর নবোদয় বিদ্যালয় স্থাপন ঐ এলাকার শিক্ষার পরিবেশকে আরও উন্নত করবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী উচ্চতর শিক্ষা অভিযান’ কেন্দ্রীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রকল্পে ১২,৯২৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। পিএম-ঊষার মাধ্যমেও রাজ্যের জনগণ এবং শিক্ষার্থীরা নানা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। পিএম-ঊষা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমবিবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০০-এর উপর শিক্ষার্থী এবং এমবিবি কলেজ, বীর বিক্রম মেমোরিয়্যাল কলেজ এবং আইন কলেজের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তন করা হয়েছে, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জ্ঞানকে আধুনিক বিশ্বের চাহিদার সাথে একত্রিত করেছে। অনুষ্ঠানে সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক বলেন, সংস্কৃত হচ্ছে আমাদের ভাষার জননী ও আমাদের আত্মা। প্রধানমন্ত্রী দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের উচু স্থানে তুলে ধরার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী ২০৪৭-এর মধ্যে দেশকে সবদিক দিয়ে শক্তিশালী করার সংকল্প নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরজন্য তিনি যুবশক্তির সার্বিক উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ত্রিপুরায় কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সংস্কৃত ভাষার প্রচার-প্রসার আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক নয়ন সরকার, দিল্লীর কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার প্রফেসর আর জি মুরালি কৃষ্ণা, কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের একলব্য ক্যাম্পাসের ডিরেক্টর প্রফেসর প্রভাত কুমার মহাপাত্র প্রমুখ।

