নয়াদিল্লি, ১৯ ফেব্রুয়ারি ৷৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ লক্ষ্ণৌতে বিকশিত ভারত বিকশিত উত্তরপ্রদেশ কর্মসূচিতে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ইউপি গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিট ২০২৩-এর চতুর্থ গ্রাউন্ডব্রেকিং অনুষ্ঠানে উত্তর প্রদেশ জুড়ে ১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ১৪ হাজার প্রকল্প চালু করেছেন।
সমাবেশে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই আয়োজন উত্তরপ্রদেশের বিকাশের মধ্য দিয়ে বিকশিত ভারতের সমাধানের লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের ৪০০টিরও বেশি নির্বাচনী এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের স্বাগত জানিয়েছেন এবং দেশের নাগরিকরা এখন যেভাবে প্রযুক্তির সহায়তায় এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারছেন তার জন্য আনন্দ প্রকাশ করেছেন, যা ৭-৮ বছর আগে অকল্পনীয় ছিল। উত্তরপ্রদেশের এক সময়ের অপরাধের উচ্চ হারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে রাজ্যে বর্তমানে রাজ্যের ইতিবাচক পরিবেশের প্রশংসা করেন৷ তিনি বলেন, “আজ উত্তরপ্রদেশে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে”৷ আজকের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এগুলি উত্তরপ্রদেশের চেহারা বদলে দেবে এবং বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি যুবসমাজকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
উত্তরপ্রদেশে ডবল ইঞ্জিন সরকারের শাসনের সাত বছরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সময়কালে ‘লাল ফিতের ফাঁসের সংস্কৃতি’র পরিবর্তে ‘লাল গালিচা সংস্কৃতি’ চালু হয়েছে। তিনি বলেন, গত ৭ বছরে ইউপিতে অপরাধ কমেছে এবং ব্যবসায়িক সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত সাত বছরে উত্তরপ্রদেশে ব্যবসা, উন্নয়ন ও আস্থার এক বাতাবরণ গড়ে উঠেছে”। রাজ্যে নদী জলপথের ব্যবহারের কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং যাতায়াতের স্বাচ্ছন্দ্যের প্রশংসা করেন।
শ্রী মোদী বলেন, আজকের উন্নয়ন প্রকল্পগুলি শুধুমাত্র বিনিয়োগের নিরিখে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না, বরং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে এক সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে আশার আলো তুলে ধরছে। সংযুক্ত আরব আমীরশাহী এবং কাতারে তাঁর সাম্প্রতিক সফরের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব জুড়ে ভারতের প্রতি অভূতপূর্ব ইতিবাচকতার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি দেশই ভারতের অগ্রগতির কাহিনীতে আশ্বাস ও আস্থা অনুভব করে।
প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারতের জন্য নতুন চিন্তাভাবনা ও দিশা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাসের অধীনে ৪ কোটি পাকা বাড়ি নির্মিত হয়েছে, শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিকেও তাদের বাড়ির স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ৭ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ইউপির দেড় লাখ পরিবারসহ ২৫ লাখ সুবিধাভোগী পরিবার সুদে ছাড় পেয়েছে। ২০১৪ সালে ছাড়ের সীমা ২ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৭ লক্ষে উন্নীত করার মতো আয়কর সংস্কার মধ্যবিত্তকে সহায়তা করেছে।
জীবনযাপনের অনুকূল পরিবেশ এবং সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর সরকারের সমান গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডবল ইঞ্জিন সরকার প্রত্যেক সুফলভোগীর কাছে সবরকম সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদী তাদের দেখাশোনা করছেন যাদেরকে আগে সবাই উপেক্ষা করেছিল”। প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনার আওতায় ফেরিওয়ালাদের ১০ হাজার কোটি টাকার সহায়তাদানের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশে প্রায় ২২ লক্ষ ফুটপাত বিক্রেতা এই সুবিধা পেয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বার্ষিক ২৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
লাখপতি দিদি কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডবল ইঞ্জিন সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তগুলি সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনীতি উভয়কেই উপকৃত করবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ১০ কোটিরও বেশি মহিলা এবং এ পর্যন্ত ১ কোটি মহিলা লাখপতি দিদি হয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি ৩ কোটি লাখপতি দিদি তৈরির সরকারের সংকল্পের কথাও তুলে ধরেন যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে৷
উত্তরপ্রদেশের ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের শক্তির কথা উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা করিডরের মতো প্রকল্পের সুফল ছাড়াও রাজ্যের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে যে সম্প্রসারণ ও সহায়তা প্রদান করা হয়েছে তার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে প্রতিটি জেলার স্থানীয় পণ্য এক জেলা এক পণ্য প্রকল্পের আওতায় শক্তিশালী করা হচ্ছে। একইভাবে। ১৩ হাজার কোটি টাকার পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্প উত্তরপ্রদেশের লক্ষ লক্ষ বিশ্বকর্মা পরিবারকে আধুনিক পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত করবে।
সরকারের দ্রুত গতিসম্পন্ন কাজকর্মের কথা তুলে ধরেন এবং ভারতের খেলনা উৎপাদন ক্ষেত্রের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বারাণসীতে উৎপাদিত কাঠের খেলনাগুলিকে ঐ অঞ্চলের সাংসদ হিসেবে তুলে ধরার কথাও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরপ্রদেশ”, দেশের প্রতিটি মানুষ আজ লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করে বারাণসী এবং অযোধ্যা ভ্রমণ করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কারণে উত্তরপ্রদেশের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী, বিমান সংস্থা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকদের জন্য অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
ভারতকে বিশ্বের একটি হাব হিসেবে গড়ে তোলার ওপর সরকারের বিশেষ গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন তিনি। পিএম সূর্যঘর বা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “আমাদের প্রচেষ্টা হ’ল দেশের প্রতিটি বাড়ি এবং প্রতিটি পরিবার সৌর বিদ্যুৎ জেনারেটর হয়ে উঠুক”, যেখানে ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে এবং নাগরিকরাও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। শ্রী মোদী জানান, বর্তমানে এক কোটি পরিবারের জন্য উপলব্ধ এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৩০ থেকে ৮০ হাজার টাকা সরাসরি জমা দেওয়া হবে। যাঁরা প্রতি মাসে ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন, তাঁরা ৩০ হাজার টাকা এবং যাঁরা ৩০০ ইউনিট বা তার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন, তাঁরা পাবেন ৮০ হাজার টাকা।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ইভি সেক্টরের দিকে সরকারের গুরুত্ব প্রদানের কথাও তুলে ধরেন এবং উৎপাদন অংশীদারদের জন্য পিএলআই স্কিমের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে কর ছাড়ের কথা উল্লেখ করেন। চৌধুরি চরণ সিংকে ভারতরত্ন দেওয়ার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “উত্তরপ্রদেশের ভূমিপুত্র চৌধুরী সাহেবকে সম্মান জানানো দেশের কোটি কোটি শ্রমিক কৃষকের সম্মান। প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে নতুন পথ অন্বেষণে কৃষকদের সহায়তা করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে বলেন, “আমরা আমাদের দেশের কৃষিকে নতুন পথে নিয়ে যেতে কৃষকদের সহায়তা ও উৎসাহিত করছি।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পোদ্যোগীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের প্রচেষ্টায় ‘জিরো এফেক্ট, জিরো ডিফেক্ট’-এর মন্ত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান। সুপারফুড হিসাবে বাজরার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মোদী এই খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেন, বাজরার মতো সুপারফুডগুলিতে বিনিয়োগের জন্য এটি সঠিক সময়৷ গ্রামীণ অর্থনীতি এবং ভারতের কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতিকে চালিত করার ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলিকে এই সুযোগের সর্বাধিক সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিনের এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রীরা৷ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পপতি, শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় কোম্পানির প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিসহ প্রায় ৫০০০ অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।