BRAKING NEWS

শিলচর-সৌরাষ্ট্র মহাসড়কের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে রাজি রাজ্য সরকার

হাফলং (অসম), ১৭ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : ডিমা হাসাও জেলার মধ্য দিয়ে চলতে থাকা শিলচর-সৌরাষ্ট্র ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ নিয়ে জটিলতা যেন কাটতেই চাইছে না। একদিকে ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে না দিলে ডিমা হাসাও জেলার নৃরিমবাংলো থেকে হারাঙ্গাজাও অংশে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী সহ ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরামের, অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে রাজি নয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (নাহাই)।

ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুপক্ষের টানাপোড়েনে ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর নির্মাণ কাজে বার বার সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এই জটিলতা দূর করতে রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে রাজি হয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে ডিমা হাসাও জেলার নৃরিমবাংলো থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত যে ২৮টি গ্রামের প্রায় ৯০০ পরিবারের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দিতে শনিবার জেলা প্রশাসন অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার নির্দেশে গঠিত ডেমেজ এসেসমেন্ট কমিটির এক সভা হাফলং জেলা গ্রন্থাগার প্রেক্ষাগৃহে আহ্বান করে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির অধ্যক্ষ উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের প্রধানসচিব (নর্মাল) দেবানন দাওলাগাপু, সদস্যসচিব জেলাশাসক সীমান্তকুমার দাস, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (নাহাই), ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরামের সভাপতি তথা ডেমেজ এসেসমেন্ট কমিটির সদস্য ডেভিড কেভম, ক্ষতিগ্রস্ত ২৮টি গ্রামের গ্রামপ্রধান সহ সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।

আজকের বৈঠকে ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে নৃরিমবাংলো থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত যে ২৮টি গ্রামের ৯০০ পরিবারের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে আগামী দুদিনের মধ্যে ওই কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি পরিদর্শন করে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।

এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির অধ্যক্ষ তথা উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের প্রধানসচিব বলেন, এত কম সময়ের মধ্যে তা সম্ভব হবে না। অবশেষে বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, নৃরিমবাংলো থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত দুটি দল, একটি দল মাহুর অংশ এবং একটি দল হারাঙ্গাজাও অংশের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি মঙ্গলবার থেকে পরিদর্শন করে এক সপ্তাহের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। তার পরই ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার।

এদিকে ক্ষতিপূরণের ইস্যু নিয়ে ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরামের সভাপতি সাংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত দশ বছর থেকে ওই ২৮টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আসলেও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেয়নি। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে না দেওয়ার ব্যাপারে অটল থাকে। পরে হাফলঙে মুখ্যমন্ত্রী ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরামের সঙ্গে ক্ষতিপূরণের ইস্যু নিয়ে এক বৈঠকে রাজ্য সরকার এই ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে জানিয়ে ডেভিড কেভম বলেন, নৃরিমবাংলো থেকে হারাঙ্গাজাও অংশের ২৮টি গ্রামের ৯০০ পরিবারের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল ৩২ কোটি টাকা। তবে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের পরিবারগুলির সঙ্গে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমিয়ে ২২ কোটি টাকা করা হয় বলে জানান ডেভিড কেভম।

তিনি বলেন, শুক্রবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী মঙ্গলবার থেকে দুটি দল মাহুর অংশের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম এবং হারাঙ্গাজাও অংশের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলিতে স্পট ভিজিট করে এক প্রতিবেদন তৈরি করে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছে দাখিল করবেন।

এদিকে বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণের ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সঙ্গে অভব্য আচরণে জড়িয়ে পড়েন। সাংবাদিকদের সঙ্গে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এ ধরনের অভব্য আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরামের সভাপতি ডেভিড কেভম বলেন, এটাই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আধিকারিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *