ত্রিপুরা থেকে ১২ টি বন্দী হাতি গুজরাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা

আগরতলা, ১৬ ফেব্রুয়ারি : মাহুত দ্বারা স্বেচ্ছায় বন বিভাগের কাছে সমর্পণের পর রাজ্যের প্রায় ১২টি বন্দী হাতি গুজরাটের জামনগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে।  এইগুলির মধ্যে রয়েছে  বয়স্ক, শারীরিকভাবে দুর্বল হাতি৷   রাধে কৃষ্ণ মন্দির এলিফ্যান্ট ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট  তাদের বাকি জীবনের যত্ন নেবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের জনৈক প্রবীণ কর্মকর্তা। 

বন অধিকর্তা বলেন, ত্রিপুরা থেকে অন-ট্রানজিট ব্যাচ সহ মোট ২৩টি বন্দী হাতি জামনগর-ভিত্তিক বিশ্বমানের সুবিধায় পরিবহন করা হয়েছে যাতে তারা যথাযথ যত্ন পায়। “বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন” কঠোর করার পর ত্রিপুরার অনেক মাহুত তাদের হাতি বন বিভাগের কাছে সমর্পণ করেছে। নতুন আইন অনুযায়ী, হাতিদের কঠোর পরিশ্রম বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না।  আগের মতো পর্যটন কার্যক্রম বা শোভাযাত্রায়ও ব্যবহার করা যায়না।  পাশাপাশি, সমস্ত মাহুতকে উপযুক্ত পশুখাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এই বিধানগুলি কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে, অনেক লোক পশুর উপর তাদের অধিকার ছেড়ে দেয় কারণ এতে তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একটি হাতির সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা একটি ব্যয়বহুল কাজ। 

সূত্রের খবর অনুযায়ী, মন্দির ট্রাস্টে হাতি স্থানান্তর মোকাবেলায় সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি বন্যপ্রাণী বিশেষ করে হাতির জীবনযাত্রার অবস্থা দেখার জন্য দেশের সর্বত্র পরিদর্শনে যায়। যদি তারা প্রাণীর বাসস্থান, খাওয়া-দাওয়া এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি খুঁজে পান, কমিটি প্রাণীটিকে বিশ্বমানের উদ্ধার সুবিধায় স্থানান্তর করার নির্দেশনা দেন। যারা তাদের হাতি দান করতে চায় তাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির আদেশের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। একটি দলিল স্বাক্ষরিত হয় যা মালিকদের আইনী অধিকার বাতিল করে দেয়।

ত্রিপুরা থেকে জামনগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া হাতিদের তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বনবিভাগের আধিকারিক। তিনি আরো জানান, কমিটির আধিকারিকরা একাধিকবার জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন হাতিদের কী ধরণের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তা তদারকি করতে।  তাদের কাছে পশুর সব ধরণের প্রয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। 

বন বিভাগের আধিকারিক বিস্তারিত বলতে গিয়ে আরো জানিয়েছেন যে, ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে, রাজ্যে মোট ৭৪টি প্রাপ্তবয়স্ক বন্দী হাতি এবং পাঁচটি শাবক ছিল। তার কথায়, ত্রিপুরার সবচেয়ে ভাল জিনিস হল রাজ্যজুড়ে আমাদের সমস্ত বন্দী হাতি মাইক্রো-চিপড।  রক্তের নমুনা ও ডিএনএ স্যাম্পলিংয়ের জন্য বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। উত্তর-পূর্বে, ত্রিপুরা হল প্রথম রাজ্য যেটি সমস্ত বন্দী হাতির ডিএনএ নমুনা এবং মাইক্রো-চিপ ইনস্টলেশন নিশ্চিত করেছে। 

উল্লেখ্য, ত্রিপুরা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশনও দাখিল করা হয়েছিল যে হাতি পরিবহন আইনবিরোধী। বেশ কিছু বন্যবিভাগের কর্মী এই বিষয়ের প্রতিবাদ করেছেন এই বলে যে গুজরাটের আবাসস্থল প্রাকৃতিক আবাসস্থল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা যেখানে তারা আছে। তবে এর আগে অরুণাচল প্রদেশ থেকেও গুজরাটে হাতি পাঠানো হয়েছিল।