আগরতলা, ৭ ফেব্রুয়ারি : মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু আগামীদিনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। আজ একথা খোদ মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর(ডা.) মানিক সাহা জানিয়েছেন।
জনগণের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচির বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অনুভূতির কথাও আজ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জনগণের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পেরে নিজেদের মধ্যেও তৃপ্তি আসে। তিনি জানান, জেলা ও মহকুমায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ যেন সহজেই তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারেন তারজন্য আগামীদিনে মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচির ২৭তম পর্বে আজ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রত্যাশী জনগণ মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার সাথে সাক্ষাৎ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে দীর্ঘক্ষণ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জনগণের অভাব অভিযোগ ও নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হন। অধিকাংশই এসেছিলেন চিকিৎসায় সহায়তার আর্জি নিয়ে। তাৎক্ষণিক সহায়তার পাশাপাশি প্রত্যেকের সমস্যা সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।
মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে আজ আগরতলার পিন্টু বর্ধন তার কন্যা পৌষালী বর্ধনের চিকিৎসার সহায়তার আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। পৌষালী গত ৬ বছর যাবৎ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকরা তাকে ইনসুলিন পাম্পের পরামর্শ দিয়েছেন। খোয়াইয়ের পূর্ব সোনাতলার শ্যামল দেবরায় থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তার কন্যা সন্তান অঙ্কিতা দেবরায়-এর চিকিৎসায় সহায়তার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত অঙ্কিতার বহিরাজ্যে চিকিৎসার পরও তার শারীরিক অবস্থায় কোন উন্নতি হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী পৌষালী ও অঙ্কিতার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সহায়তার পাশাপাশি সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেন।
মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে আগরতলার লক্ষ্মীরাণী রায় (দত্ত) তার ছেলের চিকিৎসায় সহায়তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান। তার ছেলে বর্তমানে জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তেমনি নোওগাঁও কৃষ্ণনগরের পূর্বিতা চক্রবর্তী তার বাবার চিকিৎসার সহায়তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন।
অনেক চিকিৎসার পরেও পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল তার বাবার শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। পূর্বিতা ঋণ নিয়ে বি-টেক পড়াশুনা করেছেন। এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী জিবি হাসপাতালের ডেপুটি সুপারকে লক্ষ্মীরাণী রায় (দত্ত)-এর ছেলে এবং পূর্বিতার বাবার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সহায়তার নির্দেশ দেন। খোয়াই লালছড়ার সুমন দাস ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার সহায়তার আবেদন জানালে মুখ্যমন্ত্রী সাথে সাথে আগরতলা ক্যান্সার হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারকে সুমনের মায়ের চিকিৎসার সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
আগরতলার দক্ষিণ জয়নগরের রবি দেবের অসুস্থতার কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী জিবি হাসপাতালের ডেপুটি মেডিক্যাল সুপারকে তার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তার সঙ্গে আসা কন্যা লিপিকা দেবনাথকে সামাজিক ভাতা দেওয়ার বিষয়ে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিবকে নির্দেশ দেন। কৈলাসহরের দেবকুমার সিনহা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, তার ৪ বছরের ছেলে অটিজম ডিসঅর্ডার সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা নিয়মিত থ্যারাপির পরামর্শ দিয়েছিলেন। আগরতলাতেই একমাত্র থ্যারাপি সেন্টার রয়েছে। দেবকুমার সিনহার স্ত্রী ধলাই জেলাতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকায় ছেলের নিয়মিতভাবে থ্যারাপি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরজন্য তিনি তার স্ত্রীর বদলির আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এই বিষয়েও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সিনহাকে আশ্বস্ত করেন।
এছাড়া কলেজটিলার আদর্শপল্লীর সন্ধ্যারাণী সিং দাস, স্বামী বিবেকানন্দ আবাসনের মঞ্জু দে, রামনগরের নিভা চৌধুরী দাসের স্বামীর চিকিৎসা, বিবিকা চাকমার দিদির চিকিৎসা, বাধারঘাট শ্রীপল্লীর স্বপ্না রায় মন্ডলের স্বামীর চিকিৎসা, রামনগরের কুমার নারায়ণ চৌধুরী সহ অনেকেই চিকিৎসার সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু এই কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যে, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, জিবি হাসপাতালের ডেপুটি মেডিক্যাল সুপার ডাঃ কনক চৌধুরী, অটল বিহারী বাজপেয়ী রিজিওন্যাল ক্যান্সার হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডা. শিরোমণি দেববর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।