BRAKING NEWS

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অগ্রগতির মহান সুযোগ, সীমাহীন সম্ভাবনা এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য প্রদর্শনের একটি চমৎকার সুযোগ উত্তর-পূর্ব সম্মেলন : জি কিষাণ রেড্ডি

নয়াদিল্লি, ০৫ ফেব্রুয়ারি ৷৷ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ নয়াদিল্লির ডঃ আম্বেদকর আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে ‘উত্তর-পূর্ব শীর্ষ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি ও পর্যটন উন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু, উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন ও সমবায় উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বি এল ভার্মা, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক এবং কেন্দ্রীয় বিদেশ ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সাংসদ এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির বিধায়করাও এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন দায়িত্বশীল আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। দিল্লির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠরত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সহ এই সমাবেশে সহস্রাধিক দর্শক উপস্থিত ছিলেন। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার জন্য ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারপ্রাপ্ত সানখুমি বুয়ালসুওয়াকের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

বাবাসাহেব আম্বেদকরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। মন্ত্রীরা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দ্বারকায় ‘উত্তর-পূর্ব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং নয়াদিল্লির জেএনইউতে ‘বরাক হোস্টেল’-এর উদ্বোধন করেন এদিন। দ্বারকায় ১১৬.৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ‘উত্তর-পূর্ব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি’তে একটি প্রেক্ষাগৃহ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তথ্য সম্বলিত একটি গ্রন্থাগার, একটি পাঠকক্ষ, এই অঞ্চলের শিল্প প্রদর্শনের জন্য একটি আর্ট গ্যালারি, একটি প্রদর্শনী হল, একটি গবেষণা কেন্দ্র, একটি বিক্রয় কেন্দ্র এবং একটি অতিথিশালা থাকবে। কেন্দ্রটিতে রাষ্ট্রীয় তাঁত শিল্পের প্রদর্শনী, ‘ফুড কোর্ট’ এবং প্রদর্শনী স্থানের মতো সুবিধাও থাকবে। নয়াদিল্লির জেএনইউ-তে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য স্থাপিত ‘বরাক হোস্টেল’ নির্মাণে প্রায় ২৮.৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ছাত্র ও ছাত্রী উভয়ের জন্য ২১৪ টি কক্ষ রয়েছে, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধার সুযোগ প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চল, সংস্কৃতি ও পর্যটন বিকাশ মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমাহীন সম্ভাবনা এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরার একটি দুর্দান্ত সুযোগ হল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শীর্ষ সম্মেলন। তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছরে ভারত সরকার উত্তর-পূর্বের উন্নয়নে ৫ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করেছে এবং সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের সমস্ত ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি ছড়িয়ে পড়েছে। জনসাধারণের স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রয়োজনের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে এই অঞ্চলে অত্যাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপটি কেবল এই অঞ্চলের মানুষের বহিঃরাজ্যে যাতায়াতের সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগই দেবে না, তাদের আরও ভাল সুযোগ-সুবিধা পেতে সক্ষম করবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, কৃষি এবং কর্মসংস্থানের সম্ভাবনায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ সহ গত দশকে অর্জিত সাফল্যের কথাও তিনি তুলে ধরেন। প্রধান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, ক্রীড়া পরিকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ প্রকল্প যেমন ‘কালাদান মাল্টি মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’ এবং ‘ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্প’, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি প্রতীক।

‘উত্তর-পূর্ব শীর্ষ সম্মেলন’-এ শ্রোতাদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বি এল ভার্মা উল্লেখ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উন্নয়নে উত্তর-পূর্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকেই কেবল স্বীকৃতি দেননি, জাতীয় সমৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় অগ্রাধিকারের জন্যও একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন। এই জোর এই অঞ্চলের উন্নয়ন এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য, বিশেষত ‘অষ্ট লক্ষ্মী’র আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য কার্যকর শাসন এবং পদক্ষেপের জন্য একটি প্রতিশ্রুতির নিদর্শন৷

কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রী কিরেন রিজিজু তাঁর ভাষণে উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীদের জন্য জেএনইউ-তে ‘বরাক হোস্টেল’-এর গুরুত্বপূর্ণ সূচনা এবং নতুন দিল্লির দ্বারকায় ‘উত্তর-পূর্ব সংস্কৃতি ও সামাজিক ইনস্টিটিউট’-এর শিলান্যাস প্রত্যক্ষ করার জন্য উত্তর-পূর্বের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বে সরকার ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তৃণমূল স্তরে প্রকল্পগুলির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে মন্ত্রিপরিষদ এই অঞ্চলে মাসিক সফর করছেন। তিনি শান্তির সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং এক্ষেত্রে যুবসমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। এ অঞ্চলে অব্যাহত শান্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, জনগণের নেতৃত্বে উন্নয়নের মাধ্যমেই এই অঞ্চলের প্রকৃত অগ্রগতি সম্ভব।

এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রোডম্যাপ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে একটি বিশেষ ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। গত এক দশকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিম্নলিখিত সাফল্যগুলি তুলে ধরা হয়েছে এই অনুষ্ঠানে।

§  শিক্ষায় ২১,১৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ, ৮৪৩টি স্কুল স্থাপন, ২৫,৬৪,৬২৮ জন শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রাথমিক শিক্ষায় পরিকাঠামো উন্নয়নকে প্রধান সাফল্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

§  এইমস আসাম, ‘আইআইএমসি মিজোরাম’ এবং মণিপুরে ভারতের প্রথম জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে।

§  স্বাস্থ্য পরিচর্যার সাফল্যগুলির মধ্যে রয়েছে ৩১,৭৯৪ কোটি টাকা ব্যয়, প্রথম ‘এইমস’ উদ্বোধন, ১৯টি রাজ্য ক্যান্সার প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন এবং ৩৮৭টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আয়ুষ সুবিধার সংযুক্তিকরণ।

§   কৃষিক্ষেত্রে সাফল্যের মধ্যে রয়েছে সিকিমে জৈব চাষের জন্য ১.৫৫ লক্ষ হেক্টর জমি ব্যবহার, পিএমকেএসওওয়াইয়ের অধীনে ১,৪৩২ কোটি টাকা অনুমোদন এবং বন ধন বিকাশ যোজনা চালু করা।

§  ‘জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়’, ২০৩টি ক্রীড়া পরিকাঠামো প্রকল্প এবং যুব/ক্রীড়া ও দক্ষতা উন্নয়ন সাফল্যের জন্য ২০৭ জন ক্রীড়াবিদকে স্বীকৃতি প্রদান।

§   ৩,৪৯,২৯১ জনের কর্মসংস্থান এবং ১০০ কোটি টাকা নিয়ে ‘নর্থ ইস্ট ভেঞ্চার ফান্ড’ চালু করা হয়েছে।

§   বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সাফল্যের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর জন্য ৩৭,০৯২ কোটি টাকা অনুমোদন, ৭৭.৪১ লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ‘উত্তর-পূর্ব গ্যাস গ্রিড প্রকল্প’।

§   সুশাসনের উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সফর, ‘nesetu.mdoner.gov.in‘ পোর্টালের সূচনা এবং ‘ফিল্ড টেকনিক্যাল সাপোর্ট গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা।

§  পর্যটন উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে স্বদেশ দর্শন ও প্রসাদ প্রকল্পের জন্য ১৫০২.৪৮ কোটি টাকা অনুমোদন এবং “গন্তব্য উত্তর পূর্ব ২০২০” চালু করা।

§  ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ আন্তর্জাতিক সংযোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, যেমন ‘কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’ এবং ‘ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্প’, বাণিজ্য ও পর্যটন বৃদ্ধি।

§  আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে ২০২৩ সালে উদ্বোধন হওয়া আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ এবং ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন।

মন্ত্রীরা হস্তশিল্প, হস্তচালিত তাঁত, কৃষি ও উদ্যানজাত পণ্য এবং ‘স্টার্টআপ’ এর একটি প্রদর্শনীও ঘুরে দেখেছেন এবং শিল্পী ও উদ্যোক্তাদের সাথে একটি বৈঠকও করেছেন।

বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনার সাথে সুসংগঠিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। এই উদ্যোগগুলি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনন্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ভারত সরকারের প্রচেষ্টাকে সমষ্টিগতভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। উল্লিখিত অর্জনগুলি কেবল মাইলফলকই নয়, এই অঞ্চলের উজ্জ্বল এবং আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *