ত্রিপুরা পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সৌরভ গাঙ্গুলী নিযুক্ত হওয়ার পর রাজ্যে পর্যটকের আগমন এবং রাজস্ব আয়ের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে: পর্যটন মন্ত্রী

আগরতলা, ১ ফেব্রুয়ারি: রাজ্য পর্যটনকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করছে। ইতিমধ্যেই গত অক্টোবর মাসে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীকে ত্রিপুরা পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছে। এতে রাজ্যে পর্যটকের আগমন এবং রাজস্ব আয়ের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই দাবি করলেন পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ।

তিনি ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর এই তিন মাসে রাজ্যে পর্যটক আগমন এবং পর্যটন দপ্তরের রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে অক্টোবরে, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর এই তিন মাসে রাজ্যে মোট পর্যটক আগমন হয় ৮৪ হাজার ২১৭ জন। এর মধ্যে বৈদেশিক পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯৬৪ জন এবং রাজস্ব আদায় হয় ১ কোটি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই তিন মাসে রাজ্যে মোট পর্যটক আসে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ১৮৩ জন এর মধ্যে বৈদেশিক পর্যটক ছিল ১৯ হাজার ৬১৪ জন এবং এতে দপ্তরের রাজস্ব আদায় হয় ১ কোটি ২৩ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা।

মন্ত্রী জানিয়েছেন,এই পরিসংখ্যান প্রতিফলিত করে সৌরভ গাঙ্গুলীকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করার ফলে রাজ্য পর্যটনের উন্নতির পাশাপাশি রাজ্যে পর্যটক আগমনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আগামীতে আরও উন্নতি ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদিন তিনি জানিয়েছেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ছবিমুড়াতে ৫১টি লগ হাট নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ৪১টি লগ হাট চালু করা হয়েছে, বাকি ১০টি লগ হাটগুলিও শীঘ্রই চালু করা হবে। প্রাথমিকভাবে নারকেলকুঞ্জের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১১টি ‘হোম স্টে’ এবং জম্পুই হিলে ০৪টি হোম স্টে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ১১টি হোম স্টে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ চালু করা হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, আগামী দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই রকম হোম স্টে চালু করার সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও রাজ্য
সরকারের লক্ষ রয়েছে হোম স্টে পলিসিও হাতে নেওয়া।

তিনি জানিয়েছেন, ডোনার মন্ত্রকের আওতাধিনে উত্তর-পূর্ব বিশেষ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে নারকেলকুঞ্জের আশে-পাশে আরও ৪টি আইল্যান্ড যথাক্রমে – চিত্তপাড়া, অমূল্যসাধন পাড়া ও টুইন আইসল্যান্ড ইত্যাদি পর্যটকদের জন্য সাজিয়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘উত্তর-পূর্ব বিশেষ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ থেকে ৩০ কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পাওয়া গেছে এবং এর জন্য ডিপিআর তৈরীর কাজ চলছে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, পর্যটন পরিকাঠামো বিকাশের লক্ষ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর সহায়তার ছবিমুড়া, কৈলাশহরের সোনামুখী এলাকা, চতুর্দশ দেবতা মন্দির এবং কসবা কালী মন্দির চত্তরের পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। চতুর্দশ দেবতা মন্দির এবং কসবা কালী মন্দিরের জন্য এই প্রকল্পে ব্যায় করা হবে যথাক্রমে ১২ কোটি ৫১ লক্ষ এবং ১৭ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা।

মন্ত্রী আরও জানান, মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের উন্নয়নে ভারত সরকারের প্রসাদ প্রকল্পের ৩৭ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে এবং এর কাজ চলছে। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে ২৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়াও স্বদেশ দর্শন ২.০ প্রকল্পে আগরতলা ও ঊনকোটি ডেস্টিনেশনকে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই দুটি ডেস্টিনেশনের জন্য প্রায় ৭০ কোটি করে মোট ১৪০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, ডম্বুর জলাশয়ের জন্য অত্যাধুনিক হাউজ বোট ক্রয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটনমন্ত্রী রাজ্য পর্যটনের আরও কিছু উন্নয়মুখী প্রকল্পের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।