অন্তর্বর্তী কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৪-২৫-এর বিশেষ অংশ

নতুন দিল্লি,  ১ ফেব্রুয়ারি : ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ এবং সবকা বিশ্বাস’-এর ‘মন্ত্র’ নিয়ে এবং সারা দেশের ‘সবকা প্রয়াস’-এর ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন আজ সংসদে অন্তর্বর্তী কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৪-২৫ পেশ করেছেন। বাজেটের মুখ্য অংশগুলি নিম্নলিখিত –

পর্ব-ক

সামাজিক ন্যায়

• প্রধানমন্ত্রী চারটি প্রধান শ্রেণীর উন্নয়নে নজর দেবেন সেগুলি হল  – ‘গরীব’, ‘মহিলা’, ‘যুব’ ও ‘অন্নদাতা (কৃষক)’।

‘গরীব কল্যাণ, দেশের কল্যাণ’

• সরকার গত ১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে বহুস্তরীয় দারিদ্র থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করেছে।

• পিএম জনধন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৩৪ লক্ষ কোটি টাকার ডিবিটি সরকারের ২.৭ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে।

• পিএম স্বনিধি ৭৮ লক্ষ পথবিক্রেতাকে ঋণ সহায়তা দিয়েছে। ২.৩ লক্ষ বিক্রেতা তৃতীয়বারের জন্য ঋণ পেয়েছে।

• পিএম-জনমন যোজনা বিশেষ ভাবে বঞ্চিত আদিবাসী গোষ্ঠীর উন্নয়নে সাহায্য করবে।

• পিএম-বিশ্বকর্মা যোজনা ১৮টি পেশায় নিযুক্ত শিল্পী ও কারুশিল্পীদের সর্বত্র সাহায্য দিচ্ছে।

‘অন্নদাতা’-র কল্যাণ

• পিএম-কিষাণ সম্মান যোজনা ১১.৮ কোটি কৃষককে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

• পিএম ফসল বীমা যোজনায় ৪ কোটি কৃষককে শস্য বীমা দেওয়া হয়েছে।

• ইলেকট্রনিক্স ন্যাশনাল এগ্রিকালচার মার্কেট (ই-ন্যাম) সংযুক্ত করেছে ১৩৬১ মান্ডিকে, ১.৮ কোটি কৃষককে পরিষেবা প্রদান করেছে, যার ব্যবসায়িক পরিমাণ ৩ লক্ষ কোটি টাকা।

নারীশক্তির জন্য গতি

• ৩০ কোটি মুদ্রা যোজনার ঋণ দেওয়া হয়েছে মহিলা উদ্যোগপতিদের।

• উচ্চ শিক্ষায় মহিলাদের নথিভুক্তি ২৮% বেড়েছে।

• এসপিইএম পাঠ্যক্রমে মোট নথিভুক্তদের মধ্যে বালিকা এবং মহিলাদের সংখ্যা ৪৩%, বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ।

• পিএম আবাস যোজনায় ৭০%-এর বেশি বাড়ি দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের।

পিএম আবাস যোজনা (গ্রামীণ)

• কোভিড সমস্যা সত্বেও পিএম আবাস যোজনা (গ্রামীণ)-র অধীনে ৩ কোটি বাড়ির লক্ষ্য খুব শীঘ্রই পূরণ হবে।

• আগামী ৫ বছরে আরও ২ কোটি বাড়ির কাজ হাতে নেওয়া হবে।

ছাদের ওপর সৌরশক্তি উৎপাদন এবং বিনামূল্যে বিজলী

• ছাদের ওপর সৌরশক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১ কোটি পরিবার বিনামূল্যে ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ পাবে।

• আশাকরা যায় প্রতিটি পরিবারে সাশ্রয় হবে বছরে ১৫,০০০ থেকে ১৮,০০০ টাকা।

আয়ুষ্মান ভারত

• আয়ুষ্মান ভারত কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য পরিষেবার আওতায় আসবেন সব আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়িকর্মী এবং সহায়িকারা।

কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ

• প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্পদ যোজনায় উপকৃত হয়েছেন ৩৮ লক্ষ কৃষক এবং ১০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

• প্রধানমন্ত্রী ফর্মালাইজেশন অফ মাইক্রোফুড প্রসেসিং এন্টারপ্রাইজেস যোজনা ২.৪ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ৬০,০০০ জনকে ঋণ পেতে সাহায্য করেছে।

বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং উন্নয়নকে একসঙ্গে মেলাতে গবেষণা এবং উদ্ভাবন

• দীর্ঘ মেয়াদে নিম্ন হারে অথবা বিনা সুদে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থ প্রদান অথবা পুনঃঅর্থ প্রদানে ৫৫ বছরের জন্যবিনা সুদে ঋণ দিতে ১ লক্ষ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠিত হবে।

• প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের জন্য এবং ‘আত্মনির্ভরতা’ দ্রুত ঘটাতে ডিপ-টেক প্রযুক্তি শক্তিশালী করার জন্য একটি নতুন কর্মসূচি চালু হয়।

পরিকাঠামো

• পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য মূলধনী খাতে ব্যয় ১১.১% বাড়িয়ে ১১,১১,১১১ কোটি টাকা করা হবে, যা জিডিপি-র ৩.৪%।

রেল

• লজিস্টিক্স কার্যকারিতার উন্নতি করতে এবং খরচ কমাতে পিএম গতিশক্তির অধীনে রূপায়ণ করার জন্য তিনটি প্রধান ইকোনমিক রেলওয়ে কোরিডর চিহ্নিত করা হয়েছে

o শক্তি, খনিজ এবং সিমেন্ট কোরিডর

o বন্দর, যোগাযোগ কোরিডর

o হাই ট্রাফিক ডেনসিটি কোরিডর

• ৪০,০০০ সাধারণ রেল কামরাকে বন্দে ভারত মানের করা হবে।

উড়ান ক্ষেত্র

• দেশে বিমানবন্দরের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১৪৯।

• ৫১৭টি নতুন উড়ান পথ ১.৩ কোটি যাত্রী পরিবহণ করছে।

• ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলি ১,০০০টির বেশি নতুন বিমান কেনার বরাত দিয়েছে।

গ্রিন এনার্জি

• ২০৩০-এর মধ্যে ১ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন কোল গ্যাসিফিকেশন অ্যান্ড লিক্যুইফিকেশন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

• অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য পরিবহণ এবং নলবাহিত প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য কমপ্রেস্ট ন্যাচারাল গ্যাসে পর্যায়ক্রমে কমপ্রেস্ট বায়োগ্যাস মিশ্রণ বাধ্যতামূলক করা হবে।

পর্যটন ক্ষেত্র

• রাজ্যগুলিকে উৎসাহ দেওয়া হবে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির সার্বিক উন্নয়ন এবং বিশ্ব স্তরে সেগুলির ব্র্যান্ডিং এবং বিপণন করার জন্য।

• সুবিধা এবং পরিষেবার গুণমানের ভিত্তিতে পর্যটন কেন্দ্রগুলির রেটিং কাঠামো তৈরি করা হবে।

• এমনই উন্নয়নে কেন্দ্র ও রাজ্যের সমদায়িত্বের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হবে।

বিনিয়োগ

• ২০০৫-১৪ বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমাণ ২০১৪ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯৬ বিলিয়ন ডলার।

‘বিকশিত ভারত’-এর জন্য রাজ্যগুলির সংস্কার

• রাজ্য সরকারগুলির মাইলফলক-যুক্ত সংস্কারকে সাহায্য করতে ৫০ বছরের সুদহীন ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে।

পুনর্বিবেচিত পূর্বাভাস রিভাইজড এস্টিমেটস (আরই) ২০২৩-২৪

• ঋণ ব্যতীত মোট আয়ের আরই ২৭.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা, যার মধ্যে কর বাবদ আয় ২৩.২৪ লক্ষ কোটি টাকা।

• মোট ব্যয়ের আরই ৪৪.৯০ লক্ষ কোটি টাকা।

• আশাকরা হচ্ছে বাজেটের পূর্বাভাসের থেকে রাজস্ব বাবদ আয় বেড়ে হবে ৩০.০৩ লক্ষ কোটি টাকা, যা শক্তিশালী বৃদ্ধির গতি এবং অর্থনীতির সাধারণীকরণের প্রতীক।

• আর্থিক ঘাটতির আরই ২০২৩-২৪-এর জিডিপি-র ৫.৮ শতাংশ।

বাজেট পূর্বাভাস২০২৪-২৫

• ঋণ ব্যতীত মোট আয়এবং মোট ব্যয় পূর্বাভাস অনুযায়ী যথাক্রমে ৩০.৮০ লক্ষ কোটি টাকা এবং ৪৭.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

• কর বাবদ আয় ২৬.০২ লক্ষ কোটি টাকা হতে পারে।

• রাজ্যগুলিকে মূলধনী ব্যয়ের জন্য ৫০ বছরের সুদবিহীন ঋণের কর্মসূচি এবছরও চলবে যার জন্য মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা।

• ২০২৪-২৫-এ আর্থিক ঘাটতি জিডিপি-র ৫.১ শতাংশ হতে পারে।

• ২০২৪-২৫-এ সিকিউরিটির মাধ্যমে বাজার থেকে নেওয়া মোট এবং নিট ঋণের পরিমাণ হতে পারে যথাক্রমে ১৪.১৩ লক্ষ কোটি টাকা এবং ১১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা।

পর্ব-খ

প্রত্যক্ষ কর

• সকল প্রত্যক্ষ করের একই হার বজায় রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী

• গত ১০ বছরে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ তিনগুণ হয়েছে, রিটার্ন জমার সংখ্যা বেড়েছে ২.৪ গুণ

• সরকার কর দাতা পরিষেবার উন্নতি করবে

o ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত পর্বে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বকেয়া প্রত্যক্ষ কর দাবি প্রত্যাহার করা হয়েছে

o ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বকেয়া প্রত্যক্ষ করের দাবি প্রত্যাহার করা হয়েছে

o এতে উপকৃত হবেন ১ কোটি কর দাতা

• স্টার্টআপদের জন্য করের সুবিধা, সভরেন ওয়েল ফান্ড এবং পেনশন ফান্ডের লগ্নি বাড়ানো হয়েছে ৩১.০৩.২০২৩ পর্যন্ত

• আইএফএসসি ইউনিটে নির্দিষ্ট আয়ের ওপর কর ছাড় ৩১.০৩.২০২৪ থেকে এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ করা হয়েছে

পরোক্ষ কর

• পরোক্ষ কর এবং আমদানি শুল্কের জন্য একই কর হার বজায় রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী

• ভারতে অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন পরোক্ষ কর ব্যবস্থাকে ঐকবদ্ধ করেছে জিএসটি

o এবছর গড় মাসিক মোট জিএসটি সংগ্রহ দ্বিগুণ হয়ে ১.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে

o জিএসটি-র করদাতার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে

o জিএসটি-পূর্ব পর্বে (২০১২-১৩ থেকে ২০১৫-১৬) ০.৭২ থেকে রাজ্যে এসজিএসটি রাজস্ব বৃদ্ধি (রাজ্যগুলিকে দেওয়া ক্ষতিপূরণ সহ) বেড়ে জিএসটি পরবর্তী পর্বে (২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩) হয়েছে ১.২২

o ৯৪% শিল্পপতিরা জিএসটি প্রবর্তনকে ইতিবাচক হিসেব দেখছেন

o জিএসটি-র ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারসাম্য এসেছে

o জিএসটি ব্যবসা ও শিল্পের ওপর বিধি নির্দেশ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা কমিয়েছে

o লজিস্টিকস বাবদ খরচ এবং কর হ্রাস পাওয়ায় পণ্য ও পরিষেবার দাম কমেছে, উপকৃত হয়েছে উপভোক্তারা

গত কয়েক বছরে কর ব্যবস্থায় সমতাকরণের প্রয়াস

• ২০১৩-১৪-য় ২.২ লক্ষ টাকা থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের মানুষের জন্য কোন কর নেই

• খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য আগাম করের মাত্রা ২ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩ কোটি টাকা

• পেশাদারদের আগাম করের জন্য মাত্রা ৫০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭৫ লক্ষ টাকা

• চালু দেশী কোম্পানিগুলির জন্য কোম্পানি আয়কর ৩০% থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ২২%

• নতুন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলির জন্য কর্পোরেট আয়করের হার ১৫%

করদাতা পরিষেবার সাফল্য

• ট্যাক্স রিটার্ন খতিয়ে দেখার গড় সময় ২০১৩-১৪-য় ৯৩ দিনের তুলনায় বর্তমানে হয়েছে ১০ দিন

• আরও বেশি কার্যকারিতার জন্য ব্যক্তির বিনা উপস্থিতিতে অ্যাসেসমেন্ট এবং আপিল ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে

• সরলীকৃত রিটার্ন ফাইলের জন্য নতুন করে আয়কর রিটার্ন, নতুন ফর্ম ২৬এএস এবং পূর্ব লিখিত ট্যাক্স রিটার্ন

• সীমা শুল্ক সংস্কারে আমদানিকৃত পণ্য পাওয়ার সময় কমেছে

o ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোয় ৪৭% সময় কমে হয়েছে ৭১ ঘন্টা

o এয়ার কার্গো কমপ্লেক্সে ২৮% সময় কমে হয়েছে ৪৪ ঘন্টা

o সমুদ্র বন্দরে ২৭% সময় কমে হয়েছে ৮৫ ঘন্টা

অর্থনীতি – তখন এবং এখন

• ২০১৪-য় অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানো এবং শাসন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু করার দায়িত্ব ছিল তখন যেটা প্রয়োজনীয় ছিল সেটা হল :

o লগ্নি আকর্ষণ

o অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারকে সাহায্য করা

o মানুষকে আশা দেওয়া

• ‘দেশ আগে’ এই কঠোর বিশ্বাস নিয়ে সরকার সাফল্য লাভ করেছে

• অর্থমন্ত্রী :“এখনই ঠিক সময় দেখার যে ২০১৪ পর্যন্ত কোথায় ছিলাম আর এখন আমরা কোথায় আছি”

o সরকার কক্ষে শ্বেতপত্র পেশ করবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *