।। সন্দীপ বিশ্বাস।।
বারাণসী সফররত, ১৩ জানুয়ারি : সারা দেশে যখন বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা চলছে, ঠিক তখনই বিকশিত ভারতের প্রতিফলন ভারতীয় রেলের উৎপাদনেও দারুণভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। রেল মন্ত্রকের অধীনে বারাণসী লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপ(বিএলডব্লিউ) ইতিমধ্যে ৯৯ শতাংশ স্বদেশী(মেড ইন ইন্ডিয়া) সামগ্রী ব্যবহার করে ইঞ্জিন তৈরিতে সফল হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ স্বদেশী সামগ্রী দিয়ে ইঞ্জিন তৈরি সম্ভব হবে বলে আত্মবিশ্বাসের সাথে জানালেন সংস্থার জেনেরাল ম্যানেজার বাসুদেব পান্ডা। তাঁর দাবি, দেশের পাশাপাশি বিদেশেও এই সংস্থা থেকে তৈরি ইঞ্জিন সরবরাহে দারুন সফলতা মিলেছে।
বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার অন্তর্গত সাংবাদিকদের এক প্রতিনিধি দল এইমুহুর্তে ত্রিপুরা থেকে বারাণসী সফরে রয়েছে। ওই সফরকালে সাংবাদিকরা বারাণসী লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপ পরিদর্শন করেছেন এবং বিশ্বমানের ইঞ্জিন তৈরির কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। ওই সংস্থা বর্তমানে পণ্যবাহী এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন বানাচ্ছে। সেখানে তৈরি ইঞ্জিন শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংসদীয় কেন্দ্র বারাণসী স্থিত ওই লোকোমোটিভ নির্মাণ ওয়ার্কশপ গত আট বছরে দারুন প্রশংসনীয় উপলব্ধির সাক্ষর রেখেছে। সংস্থার ওই সাফল্যে জিএম বাসুদেব পান্ডা ভীষণ খুশি এবং আগামী দিনে আরও উন্নতমানের ইঞ্জিন তৈরির প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি ওই সংস্থার উন্নতির ইতিবাচক দিকগুলি সুচারুভবে সাংবাদিকদের সম্মুখে তুলে ধরেছেন।
তাঁর কথায়, ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপ ১৯৫৬ সালের ২৩ এপ্রিল ডা. রাজেন্দ্র প্রসাদের হাত দিয়ে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপিত হয়েছিল এবং ১৯৬৪ সালের ৩ জানুয়ারি ওই সংস্থা ২১০.৬৮ হেক্টর জমিতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করেছিল। গত আট বছরে এই ওয়ার্কশপে উৎপাদন ক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর দাবি, ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে ডিজেল ইঞ্জিনের পাশাপাশি ইলেকট্রিক ইঞ্জিন তৈরিতেও সফলতা মিলেছে। এক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের ইলেকট্রিক ইঞ্জিন তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। মূলত, আটটি স্তরে বিভক্ত হয়ে সংস্থার সুদক্ষ প্রকৌশলীরা ইঞ্জিন তৈরি করছেন।
তাঁর বক্তব্য, ইতিপূর্বে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ইএমডি লোকোমোটিভ তৈরির জন্য আমেরিকার এলকো (ALCO) প্রযুক্তির উপর নির্ভর করা হতো। বর্তমানে স্বদেশী সামগ্রী ও প্রযুক্তির সহায়তায় ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে। সে মোতাবেক দক্ষতা এবং নিরাপত্তা উন্নত করার লক্ষ্যে স্বদেশী প্রযুক্তি আইআরটিএস(IRTS), ডিএএস(DAS) এবং সিভিআরএস(CVRS)-র ব্যবহারে লোকোমোটিভ আধুনিকীকরণের উপর সরকার জোর দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়নে অধিক জোর দেওয়া হয়েছে৷
এদিন তিনি অত্যন্ত উৎসাহের সাথে বলেন, বারাণসী লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপ বর্তমানে বছরে ৪৬০টি ইঞ্জিন তৈরি করছে। তাতে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন গড়ে দেড়টি লোকোমোটিভ তৈরি হচ্ছে। ১০০০০ তম লোকোমটিভ তৈরির মাইলফলকটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে উদ্বোধনের মাধ্যমে উদযাপিত হয়েছিল৷ তিনি জানান, ওই ১০ হাজার লোকোমোটিভের মধ্যে ৮৩০০টি ডিজেল ইঞ্জিন, বাকি ১৭০০টি বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন রয়েছে৷ জুন 2024 থেকে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনগুলির উত্পাদন শুরু হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে৷ তাঁর দাবি, বর্তমানে দেশে ডিজেল এবং বিদ্যুতের সহায়তায় ট্রেন চলছে। কারণ সারা দেশে বিদ্যুতের সহায়তায় ট্রেন চালানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। তবে, চলতি ইংরেজি বছরের জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
সংস্থার সিনিয়র ডিরেক্টর জেনারেল ম্যানেজার এবং সিপিআরও বিজয় বলেন, বিএলডব্লিউ-এর বৈশ্বিক প্রসার তানজানিয়া, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, সুদান, সেনেগাল, অ্যাঙ্গোলা, মালি, মোজাম্বিক এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলিতে বিস্তৃত রয়েছে। ওই দেশগুলিতে ১৭২টি ইঞ্জিন তৈরি করে দিয়েছে বিএলডব্লিউ। তার মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই ৪৯টি লোকোমোটিভ সরবরাহ করা হয়েছে। তাঁর দাবি, আন্তর্জাতিক রপ্তানি ছাড়াও বিএলডব্লিউ অভ্যন্তরীণ চাহিদাও পূরণ করেছে। এসএআইএল(SAIL), এনটিপিসি(NTPC), পোর্ট ট্রাস্ট, বিশাখাপত্তনম স্টিল প্ল্যান্ট, রাজ্য বিদ্যুৎ বোর্ড, ন্যালকো(NALCO), বিসিসিএল(BCCL), বিএমএমআইএল(BMMIL), জেএসডব্লিউ(JSW), ওপিজিসি(OPGC) ইত্যাদির মতো সংস্থাগুলিতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৬৩৩টি লোকোমোটিভ সরবরাহ করা হয়েছে।
সাথে তিনি যোগ করেন, বিএলডব্লিউ ছয় হাজারের অধিক কর্মীর সহায়তায় লোকোমোটিভ বিক্রির ফলে ২০১৫-১৬ অর্থ বছর পর্যন্ত ১৪২২ কোটি টাকা আয় করেছে। সংস্থা ২০২৩ জুন পর্যন্ত ১৫০০ ইলেকট্রিক ইঞ্জিন তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালের জুন মাসে সর্বকালের অধিক ৫১ টি ইঞ্জিন তৈরির সফলতা অর্জন করেছে।