সম্পদ নয়, মনের ওপরই নির্ভর করে সেবাকার্য : ভাইয়াজি জোশী

ভোপাল, ২০ ডিসেম্বর (হি.স.): ”সেবার ক্ষেত্রটি এমনই, যা সম্পদের উপর নির্ভরশীল নয়। সেবার জন্য হৃদয়ের প্রয়োজন। মন যখন প্রস্তুত হয়, তখন একজন ব্যক্তি সম্পদের তোয়াক্কা না করে সেবার জন্য রওনা দেয়।” এই অভিমত পোষণ করেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অখিল ভারতীয় কার্যকারিণীর সদস্য সুরেশ জি জোশী উপাখ্যা। তাঁর মতে, “সেবার কাজ পরিকল্পনা করে করা হয় না, হৃদয়ের ব্যথার অনুভূতিতে করা হয়। যারা সেবা করে তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে ‘সেবা পরম ধর্ম’ প্রমাণ করেছে।” ভারতীয় বিচার সংস্থা ন্যাস-এর পক্ষ থেকে ভোপালের রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী বক্তৃতামালার অন্তিম দিনে তিনি ‘সেবা পরম ধর্ম’ বিষয়ে নিজের বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন ভোপালের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর পরিচালক অধ্যাপক ডঃ গোবর্ধন দাস। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মধ্য ভারত প্রান্ত সঙ্ঘচালক ও ট্রাস্টের সভাপতি অশোক পান্ডে।

প্রধান বক্তা ভাইয়াজি যোশী বলেন, “ভারত ছাড়া আর কোথাও ধর্মের মতো কোনও শব্দ নেই। ধর্ম আমাদের ধারণার একটি ব্যাপক উপাদান। এর দু’টি দিক রয়েছে – তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, যারা ধর্ম পালন করেন তারাই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। একইভাবে সেবাও নীতির বিষয় নয়, আচরণের বিষয়। চিন্তা যখন বাস্তবে দৃশ্যমান হয়, সেবা দৃশ্যমান হয়।” তিনি বলেন, “সর্বোত্তম চিন্তা ব্যাখ্যা করা একটি ভিন্ন বিষয় কিন্তু আচারের মাধ্যমে সেই চিন্তার কাছাকাছি যাওয়াই হল আধ্যাত্মিক অনুশীলন। আমরা তত্ত্বে বলি যে বৈষম্য থাকা উচিত নয়, কিন্তু বাস্তবে তা দৃশ্যমান। যে কোনও জ্ঞান পূর্ণ হয় যখন তা বাস্তবে দৃশ্যমান হয়।” মহাভারতের ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দুর্যোধন ধর্ম জানতেন কিন্তু তা পালনে তার কোনও আগ্রহ ছিল না। তাই আমাদের প্রবণতা উচিত সেবা ও ধর্ম সম্পর্কে জানার দিকে নয়, বরং তা আমলে নেওয়া।” তিনি ছত্তিশগড়ের চম্পায় কুষ্ঠ রোগীদের সেবা করার প্রকল্প-সহ অনেক উদাহরণ উল্লেখ করেছেন।

সেবার ধারণা অনুভূতি থেকে আসে, বুদ্ধি নয় :

মহাত্মা গান্ধীজীর জীবনের একটি ঘটনা উল্লেখ করে ভাইয়াজি জোশী বলেন, গান্ধীজি বলতেন, আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি। তাই আমি আমার দ্বিতীয় জন্মটি রুটি আকারে পাই, যাতে আমি কারও পেট ভরাতে উপযোগী হতে পারি। মনের মধ্যে উদ্ভূত সংবেদনগুলির কারণে এই চিন্তা আসে। বুদ্ধির ভিত্তিতে নয় আবেগের ভিত্তিতে চিন্তা করলে সেবার অনুভূতি আসে।

বিচক্ষণতার অভাবের কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটে :

ভাইয়াজি জোশী বলেন, এটা নির্ভর করে আমরা কীভাবে আমাদের শারীরিক, বৌদ্ধিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তিকে ব্যবহার করি। যখন কেউ নিজের ক্ষমতা নিজের জন্য ব্যবহার করে তখন তাকে বলা হয় অধর্ম এবং যখন কেউ অন্যের জন্য ব্যবহার করে তখন তাকে বলা হয় ধর্ম। তিনি বলেন, আমাদের উচিত সঠিক ও অন্যায়ের বিচক্ষণতা গড়ে তোলা। এই বিচক্ষণতার অভাবে সব ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়।

নিস্কাম ভাব এর প্রকৃত অর্থ :

ভাইয়াজি জোশী বলেছেন, শ্রীমদ ভগবত গীতায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ সেই কাজটি বলেননি তবে ফলাফল নিয়ে চিন্তা করবেন না। এটি একটি নিঃস্বার্থ কাজ নয়। আসলে, আমাদের প্রতিটি কাজ শুধুমাত্র ফলাফলের জন্য করা উচিত। কাজের ফল আসে। তবে এই কাজের ফল যে আমার জন্যই হবে তা নয়। এই অনুভূতি নিয়ে করা কাজ নিঃস্বার্থ। তিনি বলেছিলেন, নরসি মেহতা বলতেন যে ‘বৈষ্ণব জান তো তেনে কাহিয়ে’ অর্থাৎ যারা অন্যের দুঃখ বোঝে তারাই ভগবানের ভক্ত। তুকারাম জি মহারাজ বলেছিলেন, যারা দুঃখে বাস করে তাদের নিজের বলে গ্রহণ করেন একমাত্র তিনিই সাধক। রামকৃষ্ণ পরমহংস মূর্খের মধ্যেও ঈশ্বরকে দেখেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ মানুষের সেবাকে নারায়ণের সেবা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি রাজা রন্তিদেবের উদাহরণও দিয়েছেন।

সংঘের স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগের মধ্যেও এগিয়ে আসেন এবং সেবা করেন : অধ্যাপক ডঃ গোবর্ধন দাস

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডঃ গোবর্ধন দাস বলেন, স্বেচ্ছাসেবক মানে যিনি অন্যের সেবা করতে প্রস্তুত। ‘সেবা পরম ধর্ম:’ হল ভারতের বীজমন্ত্র। সংঘের স্বেচ্ছাসেবকরাও এই মন্ত্রে বেঁচে থাকেন। যেখানেই বিপর্যয় আসে, সংঘের স্বেচ্ছাসেবকরা সর্বাগ্রে দাঁড়িয়ে সেবা করে। করোনার সময় সংঘের স্বেচ্ছাসেবকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা করেছেন। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে কেরল পর্যন্ত, স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও উদারভাবে সমাজের সেবা করেন। তিনি অনেক উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘সেবা পরম ধর্ম’ ভারতের ঐতিহ্য। আমাদের সংস্কৃতিতে পুরুষকে নারায়ণ হিসেবে দেখা হয়। আজকের তরুণ প্রজন্মকেও একই মূল্যবোধ দিতে হবে। তরুণদের মধ্যে মানবসেবার চেতনা জাগিয়ে তুলতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত বক্তৃতা দেন ডাঃ ক্ষত্রবীর সিং রাঠোর এবং সঞ্চালনা করেন ট্রাস্ট সেক্রেটারি সোমকান্ত উমালকার।

শ্রী গুরুদ্বার ম্যানেজমেন্ট কমিটি, তাতিয়া টোপে নগরকে সেবামূলক কাজের জন্য সম্মানিত করা হয়েছে

শ্রী গুরুদ্বার ম্যানেজমেন্ট কমিটি, তাতিয়া টোপে নগর স্বাস্থ্য সেক্টরে নিজস্ব সেবামূলক কাজের জন্য ভারতীয় বিচার সংস্থা ন্যাস দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছে। শ্রী গুরুদেব নানক জির ৫০০-তম প্রকাশ পর্বে কমিটির পক্ষ থেকে ডঃ তেজিন্দর সিং-এর নির্দেশনায় ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে গুরুনানক পারমার্থিকা মেডিকেল সেন্টার চালু করা হয়েছিল। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরন্তর সেবামূলক কাজের কথা মাথায় রেখে ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানটিকে সম্মাননা দিয়েছে। সম্মাননা গ্রহণ করেন কমিটির চেয়ারম্যান জোগিন্দর পাল অরোরা।

পুস্তক ‘মেরি যাত্রা’ : ১৮৫৭ সালের আঁখোঁ দেখা হাল’-এর উন্মোচন

এই উপলক্ষে অর্চনা প্রকাশন, ভোপাল থেকে প্রকাশিত ‘মেরি যাত্রা : ১৮৫৭ কা আঁখোঁ দেখা হাল’ বইটি প্রকাশিত হয়। এই বইটি বিষ্ণুভট্ট গডসের মূল মারাঠি বই ‘মাঝা প্রবাস’-এর সম্পূর্ণ অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন লেখক ও সাহিত্যিক রবীন্দ্র কালে। বইটি সূচনা করেন, অর্চনা পাবলিকেশন্সের সভাপতি লাজপত আহুজা। তিনি বলেন, এটি এমন একটি বই যাতে ১৮৫৭ সালের আন্দোলনের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ লেখা হয়েছে। এই বিষয়ে অমৃতলাল নাগর জির বইটি আগে প্রকাশিত হয়েছিল কিন্তু এতে সম্পূর্ণ অনুবাদ নেই। নাগর জি অনেক ঘটনা বাদ দিয়েছিলেন, কিন্তু এই বইটি বিষ্ণুভট্টের লেখা বইটির আক্ষরিক অনু