ঘূর্ণিঝড় মিধিলি দাপটে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেবার প্রয়াস

কল্যাণপুর, ২৫ নভেম্বর।। গত ১৭ নভেম্বর মিধিলির দাপটে প্রচন্ড বৃষ্টির ফলে কল্যাণপুর কৃষি সেক্টরে কৃষকদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিল দপ্তরের তরফে সেই ক্ষতিপূরণ দেবার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। সরকারী তরফে এবং যাদের বীমা করা আছে তারা সকলেই ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে কল্যাণপুর কৃষি দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে।

মিধিলির তান্ডবে আমন ধান ও শীতকালীন শাক সব্জির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। কৃষকরা অনেক উৎসাহ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সুসংহত চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে আমন ধান চাষ করেছিলেন। কল্যাণপুর কৃষি মহকুমায়  গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটি মিলিয়ে মোট  ২০ টি এলাকা আছে। এতে আমন ধান চাষ হয়েছিল মোট ২৩৫০ হেক্টরে। আর শীতকালীন সব্জি চাষ হয়েছিল ২৭৫ হেক্টরে।

 কল্যাণপুর কৃষি মহকুমার দ্বারিকাপুর, বাগানবাজার,রতিয়া, পশ্চিম ঘিলাতলী, দক্ষিণ ঘিলাতলী, ঘিলাতলী,তোতাবাড়ী, কমলনগর, অমরকলোনী,  গোপালনগর, কুঞ্জবন, কল্যাণপুর, খাস কল্যাণপুর ইত্যাদি এলাকা কৃষি প্রধান বলে সবার কাছে পরিচিত। এই সব এলাকার উৎপাদিত সব্জি সারা রাজ্য সহ শিলচর পর্যন্ত পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত ধরে যায়। আর এই সব্জিরই বৃষ্টির ফলে এখন শোচনীয় অবস্থা।

 সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ধনে পাতা, ফুলকপি, বেগুন, সীম সহ অন্যান্য সব্জি। আমন ধান এখন কাটার সময়। যারা ওই বৃষ্টির আগে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। তারা বেঁচে গেছেন। কিন্তু অনেকেরই জমির ধান পুরোপুরি পাকার অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু ১৭ নভেম্বর এর বৃষ্টি ওই ধান কে মাটিতে লুটিয়ে দিয়েছে। ফলে জলে ধান গেছে পঁচে।

সরকারী হিসাবে কল্যাণপুর কৃষি মহকুমায় প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক আছেন। সরকারী হিসাবে আমন ধান চাষের টার্গেট ছিলো ২৩৫০ হেক্টরের। এর মধ্যে আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫১ হেক্টর। শতাংশের হিসাবে যা ২৫%। অথচ বাস্তবে ক্ষতির পরিমান আরও বেশী বলে কৃষকদের মত। পূর্ব কুঞ্জবন এর কৃষক প্রদ্যুৎ রূদ্র পাল প্রতিবেদককে জানালেন তার ধনে পাতা এই বৃষ্টির ফলে পঁচে গেছে। সীমের ফুল ঝরে গিয়ে সর্বনাশ হয়েছে। বৃষ্টির ফলে ফুল ঝরে যাওয়ায় নুতন সীম আসার আশায় গুঁড়ে বালি। এছাড়াও ধনে পাতা ও ফুল কপির সমূহ ক্ষতি। বেগুন গাছেও বৃষ্টির ফলে পোকার আক্রমণ ঘটেছে।

কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে না পারলেও এখন ক্ষতিপূরণ এর আশায়। যাদের এইচ ডি এফ সি ব্যাংকে বীমা করানো আছে তারা বীমার টাকার সাথে রাজ্য সরকার প্রদেয় ক্ষতিপূরণ এর টাকাও পাবেন বলে কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর। শীতকালীন  সব্জি চাষ এর টার্গেট ছিলো ২৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে মিধিলির ফলে আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ৯৫ হেক্টর জমির ফসলের।

 শতাংশের হিসাবে যা ৪৫%। অকাল বৃষ্টির ফলে ৪৫% ক্ষতি নেহাত কম নয়। আমন ধান এবং সব্জি মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে মোট ৫৪৬ হেক্টর জমির ফসলের। এদিকে অন্য একটি সূত্র মারফত জানা গেছে কল্যাণপুর কৃষি দপ্তরে ভি এল ডবলিউ মিলিয়ে কর্মী স্বল্পতা রয়েছে। তবে বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী এবং দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথের উদ্যোগে জানুয়ারির মধ্যেই কল্যাণপুর কৃষি দপ্তরে পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ এর খবর রয়েছে। বর্তমানে ভি এল ডবলিউ আছেন মোট ১০ জন। এর মধ্যে ফিল্ডে কাজ করেন সাত জন এবং তিন জন অফিস ডিউটি করেন।

বর্তমানে অভিজিৎ ভৌমিক নামের সেক্টর অফিসার সব কিছু সামলাচ্ছেন। অন্য সেক্টর অফিসার দীর্ঘ্য ছুটি তে রয়েছেন। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে কৃষকদের স্টেট ডিজারটার রেসপন্স ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা করা হবে। এবং সেই প্রক্রিয়া দপ্তর শুরু করে দিয়েছে। উল্লেখ্য যে প্রতি বছর ৪% হারে কৃষি এলাকা বৃদ্ধি করে চাষের টার্গেট ধরা হয়। এটাই দপ্তরের দস্তুর। এখন সমস্ত কৃষকরা তাদের ক্ষতিপূরণ পাবার আশায় দিন গুনছেন। কারণ ক্ষতি যা হবার তা তো হয়ে গেছে। কৃষি দপ্তরও দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির মুখ থেকে বাঁচাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *