নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ নভেম্বর : সমবায় আগামীদিনে রাজ্যে বিকল্প কর্ম সংস্থানের পথ দেখাবে।সমবায়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধি” এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সমবায়ের সুফলগুলি তৃনমূলস্তর পর্যন্ত পৌছানোর পাশাপাশি সমবায় ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল, নতুন জাতীয় সমবায় নীতি তৈরী করা সহ সমবায়গুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার আগরতলা টাউন হলে ৭০তম অখিল ভারত সমবায় সপ্তাহ উপলক্ষে সমবায় দপ্তর ও ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেছেন।
তিনি আরো বলেন, কঠোর পরিশ্রম, সততা, স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে সমবায়গুলিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। তাতে গ্রামীণ অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে। সমবায় সপ্তাহ উদযাপনে এবারের ভাবনা হচ্ছে পাচ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি এবং স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে সমবায়ের ভূমিকা’।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সমবায় আগামীদিনে রাজ্যে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ দেখাবে। “সমবায়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধি” এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সমবায়ের সুফলগুলি তৃনমূলস্তর পর্যন্ত পৌছানোর পাশাপাশি সমবায় ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল, নতুন জাতীয় সমবায় নীতি তৈরী করা সহ সমবায়গুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহর নেতৃত্বে সমবায় মন্ত্রক সমবায়ের উন্নতিকল্পে বিভিন্ন যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রয়েছে আগামী ৫ বছরে দেশে ৩ লক্ষ প্যাক্স গঠন, দূর্বল প্যাক্সগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা, দেশে একটি সমবায় বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা, প্যাক্সগুলিকে কম্পিউটারাইজড করা ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরায় ৩,৯৮৩টি বিভিন্ন পেশাভিত্তিক সমবায় সমিতি রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি শীর্ষ সমবায় সমিতি, ১৪টি প্রাথমিক বিপনন সমিতি, ৫৬টি ল্যাম্পস, ২১২টি প্যাক্স, ৩৪০টি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি, ৪১৫টি দুগ্ধ সমবায় সমিতি, ৩১০টি ভোগ্য পণ্য সমবায় সমিতি, ৩২৫টি পশুপালন সমবায় সমিতি এবং ২৩০০টি অন্যান্য সমবায় সমিতি রয়েছে। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৮ লক্ষ্যেরও বেশী মানুষ বিভিন্ন সমবায় সমিতির কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রভিত্তিক ১৭২৬টি নতুন সমবায় সমিতি গঠিত হয়েছে। সমিতির কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে রাজ্যের ২৬৮টি ল্যাম্পস প্যাক্সের কম্পিউটারাইজড করার কাজ শুরু হয়েছে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের অন্তর্গত স্বগাত পোর্টালের মাধ্যমে সমবায় সমিতিগুলির নিবন্ধিকরণের জন্য আবেদন করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনঔষধি পরিযোজনার মাধ্যমে সুলভমূল্যে রাজ্যের সকলস্তরের মানুষের কাছে ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শষ্য ভান্ডার ভারতে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ১১টি জেলাকে চিহ্নিত করে গোডাউন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ত্রিপুরার গোমতি জেলার খিলপাড়া প্যাক্সে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। ১৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই গোডাউন নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে। অনুরূপভাবে দেশের প্রেত্যেকটি জেলায় অন্তত একটি করে গোডাউন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি ল্যাম্পস প্যাক্সে প্রধানমন্ত্রী কৃষক সমৃদ্ধি কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্তের কথাও মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তাছাড়া সমবায় সমিতিগুলির অডিটের কাজ ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
অনুষ্ঠানে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিধায়ক মাইলাফু মগ, ত্রিপুরা মার্কফেডের চেয়ারম্যান অভিজিৎ দেব, গোমতী মিল্ক প্রোডিউসার্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রতন ঘোষ, ত্রিপুরা স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান কমলকান্তি সেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ত্রিপুরা স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের গোমতী জেলার জন্য একটি মোবাইল এটিএম ভ্যান এবং সোনামুড়া বিভাগীয় ল্যাম্পসের রুরাল মার্ট- এর পতাকা নেড়ে উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকল্পে ল্যাম্পস প্যাক্সগুলিকে ঋণ অনুমোদন পত্র, মাইক্রো এটিএম তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী সহ আন্যান্য অতিথিগণ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বোতাম টিপে উদয়পুর এবং শান্তিবাজারে দুটি এটিএম কাউন্টারের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে রাজ্য সমবায় সমূহের বিভিন্ন কর্মসূচি ও সফলতার উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।