পাকিস্তানের রেকর্ড ভঙ্গ, এক কোটি গাছের চারা রোপণ ভারতের অঙ্গরাজ্য অসমে : মুখ্যমন্ত্রী- বৃক্ষ অৰ্থনীতি সম্প্ৰসারণের স্লোগানের মাধ্যমে সমাপ্তি অমৃতবৃক্ষ আন্দোলন

গুয়াহাটি, ১৭ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : পাকিস্তানের রেকর্ড ভঙ্গ করে এক কোটি গাছের চারা রোপণ ভারতের এই অঙ্গরাজ্য অসমে। অসম আবারও গড়বে বিশ্ব রেকর্ড। বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। আজ রবিবার রাজ্য ব্যাপী ‘অমৃতবৃক্ষ’ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে। রাজ্য সরকারের প্ৰচেষ্টায় গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে সূচনা হয়েছিল ‘অমৃতবৃক্ষ’ আন্দোলন কার্যসূচি। এই কাৰ্যসূচির সমাপ্তি ঘটেছে আজ রাজ্যের বিভিন্ন প্ৰান্তে বাণিজ্য উপযোগী ১ কোটি গাছের চারা বপণের মাধ্যমে।

এ উপলক্ষ্যে আজ সকালের দিকে জনতা ভবনে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা আয়োজন করেন এক সাংবাদিক সম্মেলন। সাংবাদিক সম্মেলনে ১ কোটি গাছের চারা রোপণ এবং এগুলি সংরক্ষণের ফটো আপলোডের মাধ্যমে বিশ্ব-দৃষ্টান্ত গড়ার যে চেষ্টা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, ৩,২২,৪৪৪ গাছের চারা বিতরণ করে দৃষ্টান্ত গড়ার পথে অসম। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮.৮১ লক্ষ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমেও অসম আরেক নজির সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে পাকিস্তানের সর্বাধিক গাছের চারা রোপণের দৃষ্টান্ত ভঙ্গ করবে ভারতের এই অঙ্গরাজ্য অসম।

হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা আরও বলেন, ১ ঘণ্টায় ৩.৩১ লক্ষ গাছের চারা রোপণ করে নজির সৃষ্টির পথে এগিয়ে গেছে রাজ্য। মাৰ্ঘেরিটায় .৮৫ হেক্টর ভূমিতে রোপণ করা হবে ৬.৩২ লক্ষ গাছের চারা। এছাড়া এগুলির ৮০ শতাংশ যাতে সংরক্ষিত হয় তার জন্য বন বিভাগকে নজর রাখার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘অমৃতবৃক্ষ’ আন্দোলন দেশের প্ৰধানমন্ত্ৰীর ‘মিশন লাইফ’-এর এক স্বপ্ন, যা কয়েকটি সাধারণ কাজের মাধ্যমে এক সবুজ জলবায়ু ও সবুজ অৰ্থনীতির প্রতি অসাধারণ অবদান রক্ষার জন্য দেশের জনসাধারণকে উৎসাহ প্রদান করতে আমাদের অনুপ্ৰাণিত করে। এই পদক্ষেপের বলে সরকারের প্ৰত্যেকটি প্ৰয়াসে দেশের নাগরিকদের আস্থায় নিতে প্ৰধানমন্ত্ৰীর সুশাসনের বলে যে দৰ্শন, সেই দৰ্শনকে স্বাগত জানিয়ে অসম সরকার ‘অমৃত বৃক্ষ আন্দোলন’ আরম্ভ করেছে। ‘জনভাগীদারি’র ওপর গুরুত্ব আরোপ করে জনসাধারণের সক্ৰিয় অংশগ্ৰহণের মাধ্যমে এই পদক্ষেপ সফল করতে এক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই আন্দোলনে এক দিনে ১ কোটি বাণিজ্যিকভাবে উপযোগী গাছের চারা রোপণ করা হবে। পৃথিবীতে মানুষের বসবাসযোগ্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির এক গোলকীয় নেটওয়াৰ্ক গড়ে তুলতে প্ৰধানমন্ত্ৰী কর্তৃক গৃহীত অবিরত প্ৰয়াসের অংশস্বরূপে গুরুত্বপূৰ্ণ এই কাৰ্যসূচির সূচনা করার দিন হিসেবে আমরা তাঁর জন্মদিনকে চয়ন করেছেন।

‘অমৃত বৃক্ষ’ দুটি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য লক্ষ্য স্থির করেছে। প্ৰথমত, অসমের হারিয়ে যাওয়া বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার করা এবং সবুজায়নের ক্ষেত্ৰে অসমকে একটি অগ্ৰণী রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলা। দ্বিতীয়ত, রাজ্যে এক কাৰ্যক্ষম বৃক্ষ অৰ্থনীতির ভিত স্থাপন করে পরিবারবর্গগুলিকে উপাৰ্জনের বিকল্প পথের সন্ধান দেওয়া। ‘অমৃত বৃক্ষ’ কৃষি বন এবং কাঠভিত্তিক উদ্যোগ (ডব্লিউবিআই)-কে শক্তিশালী করে নিম্নগামী উদ্যোগসমূহে কৰ্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। একই সময় এটা এক ব্যাপক রূপে ‘কাৰ্বন সিংক’ সৃষ্টি করবে যা জলবায়ু পরিবৰ্তনের ক্ষেত্ৰে রাষ্ট্ৰসংঘের ফ্ৰেমওয়াৰ্ক কনভেনশন-এ ভারতের দাখিলকৃত রাষ্ট্ৰীয়ভাবে স্থিরকৃত অবদানের লক্ষ্যে উপনীত হতে সহায়ক হবে।

ড. শর্মা আরও বলেন, এই আন্দোলনের জন্য প্ৰযুক্তি এক অপরিহাৰ্য অংশ। স্বেচ্ছাসেবকদের পঞ্জিয়নের জন্য সরকার একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (‘অমৃত বৃক্ষ’ আন্দোলন অ্যাপ) এবং একটি ওয়েবসাইট খুলেছে। প্ৰশংসার চিহ্নস্বরূপ সরকার সফলভাবে বৃক্ষরোপণ করারা পাশাপাশি অ্যাপটিতে বৃক্ষরোপণের জিও-ট্যাগ তথা টাইমস্টাম্পযুক্ত ফটো আপলোডকারী প্ৰত্যেক ব্যক্তিকে ১০০ টাকা করে প্ৰদান করে অংশগ্ৰহণকারীদের উৎসাহিত করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদি গাছের চারাটি দু-বছর বেঁচে থাকে এবং জিও-ট্যাগ তথা টাইমস্ট্যাম্প করা ফটো পুনরায় অ্যাপটিতে এর প্ৰমাণ হিসেবে দেওয়া হয়, তা-হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে প্ৰদান করা হবে।

হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত এই পদক্ষেপকে সম্প্ৰসারিত করার উদ্দেশ্যে তৃণমূল পৰ্যায়ের সামূহিক গোটগুলি যেমন, আত্মসহায়ক গোট, আশা কৰ্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কৰ্মী, চা শ্ৰমিক, শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠানের কৰ্মী প্রমুখকে সরকার এর সঙ্গে জড়িত করেছে। বৃক্ষ রোপণের এই আন্দোলনে মহিলাদের প্রথমসারির সেনানী হিসেবে নেওয়ায় এটা এক অনন্য রূপ লাভ করেছে। মহিলাদের আৰ্থিক ও সামাজিক সবলীকরণের ক্ষেত্রে এই আন্দোলন গুরুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা গ্ৰহণ করেছে। ‘অমৃত বৃক্ষ’ আন্দোলনের প্ৰত্যেকটি পদক্ষেপে মহিলাদের জড়িত করে নারীশক্তির নেতৃত্ব প্ৰদানের সামর্থকে প্ৰদৰ্শনের জন্য এটা এক মঞ্চ প্ৰদান করা ছাড়াও পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্ৰে গুরুত্বপূৰ্ণ অবদান রাখারও সুযোগ দিয়েছে।

‘অমৃত বৃক্ষ’ আন্দোলনকে এক উপযুক্ত আইনসংগত পরিকাঠামো প্ৰদান করার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার বনায়ন সম্পৰ্কীয় বিধির ক্ষেত্ৰে গুরুত্বপূৰ্ণ পরিবর্তন করেছে। ব্যবসায়িক সচলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কয়েকদিন আগে সরকার ‘আসাম উড বেসড ইন্ডাস্ট্রি (প্রমোশনাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) রুলস, ২০২২’ এবং ‘ট্রি আউটসাইড ফরেস্ট (সাসটেইনেবল্ ম্যানেজমেন্ট) রুলস, ২০২২’, এই দুই বিধি প্ৰণয়ন করেছে। এই বিধি দুটি বনাঞ্চলের সীমার বাইরে রোপণ করা গাছ কাটার ব্যাপারে পূৰ্বানুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই দেবে। এর লক্ষ্য হলো, তাঁদের বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক মূল্যবান প্ৰজাতির গাছ রোপণের জন্য উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি উপাৰ্জন বৃদ্ধি করা, রাজ্যের বনানীকরণ ক্ষেত্ৰের প্ৰসার ও কাঠজনিত এবং কাঠের সামগ্ৰীর সঙ্গে জড়িত উদ্যোগগুলিতে বিনিয়োগ আকৰ্ষিত করা।

এই ‘জনভাগীদারি’ আন্দোলনের সময়কালে অসম কয়েকটি গুরুত্বপূৰ্ণ বিশ্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্ব দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে সৰ্বাধিক গাছের চারা বিতরণ, এক ঘণ্টায় ১০০ জনের একটি গোট কর্তৃক সৰ্বাধিক চারা রোপণ, সৰ্ববৃহৎ গাছের মজাইক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আজ অসমের সর্বস্তরের জনসাধারণ ‘অমৃত বৃক্ষ’ আন্দেোলনের প্ৰতি স্বতঃস্ফুৰ্ত সমর্থন জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে ৪৭ লক্ষের বেশি মানুষ এই অ্যাপ-এর মাধ্যমে এই আন্দোলনে জড়িত হয়েছেন।

‘অমৃত বৃক্ষ’ কেবলমাত্ৰ সাময়িক আবেগ বা প্ৰচার নয়। অসমের সবুজ ভূমিকে চিরকালের জন্য সতেজ করে তোলার এই প্ৰচেষ্টা অবিরত অব্যাহত থাকবে। ২০২৪ সালে ৩ কোটি এবং ২০২৫ সালে আরও ৫ কোটি গাছের চারা রোপণ করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এককথায়, এই অভিযানের মাধ্যমে রাজ্য আগামী ২ বছরে রাজ্যে ৯ কোটি বৃক্ষ রোপণ করবে। বর্তমানকে সুরক্ষিত রাখা ছাড়াও ভবিষ্যতকে আরও বেশি সমৃদ্ধ ও সুখকর করে তোলা হবে – এই সংকল্পের কথা ‘অমৃত বৃক্ষ’ আন্দোলনে পুনরায় দৃঢ়তার সঙ্গে প্ৰতীয়মান করেছে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল ‘অমৃতবৃক্ষ’ আন্দোলন। ব্যাপক এই কাৰ্যসূচির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ার চেষ্টা করছে অসম সরকার।