দুর্গাপুর, ১২সেপ্টেম্বর (হি. স.) : ফের খনি অঞ্চলে শুটআউট। এবার সিপিআইএম নেতাকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে অন্ডালের সিদুলি সিপিআই পার্টি অফিসের কাছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে তাজা কার্তুজ। গুলিবিদ্ধ ওই সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব সরকার দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে অন্ডাল থানার পুলিশ। দুস্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবীতে মঙ্গলবার খান্দরায় প্রতিবাদ মিছিল করে সিপিএম।
ঘটনায় জানা গেছে, বুদ্ধদেব সরকার সিঁদুলি এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি রানীগঞ্জের বল্লভপুর পঞ্চায়েতের কর্মী পদে কর্মরত ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ অন্ডালের সিদুলি এলাকার সিপিএমের পার্টি অফিসের কাছে নিজের গাড়িতে উঠছিলেন। ওই সময় আচমকা কয়েকজন বাইক নিয়ে এসে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় বলে অভিযোগ। বুদ্ধদেব বাবুর হাতে একটি গুলি লাগে। এছাড়াও তার গাড়ীতে দু’টি গুলি লাগে। গুরুতর বুদ্ধদেব বাবুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুর্গাপুরের এক বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুদ্ধদেব সরকার এলাকায় সিপিআইএম নেতা বলেই পরিচিত। এদিকে ভর সন্ধ্যায় এভাবে গুলি চালানোর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় অন্ডাল থানার পুলিশ। একটি কার্তুজের খোলও উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে বুদ্ধদেব বাবুর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত শুরু হয়েছে।
ঘটনায় স্থানীয় সিপিএম নেতা তুফান মন্ডল বলেন,”বর্তমানে দল ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। নতুুন করে এলাকায় সদস্যপদ গ্রহনের কাজ চলছে। বুদ্ধদেব ভাল সংগঠক ও এলাকায় পরিচিত। অনুমান সেকারনের তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতীরা গুলি চালিয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।”
অন্যদিকে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন,” বুদ্ধদেব দলের কোন কর্মী নন। ওর জ্যাঠামশাই দলের ঘনিষ্ঠ সমর্থক।” যদিও ঘটনায় দুস্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবীতে মঙ্গলবার খান্দরায় প্রতিবাদ মিছিল করে সিপিএম। যার নেতৃত্বে ছিলেন বংশগোপাল চৌধুরী। এদিন তিনি অবশ্য দাবী করে বলেন,” ষাটের দশক ও সত্তরের দশকেও সিপিএম কর্মকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। এখন রাজ্যে নারকীয় রাজত্ব চলছে। ঘটনায় দুস্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। একই সঙ্গে খনি অঞ্চলে যে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেই অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টম্বর অন্ডালের বেনিয়াডিহিতে দিনদুপরে শুটআউটে খুন হয় সুপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যাঙ্কমিত্র। এছাড়াও ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর এলাকা দখলকে ঘিরে দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অন্ডালের খাস কাজোড়া। ‘শুটআউট’, মৃত্য হয় ধরমবীর নুনিয়া (৪২) নামে এক গাড়িচালকর। তিনি তৃণমূলকর্মী বলে পরিচিত ছিল। ঘটনায় আহত হয় দুজন। গত ২০২০ সালে ২০ জানুয়ারী অন্ডালের হরিশপুর রঞ্জিত বাউরী নামে এক ইসিএলকর্মী দুস্কৃতীদের গুলিতে জখম হয়। ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারী রাত্রে বেসরকারী সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী রামলক্ষন কেওট নামে একজন দুস্কৃতীদের গুলিতে জখম হয়। তিনি তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিতি ছিলেন। একের পর গুলিকান্ডে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা খনি অঞ্চলজুড়ে। এদিকে
অস্ত্রের ঝনঝনানিতে ত্রস্ত শিল্পাঞ্চল। লোকসভা নির্বাচনের আগে বেআইনী অস্ত্র উদ্ধারের দাবীতে সরব বিজেপি ও বামেরা। বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারী বলেন,” এখন সিপিএম নেতারা তৃণমূল হয়ে গেছে। এরা ক্ষমতা ছাড়া থাকতে পারে না। কিছুদিন আগে সিপিএমের পার্টি অফিসে খুলে দিল তমণমূলের জেলা সভাপতি। সিপিএমের নীচুতলার কর্মীরা নতুন জোটে আসতে চাইছে না। তাই তাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তবে যাদের ওপর এভাবে অত্যাচার করছে তাদের পাশে আছি।”
এদিকে, তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানান,”খুব দুঃখজনক ঘটনা। গুলিবিদ্ধ ওই ব্যাক্তির সুস্থতা কামনা করি। তবে তার আরও কারবার ছিল। তিনি বল্লভপুর পঞ্চায়েতের সরকারী কর্মী। কয়েকমাস আগে সিঁদুলি পঞ্চায়েতে থেকে গেছেন। আগের পঞ্চায়েতে কেন যাওয়া আসা ছিল, সেটাও তদন্ত সাপেক্ষ। তবে পুলিশ এলসকার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত করছে। খুব শীঘ্রই সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
ঘটনায় অন্ডাল এসিপি ওমর আলি মোল্লা জানান,” ঘটনার তদন্ত চলছে।”